শিক্ষার্থীদের ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি ডাস্টবিন। ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডাস্টবিন থাকলেও তার মধ্যে অধিকাংশ ডাস্টবিনেরই নিচের অংশ নেই। এছাড়াও ২টা ডাস্টবিন অনেকদিন ধরে ইট দিয়ে ভর্তি করে রাখা হয়েছে। ফলে ক্যাম্পাসজুড়ে তৈরি হচ্ছে দুর্গন্ধ, আবর্জনার স্তূপ এবং মশা-মাছির উপদ্রব। এতে পড়াশোনার পাশাপাশি চলাফেরাতেও সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মোট ১৬টি ডাস্টবিন রয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে থেকে ৯টি ডাস্টবিনের এই নিচের অংশ নেই—যার ফলশ্রুতিতে ময়লা ফেলার পর সেগুলো সরাসরি মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। এছাড়াও যে ২টা ডাস্টবিন অনেকদিন যাবত ইট দিয়ে ভর্তি করে রাখা হয়েছে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলার মতো কোনো সুযোগ নেই। অর্থাৎ ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্থাপিত ১৬টি ডাস্টবিনের মধ্যে ১১টিই কার্যত অকেজো।
পরে ময়লা-আবর্জনাগুলো ডাস্টবিনের নিচে থেকে নিষ্কাশন করা হলেও স্থানগুলো যথাযথভাবে পরিষ্কার হয় না। ফলে সেখানে দুর্গন্ধ ও মশা-মাছির উপদ্রব দেখা যায়। এবং পরবর্তীতে সব আবর্জনাগুলো জবির মুক্ত মঞ্চের এখানে এবং প্রশাসনিক ভবনের সামনে স্তুপ আকারে জমা করা হয়। যার ফলে সেখানেও দুর্গন্ধ ও বাজে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ ময়লা-আবর্জনা রাখার জন্য ক্যাম্পাসে নির্দিষ্ট কোনো ‘ডাম্পিং রাউন্ড’ নেই।
এতে করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলেন এখানে ডাস্টবিন আছে, কিন্তু ব্যবহার করার মতো নয়। নিচের অংশ না থাকলে এটার কোনো প্রয়োজনীয়তা নাই। তাদের মতে, ডাস্টবিন মেরামত বা প্রতিস্থাপন কোনো জটিল কাজ নয়। প্রয়োজন শুধু সচেতনতা ও সদিচ্ছার। একে অবহেলা করে চলা মানে শিক্ষার পরিবেশ ও ভাবমূর্তিকেই আঘাত করা।
ম্যানেজমেন্ট স্ট্যাডিজ ডিপার্টমেন্টের ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী রাইয়ান রহমান বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেসবুক গ্রুপে ছবি দিয়ে মুক্ত মঞ্চের এই নোংরা পরিবেশের অবস্থা তুলে ধরেছে। কিন্তু প্রশাসনের কাছ থেকে কোনোরকম সাড়া পাইনি। এখানে প্রশাসনের গাফলতি দৃশ্যমান। শুরুতে মনে হতো হয়তো শিগগিরই ঠিক করা হবে, কিন্তু মাসের পর মাস কেটে গেলেও এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। শুধু বাইরের সৌন্দর্য নিয়ে ভাবলেই হবে না, ভিতরের সমস্যাগুলোও গুরুত্ব পেতে হবে।
একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী মিজান হোসেন বলেন, প্রতিদিন এই ডাস্টবিনে ময়লা ফেলি, কিন্তু নিচে কিছু না থাকায় তা সরাসরি মাটিতে পড়ে থাকে। বিশেষ করে খাবারের প্যাকেট, চায়ের কাপ বা পচনশীল জিনিসগুলো মাটিতে গিয়ে পড়ার ফলে আশপাশে দুর্গন্ধ ছড়ায়, মশা-মাছি ভিড় করে। আমরা যেখানে পড়ালেখা করতে আসি, সেখানে এ ধরনের দৃশ্য মানসিকভাবেও বিরক্তিকর। এটা অনেক দিন ধরেই চলছে, কেউ গুরুত্ব দেয় না।
গণিত বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী সিফাত ফয়সাল বলেন, বিষয়টি শুধু স্বাস্থ্যগত না, এটা একটা মানসিক অস্বস্তির জায়গা। প্রতিদিন নোংরা পরিবেশ দেখে ক্লাসে যাওয়ার আগে থেকেই বিরক্ত লাগে। সবচেয়ে খারাপ লাগে যখন দেখছি কেউ এসব দেখেও দেখছে না। আমরা চাই, প্রশাসন অন্তত ছোটখাটো সমস্যাগুলোকেও গুরুত্ব দিক।
সহকারী রেজিস্ট্রার মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরিচ্ছন্নতা কর্মী আছে মাত্র ৪ জন। তাদের মধ্যে দুজন ক্যাম্পাস ঝাড়ু দেয় এবং দুইজন ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করে। এতো বড় ক্যাম্পাসে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য মাত্র দুইজন কর্মী পর্যাপ্ত নয়। আর কোন ডাম্পিং গ্রাউন্ড না থাকার কারণে মুক্তমঞ্চে আবর্জনা ফেলে রাখা হয় যার ফলে সেগুলো পঁচে সেখানে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।
এই ব্যাপারে কথা বলার জন্য রেজিস্ট্রার গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে তিন দিন ধরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তিনি এই ব্যাপারে কথা বলতে অসম্মতি জানিয়েছেন।
মন্তব্য করুন