প্রথমবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আর্থিকভাবে অসচ্ছল নারী শিক্ষার্থীদের মাঝে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি হলের নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছলতার কারণে হলে থাকতে পারেন না তাদের এ সহায়তা দিয়েছে প্রশাসন।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভা কক্ষে এ সহায়তা প্রদান করা হয়। এই কার্যক্রম চলমান থাকবে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, আমরা এই আইডিয়া নিজেদের মধ্যে আলোচনা শেষে প্রক্টর স্যারের সাথে আলোচনা করি। এরপর প্রক্টর স্যার কোষাধ্যক্ষকে জানাতে বলেন। পরে আমরা কোষাধ্যক্ষকে এই বিষয়ে লিখিত দাবি জানাই। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই বিষয়কে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। যতদিন পর্যন্ত সব ছাত্রীর আবাসন সুবিধা দেয়া সম্ভব না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত যেন এই আর্থিক সহায়তা দেয়া হয় এই দাবি জানাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, মেয়েদের সংকট যে এমন তীব্র তা জানতাম না। অনেক শিক্ষার্থীকে আমরা নিজেরাও চাঁদা তুলে সহায়তা দিয়েছি। ছেলেরা যেকোনো জায়গায় থাকতে পারে কিন্তু মেয়েদের জন্য তা অনেক কঠিন। মেয়েদের এই অবস্থার জন্য আমরাই দায়ী। আমরা কথায় কথায় বিভাগ বাড়িয়েছি কিন্তু তারা কোথায় যাবে সেটা ভাবিনি। হল না বাড়ানো পর্যন্ত এটা টেকসই হবে না। এই প্রক্রিয়া যাতে আমরা স্বচ্ছতার সাথে করতে পারি এজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, এখানে আমরা প্রতিনিয়ত দেখেছি একজন প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থী কিভাবে তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে। স্বপ্নপূরণের গল্পগুলো আমরা দেখেছি। আমাদের সামর্থ্য সীমিত। আমরা কখনোই মনে করি না আমরা বিশাল কিছু করে ফেলেছি। তাদেরকে কিছুটা সাপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করতেছি, তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। সমাধান হচ্ছে হলগুলো তৈরি করা। এটা সাময়িক একটি প্রচেষ্টা। ছোট ছোট উদ্যোগ আমরা শুরু করেছি যার ফল সবাই পাবে। আমাদের চেষ্টা আছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যাদের হলে থাকার জায়গা তাদের একটা সমাধান আমাদের করতেই হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, এটি একটি আপদকালীন ব্যবস্থা। এটি স্থায়ী সমাধান নয়। আমাদের স্থায়ী সমাধান হচ্ছে হল তৈরি করা। আপাতত আমাদের পক্ষে যেটুকু করা সম্ভব সেগুলো করছি। এখানে যাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে তাদের জন্য ছয়টি শর্ত রাখা হয়েছে। যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল, ঢাকায় থাকার জায়গা নেই তারা এই সহায়তা পাবে।
তিনি বলেন, চীনা সরকারের সাথে আমাদের আলোচনা একদম শেষ পর্যায়ে। আমরা আশা করছি এই হলের কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শুরু করা সম্ভব হবে। একটি বড় প্রকল্পের দশটি স্তরের নয়টি স্তর আমার পার করেছি। ওই বড় প্রকল্পে মেয়েদের জন্য চারটি হল করা হবে। এই আর্থিক সহায়তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে লম্বা সময়ের জন্য চালিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। এজন্য আমরা চেষ্টা করছি এনডাউমেন্ট ফান্ড গঠন করার।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নারী শিক্ষার্থীদের হলগুলোর প্রভোস্টরা, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, রেজিস্ট্রার প্রমুখ।
মন্তব্য করুন