সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৪, ০৯:৪৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সিলেটে বন্যায় পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর শঙ্কা

বন্যার পানিতে রোগাক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। ছবি : কালবেলা
বন্যার পানিতে রোগাক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। ছবি : কালবেলা

বাড়িঘর ও আঙিনা থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় সিলেটের বন্যাকবলিত সিলেট সিটিসহ ১৩টি উপজেলায় জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে বন্যাদুর্গতরা এখন ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিস, টাইফয়েড ও চর্মরোগসহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় আছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, সিলেট বিভাগে চার জেলায় গত ৮ দিনে ডায়রিয়া, আরটিআই, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগসহ অন্যান্য পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৯ হাজার ৮২৬ জন। বন্যা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য বিভাগের ৩৯৪টি মেডিকেল টিম সিলেট বিভাগজুড়ে কাজ করছে।

সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, সোমবার পর্যন্ত সিলেটে ৮ লাখ ৩ হাজার ৩৬৫ মানুষ বন্যাকবলিত রয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট মহানগরে বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা ১৫ হাজার। বর্তমানে মহানগরের ৮টি ওয়ার্ড ও জেলার ১১০টি ইউনিয়নে বন্যার পানি রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন ১৩ হাজার ২০৯ জন। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। তবে বেশিরভাগ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।

সিলেটে বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন ১৩ হাজার ২০৯ জন। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। পৌঁছানো হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধপত্র। জেলার দুটি উপজেলা কোম্পানিগঞ্জ, গোয়াইঘাট মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, চলতি বন্যায় অসতর্কতায় নৌকা দিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে গোয়াইনঘাটে ফতেহপুরে প্রাণ হারিয়েছেন ২৫ বছর বয়সী এক তরুণ। এ ছাড়া বন্যা ও বৃষ্টিকালীন সময়ে বিছনাকান্দি এলাকায় বৈদ্যুতিক লাইন থেকে বিদ্যুৎস্পর্শে ১১ বছর বয়সী কন্যাশিশু এবং ২২ বছর বয়সী এক তরুণ মৃত্যুবরণ করেন।

তিনি জানান, পানিবন্দি অবস্থায় পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি রয়েছে। এটা প্রশমনে ও নিয়ন্ত্রণে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সহায়তায় স্থাপন করা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ (মোবাইল) ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। যা দিয়ে গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন ইউনিয়নে ২১ জুন থেকে প্রতিদিন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, গোয়াইনঘাটে পানিবন্দি হাওর এলাকায় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে কাজ করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কিশলয় সাহা। বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হচ্ছে। ৩ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণের সঙ্গে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রতি পরিবারকে ১০টি ট্যাবলেট দেওয়া হচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বন্যার পর বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। সাধারণত বন্যার পানি নেমে যাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। বন্যা পরবর্তী রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় গোয়াইনঘাট উপজেলায় ১০টি ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম কাজ করছে। প্রত্যন্ত হাওর এলাকাতেও মেডিকেল টিম স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বন্যার পর বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। সাধারণত বন্যার পানি নেমে যাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে রোগের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক সুদিন চন্দ্র দাস কালবেলাকে বলেন, বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ ডায়রিয়া, জন্ডিস, চর্মরোগ এবং টাইফয়েডসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন। রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি আমরা ও আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে প্রস্তুত।

চর্মরোগ বিভাগের বিভাগীয় সহকারী অধ্যাপক ডা. পরিমল কুমার সেন কালবেলাকে বলেন, বন্যার পানির মধ্য দিয়ে যাদের চলাচল করতে হয়েছে তারা স্ক্যাবিস এবং কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিসসহ বিভিন্ন চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন। যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারা ওসমানী হাসপাতালে সেবা নেওয়ার অনুরোধ জানান।

বিভিন্ন এলাকাবাসী জানায়, বন্যাকবলিত এলাকায় ইতোমধ্যে কিছু মানুষ নিউমোনিয়া ও চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

