রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৪, ০৫:২৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পদ্মার চরে বন্ধ হয়ে গেল সৌরবিদ্যুতের প্লান্ট, দুর্ভোগে চরবাসী

পদ্মার চরে প্রায় দেড় হাজার পরিবারের জন্য স্থাপিত সৌরবিদ্যুৎ প্লান্ট। ছবি : কালবেলা
পদ্মার চরে প্রায় দেড় হাজার পরিবারের জন্য স্থাপিত সৌরবিদ্যুৎ প্লান্ট। ছবি : কালবেলা

টানা লোকসানের মুখে রাজশাহীর পদ্মার চরে প্রায় দেড় হাজার পরিবারের জন্য স্থাপিত সৌরবিদ্যুৎ প্লান্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বৃহস্পতিবার (২০ জুন) থেকে অন্ধকারে রয়েছেন চরবাসী। বিদ্যুৎহীন অবস্থায় কয়েক হাজার মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।

২০১৫ সালে সরকারের ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড’ ইডকলের কারিগরি সহযোগিতায় গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহে সৌরবিদ্যুতের প্লান্ট স্থাপন করেছিল বেসরকারি সংস্থা আভা। প্লান্টটির নাম দেওয়া হয়েছিল আভা মিনি-গ্রিড প্রজেক্ট।

জানা গেছে, দুর্গম চরাঞ্চলের ঘরে ঘরে সৌরবিদ্যুৎ দিতে ২০১৫ সালের ৬ নভেম্বর এ প্লান্ট স্থাপন করা হয়। এরপর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের আষাড়িয়াদহ, পানিপার, ভুবনপাড়া, কানপাড়া, হনুমন্তনগর ও নওশেরা গ্রামের প্রায় এক হাজার ৩০০ পরিবারকে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। প্রিপেইড মিটারে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য গ্রাহককে দিতে হতো ৩০ টাকা। এরপরও লোকসানের মধ্যেই চলছিল।

চর কানাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, প্রথম দিকে প্লান্ট থেকে ২৪ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। বছর দুয়েক থেকে শুধু দুপুরে জোহরের নামাজের সময় ১ ঘণ্টা, আসরের নামাজের সময় ৩০ মিনিট, মাগরিবের নামাজের সময় থেকে রাত ১০টা, রাত ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ দেওয়া হতো। এতে কোনোরকমে ফ্রিজটা চলত। বৃহস্পতিবার থেকে একেবারেই বন্ধ।

আভার কর্মকর্তারা জানান, সরকারের ‘টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ এ প্লান্ট স্থাপনে প্রণোদনা দেয়। আর কারিগারি সহায়তা করে সরকারের আরেক সংস্থা ইডকল। এ সংস্থাটি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সমীক্ষাও করেছিল। সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, প্লান্টটি চালালে প্রতিমাসে ১৫ লাখ টাকা করে লাভ করতে পারবে আভা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত লাভের মুখ দেখা যায়নি। ২৪ ঘণ্টার ভেতর ৬-৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করেও প্রতিমাসে প্রায় লাখ টাকা লোকসান হচ্ছিল।

সবমিলিয়ে লোকসান হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। এ প্লান্টে ৫৯৪টি সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপন করা আছে। এগুলোর বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বলা হয়েছিল ১৪৮ দশমিক ৫০ কিলোওয়াট। প্যানেলের কার্যক্ষমতা কমে বর্তমানে মাত্র ৬০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছিল। এ বিদ্যুতে প্রায় ১ হাজার ৩০০ জন গ্রাহকের মিটারে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছিল না। এ কারণে বৃহস্পতিবার এ গ্রিডটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিদ্দিকুর রহমান বলেন, হঠাৎ করে ঈদের পর এভাবে বিদ্যুতের প্লান্ট বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হয়নি। ফ্রিজের কোরবানির মাংস বের করে রান্না করতে হচ্ছে। চরের বেশিরভাগ মোবাইল চার্জের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। ফ্রিজ-টিভিগুলোর এখন কি হবে কেউ জানে না। প্রায় ৫ হাজার টাকা দিয়ে বাড়িতে বাড়িতে মিটার নিতে হয়েছে। সেটাও এখন লস।

