জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে ২৩টি লেগুনা আটকে রেখে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। তবে ছাত্রলীগ নেতারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা লেগুনাগুলো আটকে রেখেছে।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল্লাহ আল ফারুক ইমরান, শাহ পরাণ ও হাসান মাহমুদ ফরিদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ও লেলিন মাহবুব এবং উপছাত্রবৃত্তিবিষয়ক সম্পাদক আল রাজি সরকার প্রমুখ। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
গত মঙ্গলবার বিকেলে ছাত্রলীগের নেতাদের নির্দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে লেগুনাগুলো আটকানো শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন লেগুনাগুলোর চাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে চলে যান। এরপর রাতে লেগুনা মালিক সমিতির নেতারা এলে কয়েকটি লেগুনা ছেড়ে দেওয়া হয়। আর বাকি ১১টি লেগুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে নিয়ে আটকে রাখা হয়। সেগুলো মঙ্গলবার দিবাগত রাত ও গতকাল বুধবার সারাদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরেই ছিল। এরপর গতকাল বুধবার বিকেলে আরও ১২টি লেগুনা আটকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে মোট ২৩টি লেগুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের পাশে রাখা হয়েছে। তবে মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা না করে লেগুনাগুলো ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতারা।
অন্যদিকে লেগুনার চালক ও মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাভার থেকে আশুলিয়া রুটে প্রায় দুই শতাধিক লেগুনা নিয়মিত চলাচল করে। সেগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের দিনপ্রতি ২৫ টাকা করে চাঁদা দিতে হতো। সে হিসেবে মাসিক দেড় লাখ টাকা চাঁদা দিত তারা। তবে মালিকপক্ষের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিগত দুই মাস ধরে চাঁদা দেওয়া বন্ধ ছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আবারও লেগুনা থেকে চাঁদা আদায়ের চুক্তি করতে চায় ছাত্রলীগ নেতারা। তবে এবার লেগুনা প্রতি ১০০ টাকা দাবি করেছেন ছাত্রলীগের নেতারা। তা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে মালিক পক্ষ। তাই লেগুনা আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন চালক ও মালিক পক্ষের নেতারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লেগুনা মালিক সমিতির একাংশের এক নেতা বলেন, ‘প্রতি লেগুনা থেকে দিনপ্রতি ২৫ টাকা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাঁদা দেওয়া হতো। তবে এখন তারা লেগুনা প্রতি ১০০ টাকা দাবি করছে, যা আমাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব না।’
অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতারা বলছেন, সাভার থেকে আশুলিয়াগামী একটি লেগুনা সিএন্ডবি এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের (৪৬তম ব্যাচ) ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র তানভীর ও তারেকের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। তাই তিনটি লেগুনা আটকে রাখা হয়। তবে চালকেরা নকল চাবি দিয়ে সেগুলো নিয়ে চলে যান। এরপর ক্ষোভে শিক্ষার্থীরা লেগুনাগুলো আটকিয়েছে। মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলার জন্য ডেকেছি। তবে তারা আসছেন না, তাহলে কার ভরসায় লেগুনাগুলো ছেড়ে দেব?
এ বিষয়ে তানভীর বলেন, ‘আমাদের মোটরসাইকেলের পেছনে একটি লেগুনা ধাক্কা দেয়। পরে তিনটি লেগুনা আটকে রাখি, তবে তারা কিছু না বলেই নকল চাবি দিয়ে চলে যায়।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘হলের ছোট ভাইরা লেগুনাগুলো আটকায়। তাই মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলার জন্য ডেকেছি, তবে তারা আসেনি। এভাবে ফিটনেসবিহীন গাড়ি তো সড়কে চলতে পারে না। মালিকপক্ষ না এলে, কাদের কাছে গাড়িগুলো দেব?’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফরিদ হোসেন বলেন, ‘হলের দুই ছোট ভাইয়ের মোটরসাইকেলে একটি লেগুনা ধাক্কা দেয়। তাই তাদের দাবি অনুযায়ী লেগুনাগুলো আটকানো হয়েছে। তবে টাকা লেনদেনের বিষয়ে কিছু জানি না।’
শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে গাড়ি আটকে রাখতে পারে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. রাসেল মিয়া বলেন, ‘আমাদের কাজ তদারকি করা। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমরা শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করেছি কিন্তু তারা কথা শোনেনি।’
মন্তব্য করুন