অস্বাভাবিক চড়া দামের জন্য দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ক্রেতা সাধারণের নাগালের বাইরে চলে গেছে মৌসুমী ফল চায়না থ্রি জাতের লিচু। ফলে চায়না থ্রি জাতের লিচু কেনার আশা বাদ দিয়ে বোম্বাই জাত দিয়েই লিচুর স্বাদ মিটাতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনকে।
জানা যায়, মৌসুমের শুরুতে মাত্রাতিরিক্ত তাপপ্রবাহের জন্য লিচুর গুটি ঝলসে যাওয়াসহ আকস্মিক ঝড়ে এলাকার বেশিরভাগ বাগানের লিচু ঝরে পড়েছে। এতে আশানুরূপ উৎপাদন পাননি লিচু চাষিরা। লিচুর উৎপাদন কম হওয়ায় এ বছর লিচুর বাজার চড়া বলে দাবি করছেন স্থানীয় লিচু ব্যবসায়ীরা।
বুধবার (১২ জুন) সকালে ফুলবাড়ী পৌর শহরের নিমতলা মোড় এলাকার লিচু বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি লিচু ব্যবসায়ীরা খাঁচায় খাঁচায় নিয়ে বসে থাকলেও ক্রেতার তেমন দেখা মিলছে না। হতাশা আর লোকসানের শঙ্কা নিয়ে ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।
লিচু বিক্রেতা আশরাফুল ইসলাম জানান, পার্শ্ববর্তী আমতলী এলাকার বাগান থেকে তারাও বোম্বাই লিচু কিনে এনে বিক্রি করছেন তবে তাদের লিচু আকার বড় এবং বিচি ছোট হওয়ায় তারা ১০০ লিচু আকার ভেদে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। বাগান থেকেই বেশি দামে লিচু কিনতে হওয়ায় পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে সামান্য লাভ ধরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
লিচু বিক্রেতা মমতাজ বেগম জানান, লিচুর মৌসুম দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। এরপরও আশানুরূপ লিচু বিক্রি হচ্ছে না। তারা দুইজন দেড় হাজার করে বোম্বাই লিচু বাগান থেকে এনে বিক্রি করছেন। তারা দাম রেখেছেন ১০০ লিচুর জন্য ৩৫০ টাকা। এ দামে লিচু করতে পারলে কিছু লাভ হবে, তবে পড়ে থাকলে আর্থিকভাবে লোকসানে পড়বেন। এ জন্য মজুদ লিচু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা।
অপর বেদানা লিচু বিক্রেতা অসাদুল ইসলাম বলেন, কয়দিন আগে ১০০ লিচু চায়না থ্রি জাতের লিচু ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। কিন্তু এখন চায়না থ্রি জাতের লিচু বাগানে না থাকায় বেদানা জাতের লিচু বিক্রি করছেন। তবে বোম্বাই লিচুর চেয়ে এর দাম বেশি। এটি ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৭৫ টাকা দরে। এরপরও ক্রেতা নেই। যেটুকু লিচু বেচাবিক্রি হচ্ছে তার সবটাই বোম্বাই জাতের লিচুতে ইচ্ছে। কারণ চায়না থ্রি এবং বেদেনা জাতের লিচুর চেয়ে বোম্বাই জাতের লিচুর দাম অনেক কম। এ কারণে কমবেশি সব শ্রেণির মানুষই বোম্বাই জাতের লিচুই কিনছেন।
লিচু কিনতে আসা কালীকান্ত রায় বলেন, কয়দিন আগে লিচু কিনতে গিয়ে চায়না থ্রি জাতের ১০০ লিচুর দাম এক হাজার ৪০০ টাকা শুনে বাড়ি ফিরে গিয়েছি। আজ এসে ৩৫০ টাকা দরে বোম্বাই জাতের ১২৫টি লিচু কিনেছি।
লিচু কিনতে আসা রিকশাচালক অলংগ ঋষি বলেন, রিকশা চালিয়ে সংসার চালানোর পর বেশি দামে লিচু কিনে ছেলেমেয়েদের খাওয়ানোর সামর্থ্য নেই। তবে মৌসুমী ফল বছরে একদিন না কিনলেও নয়। তাই ৩২০ টাকা দরে ৫০টি লিচু নিয়েছেন। আমতলী এলাকার লিচু চাষি মো. বাবলু মেম্বার বলেন, প্রকৃতির দুর্যোগের জন্য লিচু বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে লিচুর ফলন অনেক কমে যাওয়ায় বাগান থেকেই লিচু জাত ভেদে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এরপরও বাগান মালিকরা আর্থিক লোকসানে রয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, উপজেলায় ৬৮ হেক্টর জমিতে লিচু বাগান রয়েছে। কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শে প্রত্যেক বাগানেই কমবেশি লিচু উৎপাদন হয়েছে। তবে কত লিচু উৎপাদন হয়েছে তা এই মুহূর্তে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে কিছুদিন পর বলা যাবে উপজেলায় কী পরিমাণ লিচু উৎপাদন হয়েছে।
মন্তব্য করুন