প্রতি বছর ঈদযাত্রায় চাহিদার কথা মাথায় রেখে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোতে অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হলেও এবার তা কমিয়ে আনা হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী কোচ সংযোজন না হওয়ায় রেলপথে বাড়ি ফেরা হয়নি অনেকের, ফিরতি যাত্রায়ও পড়েছেন দুর্ভোগে। রেলওয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের আপত্তির কারণে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত কোচের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। টেকনিক্যাল কারণেই কোচের সংখ্যা কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন বাসে গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া। চট্টগ্রাম নগরের অভ্যন্তরে চলাচলকারী গণপরিবহনেও ঈদ বখশিশের নামে বেশি ভাড়া আদায় হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, প্রতিবছর দুই ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত চাহিদার কথা মাথায় রেখে ঢাকা-চট্টগ্রাম-সিলেট রুটের (রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল) ট্রেনগুলোতে ৩ থেকে ৪টি অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হয়। কিন্তু এবার এসব ট্রেনে ১টি কিংবা ২টি অতিরিক্ত কোচ সংযোজন করা হয়েছে। ঈদযাত্রার শুরুর আগ থেকেই অতিরিক্ত কোচ সংযোজনের কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে রেলওয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের আপত্তির কারণে তা সম্ভব হয়নি বলে জানান রেলওয়ে কর্মকর্তারা। তবে চট্টগ্রাম থেকে ছুটে যাওয়া চাঁদপুর, ময়মনসিংহ এবং কক্সবাজার রুটে ৪টি ‘স্পেশাল ট্রেন’ সংযোজনের কারণে দুর্ভোগ কিছুটা কমেছে।
রেলওয়ে পরিবহন বিভাগের তথ্য মতে চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের চট্টলা এক্সপ্রেসে অতিরিক্ত শোভন চেয়ার যুক্ত কোচ সংযোজন হয়েছে ২টি, কক্সবাজার-ঢাকা রুটের কক্সবাজার এক্সপ্রেসে অতিরিক্ত ২টি, একই রুটের পর্যটক এক্সপ্রেসে ২টি, চট্টগ্রাম-সিলেট রুটের উদয়ন এক্সপ্রেসে অতিক্তি ১টি, একই রুটের পাহাড়িকা এক্সপ্রেসে অতিরিক্ত ১টি, চট্টগ্রাম জামালপুর রুটের বিজয় এক্সপ্রেসে অতিরিক্ত কোচ ৪টি, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটের মেঘনা এক্সপ্রেসে ৩টি, চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের সুবর্ণ এক্সপ্রেসে ২টি, মহাগনর গোধূলিতে ১টিসহ পূর্বাঞ্চলে বিভিন্ন ট্রেনে প্রায় ৪০টি অতিরিক্ত কোচ সংযুক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবছর ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে যেখানে প্রায় ৬০টি কোচ সংযোজন করা হয়। তবে শুরুর দিক থেকে অতিরিক্ত কোচ সংযোজেনর বিষয়ে জোরালো আলোচনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা দেওয়া হয়নি। চাহিদার কথা মাথায় রেখে অতিরিক্ত কোচ সংযোজনের প্রস্তাব থাকলেও রেলওয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের আপত্তির কারণে ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত কোচের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক সূত্র। পাওয়ারকারের (ট্রেনে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের বিশেষ কোচ) সীমাবদ্ধতার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত বলে নেওয়া হয়েছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) সাইফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, টেকনিক্যাল কারণে এবা কোচের সংখ্যা কমানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী যতটা কোচ অতিরিক্ত সংযুক্ত করা যায়, ততটাই সংযুক্ত করা হয়েছে। রেলপথে স্বস্তি ফেরাতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঈদের ফিরতি যাত্রা এখনো চলছে। চাঁদপুর, ময়মনসিংহ এবং কক্সবাজার রুটে চারটি স্পেশাল ট্রেন চলছে।
অন্যদিকে সড়কপথে লক্করঝক্কর বাসের কারণে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে সড়ক পথেও। সঙ্গে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে ফেরার পথে ঈদযাত্রায় সঙ্গী হয়েছে বৃষ্টি এতে করে সড়পথেও দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া বিভিন্ন বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা। ঈদকে কেন্দ্র করে গাড়ির ফিটনেস ও লাইসেন্স না থাকায় ১১ যানবাহনকে প্রায় অর্ধলাখ টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
যাত্রী মোহাম্মদ ইকবাল কালবেলাকে বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কাপ্তাই যেতে ৭০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়। কিন্তু ঈদকে কেন্দ্র করে জনপ্রতি ১০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। যেখানেই যাচ্ছি বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। শহরের ভেতরও গণপরিবহনগুলোতে এখনো বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। ঈদ বখশিশের নামে ওঠা নামা ১০ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিশকাতুল তামান্না কালবেলাকে বলেন, লাইসেন্স ও ফিটনেস না থাকায় চট্টগ্রামের বন্দর থানা এলাকায় ১১টি বাসকে ৫৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ অভিযান চলমান থাকবে। ঈদকে কেন্দ্র করে কেউ যদি অতিক্তি ভাড়া আদায় করে সেই ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন