পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে বঁটির কোপে প্রাণ হারালেন মো. ইয়াসিন গাজী নামের এক ব্যবসায়ী। গত রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে যাত্রাবাড়ীর কাজলার ছনটেক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ইয়াসিন তার খালাতো বোনের স্বামী আল আমিনের কাছে পাওনা টাকা চাইতে যায়। এরপর কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আল আমিন তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে ইয়াসিন মারা যান। নিহত ইয়াসিন ওই গ্রামের আবুল বাশার গাজীর ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে চাঁদপুর শহরের সাদ্দাম মার্কেট এলাকায় বসবাস করতেন। তার দুটি ছোট ছেলে সন্তান রয়েছে।
জানা গেছে, ‘মায়ের দোয়া হোটেল’-এর মালিক ছিলেন ইয়াসিন গাজী। প্রায় চার মাস আগে তিনি হোটেলটি ২ লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন খালাতো বোনের স্বামী আল আমিনের কাছে। হোটেল বিক্রির পর ইয়াসিন চাঁদপুর শহরের সাদ্দাম মার্কেট এলাকায় একটি আইসক্রিম কারখানা চালু করে ব্যবসা শুরু করেন। তবে বিক্রির পুরো টাকা না পাওয়ায় তার সঙ্গে আল আমিনের বিরোধ দেখা দেয়। মোট টাকা থেকে আল আমিন ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও বাকি ১০ হাজার টাকা বারবার চাওয়া সত্ত্বেও ফেরত দেননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই দিন রাত ১০টার কিছু আগে ইয়াসিন কাজলা এলাকায় আসেন তার পাওনা টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে। তিনি আশপাশের পরিচিতদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং পরে হোটেলের নিচতলায় যান, যেখানে আল আমিন তার স্ত্রী ও হোটেলের কর্মচারীদের সঙ্গে ভাড়া থাকতেন। সেখানেই ইয়াসিন আল আমিনের রুমে প্রবেশ করেন। টাকা চাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আল আমিন ক্ষিপ্ত হয়ে ধারালো বঁটি দিয়ে ইয়াসিনের ঘাড়ে আঘাত করেন। রক্তে ভেসে যায় বিছানার চাদর ও মেঝে। গুরুতর আহত অবস্থায় ইয়াসিন কাটা জায়গা চেপে ধরে রুম থেকে বের হয়ে আসেন এবং উপস্থিত লোকজনের কাছে কাতরভাবে হাসপাতালে নেওয়ার অনুরোধ করেন।
চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করেন। কিছুদূর যাওয়ার পর তিনি রাস্তায় পড়ে যান। পরে কয়েকজন মিলে রিকশায় করে কাছাকাছি একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে এ ঘটনার পরই স্থানীয়রা আল আমিনকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন। রাত ১২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আল আমিনকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আল আমিনের স্ত্রীসহ কয়েকজনকে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ইয়াসিনের স্ত্রী শারমিন আক্তার সোমবার যাত্রাবাড়ী থানায় আল আমিন, তার স্ত্রী নাজমা বেগম, তাদের দুই স্বজন হারুন ও হারুনের স্ত্রী সাবিনা আক্তারকে আসামি করে মামলা করেন। এরপর আল আমিন, নাজমা ও সাবিনাকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। হারুন পলাতক রয়েছে।
মন্তব্য করুন