গোয়াইঘাট উপজেলার সুমা বেগম বলেন, প্রবল বর্ষণ ও বন্যার সময় ৪ দিনে ঠান্ডা লেগে অনেক শিশু ও বয়স্ক মানুষ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। অনেকেই চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

কোম্পানিগঞ্জের হুছনা বেগম বলেন, ওই এলাকার অনেক মানুষ ডায়রিয়া, পেট ব্যথা ও চর্মরোগে ভুগছেন। বন্যাদুর্গত মানুষের চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত এলাকায় সরকারিভাবে কোনো চিকিৎসা ক্যাম্প করা হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।

সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মজয় দত্ত কালবেলাকে বলেন, পানিবাহিত রোগের রোগী আছে, তবে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নয়। পানিবাহিত রোগ মোকাবিলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিক, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। বন্যায় পানিবাহিত রোগ থেকে বাঁচার জন্য সবাইকে পানি বিশুদ্ধতাকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে আহ্বান করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট আমরা বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের ইউনিয়নভিত্তিক টিমও কাজ করছে।

উল্লেখ্য, বন্যার পানি ওঠার পর এবং পানি নেমে যাওয়ার পর পানিবাহিত নানা রোগ দেখা দেয়। বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানির অভাবে পানিবাহিত নানা রোগ যেমন- ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড, পেটের পীড়া, কৃমির সংক্রমণ, চর্মরোগ রোগ এবং চোখের রোগ বৃদ্ধি পায়। এজন্য মানুষের স্বাস্থ্য সচেতন থাকা খুবই প্রয়োজন। বন্যা এবং বন্যা পরবর্তী সময়ের রোগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহতা দেখা দেয় ডায়ারিয়া নিয়ে। ছোট-বড় সবার ডায়ারিয়া হতে পারে। ছোট্ট শিশুরা ডায়রিয়ায় বেশি ভোগে। এটি মূলত পানিবাহিত রোগ। খাবারের মাধ্যমে এ জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। বন্যার সময় দূষিত পানি পান করা হয় বলে ডায়রিয়া বেশি হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মোদিকে নিয়ে মন্তব্য করায় বিপাকে ভারতীয় সংগীতশিল্পী

‘হিউম্যান রাইটস টিউলিপ’ পুরস্কারে মনোনীত তুলিকে মির্জা ফখরুলের অভিনন্দন

পলাশকে বিয়ে না করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মান্ধানার

কে জিতল আর কে হারল, এটা দেখা আমাদের বিষয় নয় : এসপি আরেফিন জুয়েল

৪টি নতুন মডেলের রেফ্রিজারেটর বাজারে আনল মিনিস্টার

খেজুরের রস খেয়ে ফেরার পথে প্রাণ গেল কিশোরের

অনুসন্ধানে দুদক / সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

বিশ্বকাপ সামনে রেখে বড় চমক নামিবিয়ার

অ্যালার্মে ঘুম ভাঙে? অজান্তেই বাড়াচ্ছেন শরীরের চাপ

সরাসরি মোদির কাছে বিচার চাইলেন পাকিস্তানি নারী

১০

আন্দোলন ঠেকাতে ‘মব সৃষ্টির’ পরিকল্পনা ঢাকা কলেজ শিক্ষকের

১১

আগামী ৫ দিন তাপমাত্রা কেমন থাকবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

১২

বিশেষ বৃত্তিসহ ৪ দফা দাবি জবি শিবিরের

১৩

হাসপাতালে নচিকেতা চক্রবর্তী

১৪

জামায়াতে ইসলামী হিন্দু শাখার ৯ নেতাকর্মীর পদত্যাগ

১৫

মালয়েশিয়ায় আটক ৮৪৩, আছে বাংলাদেশিও

১৬

২০২৬ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ম্যাচ কবে কখন

১৭

স্ত্রীর হাতে স্বর্ণের চুড়ি, সন্দেহের জেরে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে স্বামী

১৮

নতুন জোট গড়ছে ৩ দল, ঘোষণা বিকেলে

১৯

এই ৩ পানীয় খেলেই ত্বকে দ্রুত পড়বে বার্ধক্যের ছাপ

২০
X