বড় বিনিয়োগ, বড় মুনাফা আর বড় ব্যবসার হাতছানি। এমন ফাঁদে পা দিয়ে হয়েছেন সর্বশান্ত। মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে প্রতারণার জালে ফাঁসিয়ে পাথর ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলামকে ডুবিয়েছেন কাপড় ব্যবসায়ী মো. আসাদুল ইসলাম। এই ঘটনায় প্রতারণা ও সই জালের অভিযোগে ঢাকা মেট্রোপলিটন আদালতে মামলা করেছেন আমিনুল। সেই মামলায় আসাদুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে। তবে গ্রেপ্তার এড়াতে গা ঢাকা দিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন আসাদুল।
দেশের আলোচিত মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজে পাথর সরবরাহ করে পুরস্কার পাওয়া আমিনুল ইসলাম ভাই ভাই ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। বড় ব্যবসার প্রলোভন দেখিয়ে তার কোটি কোটি টাকা মেরে দিয়েছেন অ্যাস্ট্রোটেক্স গ্রুপ নামের পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. আসাদুল ইসলাম ও তার সহযোগী আমির হোসাইন। বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে সুনামের সঙ্গে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহ করা আমিনুল এখন ব্যবসা-বাণিজ্যের চিন্তা বাদ দিয়ে প্রতিকারের আশায় ঘুরছেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে যৌথভাবে বিদেশ থেকে পাথর আমদানির ব্যবসা করতে গিয়ে কাপড় ব্যবসায়ী আসাদুলের ফাঁদে পড়েন আমিনুল। ওই বছর ভুক্তভোগী আমিনুলকে নিয়ে মো. আসাদুল ইসলাম ও তার সহযোগী মো. আমির হোসাইন স্ট্যান্ডার্ড হোলিং লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নেন মো. আসাদুল ইসলাম এবং তার সহযোগী আমির হোসাইনকে করা হয় পরিচালক। আসাদুল ও আমিরের সুনিপুণ প্রতারণার শিকার হয়ে ব্যবসার মূলধনই হারিয়ে ফেলেছেন আমিনুল। পাথর আমদানির নামে ব্যাংকে জমা থাকা প্রায় ১৪ কোটি টাকার সবই আমিনুলের চেক ও সই জাল করে তুলে নেন তারা। এ ঘটনায় মামলা করেন আমিনুল। এরপর সেই মামলা থেকে বাঁচতে আবারও প্রতারণার আশ্রয় নেন আসাদুল। ১৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মামলা থেকে বাঁচতে আসাদুল মীমাংসার চুক্তি করেন। যেখানে সকল হিসাব তুলে ধরে উল্টো ভুক্তভোগী আমিনুলের কাছে আরও ৫ কোটি টাকা পাওয়া আছেন এমন একটি হিসাব দাখিল করেন। যে চুক্তির কথা আমিনুল জানেন না। এই চুক্তি দেখিয়ে আদালত থেকে আরও পাঁচ কোটি টাকা আদায়ের আদেশ জারি করিয়ে নেন। এর প্রতিকার চেয়ে আদালতে অধিকতর তদন্তের আবেদন করেন আমিনুল। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আর এই সিআইডির তদন্তে বেরিয়ে আসে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আসাদুল ও তার সহযোগী আমিরের প্রতারণার বিষয়টি।
সম্প্রতি দীর্ঘ তদন্ত শেষে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন সিআইডির এসআই হাবিবুর রহমান। আদালত সূত্রে পাওয়া সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী তার যৌথ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড হোলিং লিমিটেডে ১৪ কোটি ২ লাখ ৬৮ হাজার ৩৯ টাকা বিনিয়োগ করেন। এই টাকা যৌথ ব্যাংক হিসেব থেকে সই জাল করে আসামি আসাদুল ও আমির বিভিন্নভাবে তুলে নেন। সেই টাকা ফেরত চেয়ে আদালতে মামলা করেন আমিনুল। আর এই মামলা থেকে বাঁচতে আসামিরা মামলা আপস করার জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে সালিশির জন্য আরবিট্রেটর নিয়োগের প্রস্তাব দেন। এই প্রস্তাবে আমিনুল রাজি হলে আরবিট্রেটর সালিশে বিচারকদের সামনে বানোয়াট হিসাব বিবরণ উপস্থাপন করেন দুই প্রতারক। এই হিসাব দেখিয়ে নিজেদের পক্ষে রায় নেন তারা। পরবর্তীতে জাল হিসাবের বিষয়টি উল্লেখ করে আদালতে মামলা করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আমিনুল। পরবর্তীতে ২০২৩ সালে আদালত সিআইডিকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেন।
দীর্ঘ তদন্তে সিআইডি তদন্ত কর্মকর্তা সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ ও ফরেনসিক রিপোর্টে মামলার বাদীর স্বাক্ষর জাল করে নতুন হিসাব বিবরণ দেওয়া ও টাকা তুলে নেওয়ার প্রমাণ পাওয়ার তথ্য উল্লেখ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত চলতি বছরের গত ৩০ জানুয়ারি মামলার দুই আসামি আসাদুল ও আমিরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর থেকে পলাতক দুই আসামি।
ভুক্তভোগী আমিনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ব্যবসায়িক ক্যারিয়ারে এমন বিপদে কখনো পড়িনি। ভালো ব্যবহার দেখিয়ে তারা আমাকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। তবে সিআইডির অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করা তদন্তে জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। দ্বারে দ্বারে ঘুরে সঠিক বিচার পাইনি। এবার সিআইডি আমাকে বেঁচে থাকার সাহস জোগাল। এখন আসামিদের যেন গ্রেপ্তার করা হয় এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেন আমি আমার টাকা ফেরত পাই সেটাই আমার দাবি।
মন্তব্য করুন