জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরের ডাটাবেজ শাখা ছাত্রদলের কাছে সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের অধ্যাপক পদমর্যাদার এক শিক্ষক জড়িত রয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সদস্য।
গত ১৬ মে সন্ধ্যা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচির খুদে বার্তা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মুঠোফোনে পৌঁছায়। এরপরই শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তিগত তথ্য ছাত্রদলের কাছে হস্তান্তরের বিষয়টি বুঝতে পারেন।
ইংরেজিতে লেখা ওই খুদে বার্তায় বলা হয়েছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়্যারম্যান তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ফ্রি হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করেছে। ২১ মে এর মধ্যে রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটি অনলাইন ফর্মের লিংকও দেওয়া হয় খুদে বার্তায়।
ভর্তির সময় প্রশাসনের কাছে দেওয়া শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরের ডেটাবেজ হস্তান্তরের ঘটনায় গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গ্রুপ এবং ব্যক্তিগত প্রোফাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। নিজের নম্বরের পরিবর্তে অনেক শিক্ষার্থী অভিভাবকের নম্বর প্রদান করায় বাড়তি ঝামেলার আশঙ্কা করেছেন তারা।
জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম ও শাখা ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ দুটি সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, ৮ তারিখে শাখা ছাত্রদলের তত্ত্বাবধানে হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রথমদিকে কর্মসূচির প্রচারণা কৌশলে শিক্ষার্থীদের ফোনে খুদেবার্তা পাঠানোর বিষয়টি পরিকল্পনায় ছিল না। অনলাইন, মাইকিং এবং ব্যানারের মাধ্যমে প্রচারণা চালানোর সিদ্ধান্ত হয়।
পরবর্তীতে ১৬ তারিখে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের ঐ শিক্ষকের পরামর্শে শাখা ছাত্রদলের এক যুগ্ম আহ্বায়ক মেসেজ প্লাটফর্মের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মোবাইলে বাল্ক এসএমএস (গুচ্ছ খুদে বার্তা) পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
সূত্র দুটি আরও জানায়, শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র নেতার কাছে শিক্ষার্থীদের ফোন নম্বর নম্বরের ডাটাবেজ শেয়ার করেন ঐ শিক্ষক। এরপর কোম্পানির কাছে শিক্ষার্থীদের ফোন নম্বর সরবরাহ করে ১০ হাজার টাকা চুক্তিতে শিক্ষার্থীদের ফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। শাখা ছাত্রদলকে নিজের আয়ত্তে রাখতেই তিনি এ উদ্যোগ নেন বলে জানায় সূত্র দুটি।
জাবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জহির উদ্দীন মোহাম্মদ বাবর বলেন, আমাদের স্বেচ্ছাসেবী এবং কর্মীদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে মেসেজ পাঠিয়েছি। এর বাইরে অন্য কোনোভাবে মেসেজ পাঠানো হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আমি অবগত নই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জল বলেন, ভর্তির সময় শিক্ষার্থীরা নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করে। শিক্ষার্থীদের তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। তারা কোনোভাবেই এ তথ্য নির্দিষ্ট কোনো সংগঠনের হাতে তুলে দিতে পারে না।
জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য নুরুল ইসলাম বলেন, ঘটনা সত্যি হয়ে থাকলে সেটি অবশ্যই নীতিবহির্ভূত কাজ হয়েছে। এ ঘটনা প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এ ঘটনায় সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহিদুর রহমানকে সভাপতি, সদস্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল ইসলাম এবং আইসিটি সেল এর প্রোগ্রামার মো. রেজাউল আলমকে সদস্য সচিব করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে আট কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মন্তব্য করুন