যবিপ্রবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:০৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

যবিপ্রবিতে রাতভর দুগ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৮

শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ থামাতে ছুটে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। ছবি : কালবেলা
শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ থামাতে ছুটে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। ছবি : কালবেলা

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থীর সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স (এফএমবি) বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় এফএমবি, ইএসটি ও বিভাগের শিক্ষার্থীরাও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় অন্তত ৮ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি চায়ের দোকানে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে উচ্চ রক্তচাপে অসুস্থ হয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন প্রক্টর ড. মো. আমজাদ হোসেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রাতেই পুলিশ সদস্য মোতায়েন করে কর্তৃপক্ষ।

এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী ও সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি চায়ের দোকানে লিফট দুর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বরখাস্ত অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গালিবকে নিয়ে আলোচনা করছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকা শাহনী উর্মি ও তার বন্ধুরা। এ সময় উর্মির সঙ্গে সিএসই বিভাগের স্বপন নামের এক শিক্ষার্থীর ধাক্কা লাগে। এ ঘটনায় উর্মিরা প্রতিবাদ করলে সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়।

পরবর্তীতে উর্মির বন্ধু ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিব আহমেদ শান সিএসই বিভাগের বরখাস্ত শিক্ষক সৈয়দ গালিবকে নিয়ে মন্তব্য করে। এ সময় ওই বিভাগের শিক্ষার্থীরা শানের ওপর চড়াও হন। এরপর উর্মি ও শান প্রক্টর অফিসের দিকে যায়। এ সময় সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের দিকে তেড়ে গেলে উর্মি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীদের কল করে ঘটনাস্থলে জড়ো করেন। এরপরই দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উর্মির গায়ে হাত দেওয়ায় প্রশাসনিক ভবনের নিচে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানালে সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের যুগ্ম সদস্য সচিব এসএম দোলেনুর করিম ও এফএমবি বিভাগের শিক্ষার্থী মাঞ্জুরুল হাসান আহত হন। পরবর্তীতে সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীরা খেলার মাঠে ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা মুন্সী মেহেরুল্লাহ হলের সম্মুখ সড়কে অবস্থান নেন। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেকা শাহানী উর্মি বলেন, আমি ও আমার ব্যাচমেট শানসহ কয়েকজন চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। তখন সিএসই বিভাগের স্বপন হাসাহাসি করতে করতে আমার গায়ের ওপর এসে পড়ে। আমি বিরক্ত হলে স্বপন ও তার এক বন্ধু সরি বলে। এরপর ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে সিএসইর কয়েকজন শিক্ষার্থী হাবিবকে ডাকে। এটা দেখে আমি আমার বন্ধু ও ছোট ভাইদের ডেকে জড়ো করি। এরপরই সংঘর্ষ শুরু হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর জেলার যুগ্ম সদস্য সচিব ও এফএমবি বিভাগের শিক্ষার্থী এসএম দোলেনুর করিম বলেন, আমি উর্মির ফোন পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে দেখি আমাদের সহযোদ্ধা শানকে সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘিরে রেখেছে। আমি বিষয়টি সমাধান করতে গেলে তারা আমার গায়ে হাত তোলে এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলে তুই কথা বলার কে? এ ঘটনা আমার বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানতে পেরে ছুটে আসে। এবং আমাকে কেন মারা হয়েছে এটা তাদের কাছে জানতে চায়। তখন তারা আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে আমার বন্ধু মানজুরুলকে আহত করে।

সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী মোস্তাফিজুর বলেন, সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে আমাদের এক ভাইয়ের হাত ভুলবশত উর্মি আপুর গায়ে লেগে যায়। তখন সরি বলার পরও তার বন্ধু ইএসটি বিভাগের শিক্ষার্থী শান আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। এজন্য আমরা প্রক্টর স্যারের কাছে বিচারের জন্য যাচ্ছিলাম। তখন শান ও এফএমবি বিভাগের দোলেনুর এসে আমাদের সঙ্গে বিশৃঙ্খলা করে এবং লিমনকে ধাক্কা দিতে থাকে। এ সময় তারা আমাদের বিভাগের তিনজন ভাইকে মেরে গুরুতর আহত করে। তারা আমাদের উপর ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে। আমরা তাদের ওপর কোনো হাত ওঠাইনি আমরা শুধু তাদের আক্রমণকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছি।

যবিপ্রবি প্রক্টর ড. মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘রাতেই সব সহকারী প্রক্টর একসঙ্গে হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অনুমতি ছাড়া ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের মিছিল-মিটিং, মানববন্ধন-সমাবেশ করা যাবে না। করলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া সংঘর্ষের ঘটনায় শনিবার তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আরও বলেন, ‘আমার ধারণা, এই সংঘর্ষের নেপথ্যে গালিবের সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি থাকতে পারে। তা না হলে শুধু চায়ের দোকানে দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে তুচ্ছ কথা-কাটাকাটির ঘটনায় ক্যাম্পাসে এত বড় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটার কথা নয়।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আইইউবিএটি-তে চীনা ভাষা কোর্সের উদ্বোধন

সাকিবের বিরল রেকর্ডে ভাগ বসিয়ে মিরাজের ইতিহাস

প্লাস্টিকের গৃহসামগ্রী ব্যবহার, বছরে প্রাণহানি সাড়ে ৩ লাখ

মে দিবস উপলক্ষে তারেক রহমানের বাণী 

আধুনিক বিমানবাহিনী গড়ে তোলার লক্ষ্য সরকারের : প্রধান উপদেষ্টা

মিরাজ ঝড়ে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ে বধ টাইগারদের  

বিএনপি নেতাকর্মীদের আরও ধৈর্য ধরতে হবে : এ্যানি

প্রাইজবন্ড ড্র, এবার পুরস্কার বিজয়ী যারা

পরবর্তী পোপ হিসেবে নিজেকেই দেখতে চান ট্রাম্প!

‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার একমত হলে করিডোর চালু করতে পারে জাতিসংঘ’

১০

গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েশন ডে উদযাপন

১১

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও বিএসআরএম যৌথভাবে উদ্বোধন করল বিএসআরএম স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং

১২

নোয়াখালীতে হত্যা মামলায় বিএডিসির গুদামরক্ষক গ্রেপ্তার

১৩

যুদ্ধজাহাজে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের নির্দেশ কিমের

১৪

চিন্ময় দাসের জামিন স্থগিত

১৫

সর্বোচ্চ সতর্কতা পাকিস্তানের সব বিমানবন্দরে, কী হতে চলেছে

১৬

সৌদিতে ঈদুল আজহার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা

১৭

১১ বছর ধরে ভাত না খাওয়া সেই নিজাম উদ্দিনের পাশে তারেক রহমান

১৮

বগুড়ায় হত্যা মামলায় দুজনের মৃত্যুদণ্ড

১৯

অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে কাজ করছে সরকার : বাণিজ্য উপদেষ্টা

২০
X