দেবাশীষ মন্ডল আশীষ, নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৪, ০৮:২১ এএম
অনলাইন সংস্করণ

নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত নেছারাবাদের কারিগররা

নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত তিন কারিগর। ছবি : কালবেলা
নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত তিন কারিগর। ছবি : কালবেলা

নদ-নদী ও খাল-বিলে বর্ষার পানি আসতে শুরু করেছে। চরাঞ্চলের গ্রামগুলোর চারপাশে পানি থইথই করছে। কোথাও যাওয়ার জন্য নৌকা ছাড়া বাহন নেই বললেই চলে। গ্রামে ও চরাঞ্চলে চলাচলের একমাত্র ভরসা নৌকা। পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার অন্তর্গত আটঘর কুড়িয়ানা ঐতিহ্যবাহী পেয়ারা উৎপাদনের প্রাণকেন্দ্র। প্রতিদিন পেয়ারা বাগান উপভোগ করার জন্য শত শত দর্শনার্থী আসে দূরদূরান্ত থেকে।

ভাসমান পেয়ারার হাট বসে প্রতিদিন সকালে। এ হাটে এবং পেয়ারা সংরক্ষণ করার জন্য দরকার ছোট ছোট কাঠের নৌকা। সেই নৌকা বিক্রি করা হয় আটঘর বাজারে। তাই প্রচুর চাহিদা এ কাঠের নৌকাগুলোর। বর্ষা মৌসুম শুরু হতে না হতেই পিরোজপুরের বিভিন্ন উপজেলায় শুরু হয়েছে নৌকা তৈরির কাজ, কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন এসব কাজে।

বর্ষার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের গ্রামের লোকজনদের কাজ ও খেয়া পারাপারে ভরসা নৌকা। তবে এসব কাজে ছোট ডিঙ্গি নৌকা প্রয়োজন বেশি হয়। সেই কারণে ছোট নৌকায় কদর বেশি থাকে বড় নৌকার চেয়ে। কারণ বড় নৌকা দিয়ে সব ধরনের কাজ করা যায় না। বিশেষ করে চরাঞ্চলে তেমন কোনো রাস্তাঘাট না থাকায় এদের একমাত্র যাতায়াতের বাহন ছোট ডিঙ্গি নৌকা।

সন্ধ্যা নদী দ্বারা বেষ্টিত নেছারাবাদ উপজেলার একাংশ। আর এ উপজেলায় প্রায় বেশির ভাগই চরাঞ্চল। বর্ষা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লাবিত হতে থাকে এসব অঞ্চল। বর্ষা মৌসুম এলেই এসব এলাকার জনগণের চলাচলের প্রধান বাহন হিসেবে নৌকা ব্যবহার করে থাকে আর এ জন্য এলাকার বিভিন্ন জায়গায় যেমন- আটঘর-কুড়িয়ানা, ধলহার, মাদ্রা, সাগরকান্দা, রামচন্দ্রপুর, ইদিলকাঠি, পূর্ব জলাবাড়ী, ডুবি বাজার, চামী, মিয়ারহাট, বলদিয়া, সুটিয়াকাঠী ও স্বরূপকাঠি বাজারে নৌকা তৈরির ধুম পড়েছে।

নদী তীরবর্তী এলাকা আর গ্রামগুলোতে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের একমাত্র উপায় নৌকা। বর্ষার শুরুতে এলাকার মৌসুমি জেলেরা নৌকা দিয়ে রাতদিন মৎস্য শিকার করে থাকে। চরের বসবাসকারী মানুষ নৌকা দিয়ে চলাফেরা করে থাকে। এ ছাড়া স্কুল-কলেজ হাটবাজার, খেয়া পারাবার সবই নৌকা দিয়ে করতে হয়।

সরেজমিনে ডুবির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নৌকা তৈরির কারখানায় মিস্ত্রিরা নৌকা তৈরি করে চলছে বিরামহীনভাবে। নৌকা তৈরি করাই যেন তাদের একমাত্র কাজ। কথা হয় জাহাঙ্গীর মাঝি নামের এক নৌকা মিস্ত্রির সঙ্গে। তিনি বলেন, এ নৌকাগুলো আটঘর- কুড়িয়ানা বাজারে পাইকারি বিক্রি করি। কোনো কোনো সময় পাইকাররা বাড়িতে এসেও নৌকা কিনে নিয়ে যায়। বর্তমানে পাইকারদের কাছে ন্যায্য মজুরি পাই না। দুজন ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করে। এ পেশায় থেকে সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি।

