

চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস চক্রের দুই সদস্যসহ গ্রেপ্তার তিনজন থেকে চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। চক্রের ওই দুই সদস্যই প্রথমে নিজেরা চক্রের মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নিয়েছেন। পরে ওই চক্রেই জড়ান তারা।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রোববার (২৬ অক্টোবর) দিনাজপুর পুলিশ সুপার মো. মারুফাত হোসাইন ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেন।
এর আগে শনিবার সকালে দিনাজপুর শহরের কেরী মেমোরিয়াল হাই স্কুল কেন্দ্রে খাদ্য অধিদপ্তরের ‘উপখাদ্য পরিদর্শক’ পদের পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষার হলে পরপর কয়েকবার করে কাশি দিচ্ছিলেন এক পরীক্ষার্থী। বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় ওই পরীক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি তল্লাশি করা হয়।
পরে তার কাছ থেকে দুটি ডিভাইস জব্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্ষুদ্রাকৃতির গোল ডিভাইসটি তার কানের ভেতর বিশেষ প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল। অন্যটি সাঁটানো ছিল স্যান্ডো গেঞ্জির সঙ্গে। পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে তাকে তাৎক্ষণিক আটক করে পুলিশ। পরে চক্রের আরও দুই সদস্যকে আটক করা হয়।
ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার বলেন, চিরিরবন্দরের বিন্নাকুড়ি গ্রামের মতিউর রহমানের ছেলে মামুন ২০১৮ সালে প্রশ্নফাঁসকারী চক্রের মাধ্যমে ইলেট্রনিকস ডিভাইসের সহায়তায় পরীক্ষা দিয়ে প্রাইমারির সহকারী শিক্ষক হন। পরে ২০২২ সালে মামুন একই উপজেলার চড়কডাঙ্গা গ্রামের করুণা কান্ত রায়ের ছেলে হর সুন্দর রায় সবুজকে একই কায়দায় শিক্ষক পদে চাকরি পাইয়ে দেন। পরে তারা দুজনই প্রশ্নফাঁস চক্রের সক্রিয় সদস্য হয়ে ওঠেন।
আরও পড়ুন : ভোটের মাধ্যমে চাঁদাবাজ দখলবাজদের রুখে দিতে হবে : ফয়জুল করিম
তিনি আরও বলেন, তারা প্রতি বছর প্রাইমারির শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষক নিয়োগের নিবন্ধন পরীক্ষা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন নিয়োগে ধারাবাহিকভাবে প্রশ্নফাঁসসহ ডিভাইসের মাধ্যমে উত্তর বলে দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দিয়ে আসছেন। একই কায়দায় জালিয়াতি করার সময় শনিবার গ্রেপ্তার হন বিরল উপজেলার সিঙ্গুল পূর্ব রাজারামপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণকান্ত রায়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রশ্নফাঁস চক্রের সদস্য মামুন ও হর সুন্দর রায় সবুজকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় ওই ছাত্রাবাস থেকে ২৪টি প্রবেশপত্র, নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প ১০টি এবং পাঁচটি ইলেট্রনিকস ডিভাইস জব্দ করা হয়।
আরও পড়ুন : ‘ঘুষ নয়, পাকা কলা খেয়েছি’
পুলিশ সুপার বলেন, এ চক্রের সদস্যরা প্রতি প্রার্থীকে চাকরি নিয়ে দেওয়ার জন্য ১৫ লাখ টাকার চুক্তি করেন। এ কাজে এ নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প ব্যবহার করা হয়েছে। তারা চাকরির জন্য চুক্তি করা প্রার্থীদের এসএসসি, এইচএসসি ও অনার্সের মূল সনদ নিয়ে রাখেন। নেওয়া হয় স্বাক্ষর করা ফাঁকা চেকের পাতা। সেগুলো এখনো উদ্ধার হয়নি। এ চক্রকে ঢাকা থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
পুলিশ সুপার বলেন, রোববার তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতে চালান দেওয়া হয়েছে। বিচারক তাদের জামিন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।
আরও পড়ুন : বিএনপি নেতাকে ১০ লাখ টাকার চেক দেওয়া কর্মীর অ্যাকাউন্টে ৩৪১২ টাকা
মন্তব্য করুন