আভা মিনি-গ্রিড প্রজেক্টের প্লান্ট ব্যবস্থাপক মিল্লাত হোসেন বলেন, চরে বিদ্যুতের চাহিদা ১২০ কিলোওয়াটের। আর আমরা সরবরাহ করতে পারছিলাম মাত্র ৬০ কিলোওয়াট। টানা লোকসান হচ্ছিল। সে কারণে প্লান্ট বন্ধ করে চলে এসেছি।

আভার মহাব্যবস্থাপক শালেউদ্দীন আহমেদ বলেন, এ প্লান্টটি আসলে চালানো সম্ভব না। ২৪ ঘণ্টার ভেতরে ছয়-সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ দিয়েও প্রতিমাসে প্রায় এক লাখ টাকা লোকসান হচ্ছিল। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় দুই বছর আগে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) সঙ্গে আভার চুক্তি হয়। কথা ছিল, সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নেসকো পদ্মার ওপারের চরে বিদ্যুৎ নিয়ে যাবে। তারপর তারাই চরবাসীকে চাহিদামতো বিদ্যুৎ দেবে। আর সৌর প্লান্টে যেটুকু বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে সেটা আভা নেসকোর কাছে বিক্রি করবে। এ চুক্তির ৬ মাসের মধ্যে নেসকো তাদের কার্যক্রম শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত নেসকো কার্যক্রম শুরু করেনি।

নেসকোর নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) মোহাম্মদ শহীদ হোসেন বলেন, সৌরবিদ্যুৎ স্থায়ী সমাধান নয়। এটি যুগ যুগ চলবেও না। দুর্গম অঞ্চলে বিদ্যুৎ দিতে সরকারের অগ্রাধিকার ছিল বলে নেসকো বিনামূল্যেই আভাকে নানা সহযোগিতা করেছে। কিন্তু নদী পার করে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া সহজ কাজ নয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

খুঁজে খুঁজে ইসরায়েলের অর্ধশতাধিক গুপ্তচরকে ধরল ইরান

রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণার অভিযোগে বাসদের নেতা আটক

সরকারের সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: সিইসি

নিজের ‘আমলনামা চুরি’ করলেন সাবেক অধ্যক্ষ

‘প্রেমিক হয়ে জন্মেছিলেন, কিন্তু হয়েছেন সর্বোচ্চ নেতা’

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়াসহ ৪ দেশ

ওএসডি হচ্ছেন শরীয়তপুরের বিতর্কিত ডিসি আশরাফ

শান্তির ডাকে যুদ্ধ আরও জটিল রূপ নিচ্ছে না তো?

ট্রাম্পের হম্বিতম্বির নেপথ্যে কী

নতুন দায়িত্ব নেওয়া ইরানি ড্রোন কমান্ডারকেও মেরে ফেলল ইসরায়েল

১০

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মতুয়া সম্প্রদায়ের পাশে পূজা উদযাপন পরিষদ

১১

ময়মনসিংহে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১

১২

থানায় রক্ষিত বাক্স ভেঙে বের করা হয় এইচএসসির প্রশ্নপত্র

১৩

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত / ৫৭ দেশের সহস্রাধিক মুসলিম নেতা বৈঠকে বসছেন আজ

১৪

নতুনবাজার অবরোধ করলেন ইউআইইউর শিক্ষার্থীরা

১৫

ছাত্রাবাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

১৬

ইরানের ভূকম্পন কি গোপন পারমাণবিক পরীক্ষা?

১৭

দিনে কতবার প্রস্রাব হওয়া স্বাভাবিক? কিডনি সমস্যার লক্ষণ নয়তো

১৮

ইরানের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের পরস্পরবিরোধী বার্তা

১৯

‘চা-নাশতার’ খরচে মিলছে স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি

২০
X