নৌকা মিস্ত্রি মিজান বলেন, একটি নৌকা তৈরি করতে আমাদের ৩৫০০-৪০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। বিক্রি করে সর্বোচ্চ লাভ হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। প্রতিদিন দুজন মিস্ত্রির ১৫ ফুট লম্বা একটি নৌকা তৈরি করতে সময় লাগে ২ দিন। তাহলে আমাদের ভাগে অর্ধেক করে লাভ করে নিতে হয়। এ খরচ দিয়ে সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে।

বাবুল নামে আরও একজন বলেন, বর্ষা মৌসুম এলেই রাতদিন কাজ করতে হতো, কখনো কখনো নাওয়া-খাওয়া ভুলে কাজ করতে হতো। আগে অনেক বেশি নৌকা তৈরি করতে হতো। এখন তেমন একটা তৈরি করতে হয় না নদ-নদীতে পানি কমে যাওয়ায় নৌকা চালতে বিঘ্ন ঘটায় বড় নৌকার পরিবর্তে এখন শুধু ছোট নৌকায় বেশি তৈরি করতে হয়।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বর্ষা এলে ছোট নৌকা তৈরির কাজটা বেড়ে যায়। নৌকা তৈরিতে আগের মতো শাল, সেগুন সুন্দরী কাঠ ব্যবহার করা হয় না। সাধারণত নিম্নমানের কাঠ দিয়ে এসব নৌকা তৈরি করা হয়। তবে এখন নির্দিষ্ট বা বিশেষ কোনো ধরনের কাঠ ব্যবহার করা হয় না। বর্তমানে চাম্বুল, উডিআম, রেইনট্রি ও চাম্বল ইত্যাদি নিম্নমানের কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি করে থাকে। ভালো কাঠের নৌকা তৈরিতে খরচ অনেক বেশি। নৌকা তৈরিতে কাঠ ছাড়াও পেরেক, জিনারী, পাতাম আলকাতরা ও পুডিং লাগে যা একজন মিস্ত্রি ও এক সহযোগী হলে ২-৩ দিন একটা ছোট নৌকা তৈরি করতে সময় লাগে।

নেছারাবাদ বিসিক শিল্প কর্মকর্তা মো. মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলার তৈরি ডিঙ্গি নৌকা দেশের বিভিন্ন হাওর ও বিলাঞ্চলে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি হয়। কারিগররা যদি সরকারি সুযোগ সুবিধা আদায়ের জন্য আমাদের কাছে যোগাযোগ করে অবশ্যই তাকে সহযোগিতা করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে ৬ শতাধিক বস্তা সরকা‌রি চাল জব্দ

স্বাস্থ্য পরামর্শ / ছানিজনিত অন্ধত্ব থেকে বাঁচতে চাই সচেতনতা

কৃষি উন্নয়নের নামে কৃষকের ৮ কিমি জায়গা বিলীন করল বিএডিসি

প্রবাসীদের রেমিট্যান্সেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে : প্রধান উপদেষ্টা

গতিরোধকে নেই কোনো চিহ্ন, প্রধান সড়কে উল্টে গেল ট্রাক

অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য যুবদল নেতা নয়নের দুঃখ প্রকাশ

ইডেন কলেজে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ নাম ব্যবহার করে বিবৃতি নিয়ে বিভ্রান্তি 

সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি হিন্দু নেতাদের

রাস্তায় ফেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রীকে মারধর  

এবার পাকিস্তানের বিপক্ষেও সিরিজ হারল বাংলাদেশ

১০

সেমিনারে ঢাবি অধ্যাপক  / পুলিশ রিমান্ডে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় বিচারিক প্রক্রিয়ায় পদ্ধতিগত সহিংসতা

১১

ইসরায়েলকে ঠেকাতে ছেলেকে পাঠিয়ে ইরানকে সতর্ক করল সৌদি বাদশা!

১২

হৃদরোগ সচেতনতা সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি : ডা. জুবাইদা রহমান

১৩

এসএ গেমসে ৬৫০ জনের বাংলাদেশ কন্টিনজেন্ট চূড়ান্ত

১৪

কাবাডির ফাইনালে সেনাবাহিনী ও পুলিশ

১৫

ভূপাতিত ৫ ভারতীয় যুদ্ধবিমান, স্বীকারোক্তি বিজেপি নেতার!

১৬

ছাত্রাবাসে ৫ ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে মুক্তিপণ দাবি, ছাত্রলীগ নেতা আটক

১৭

পালিয়ে থেকেও শেষরক্ষা হলো না রাকিবের

১৮

সাকিব ইস্যুতে যা বললেন বিসিবির নতুন সভাপতি

১৯

সিরিজ বাঁচাতে রানের পাহাড় টপকাতে হবে বাংলাদেশকে

২০
X