খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। কিন্তু গল্লামারীতে অবস্থিত এই বিদ্যাপীঠ বর্তমানে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে— ভূমি সংকট। এর মূল অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সীমানার ভেতরে থাকা গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ হাজারের বেশি, কিন্তু আবাসনের জন্য হল রয়েছে মাত্র পাঁচটি। ফলে মাত্র ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন, বাকি ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বাইরে থাকতে হচ্ছে। বর্তমান ভূমি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদার মাত্র এক-পঞ্চমাংশ হওয়ায় শিক্ষার্থী আবাসন এবং জীববিজ্ঞানভিত্তিক ডিসিপ্লিনগুলোর মাঠ গবেষণা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণের জন্য জমি অধিগ্রহণের দাবি চলছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তৎকালীন সরকার পতনের পর পরিস্থিতি পরিবর্তিত হলে, একই বছরের ৩ নভেম্বর শিক্ষার্থীরা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব বরাবর স্মারকলিপি দেন। এর আগে ও পরে শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধন, প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং গল্লামারী মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হস্তান্তরের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর মৌখিক অনুরোধের পর, ৫ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর চিঠি পাঠানো হয়। উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যারা সদিচ্ছা প্রকাশ করেন।
তবুও সমাধান না হওয়ায় ২০২৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেন এবং খামার ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের ফটকে ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে দেন। সর্বশেষ ৯ মার্চ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক উদ্বোধন শেষে শিক্ষার্থীদের দাবি ‘মীর মুগ্ধ’-এর দাবি হিসেবে উল্লেখ করে সহায়তার আশ্বাস দেন। এরপর ১৪ মার্চ উপাচার্য শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর লিখিত আবেদন করেন, যেখানে গৃহীত পদক্ষেপ ও বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, খামারটি বিশ্ববিদ্যালয় সীমানার ভেতরে বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড হিসেবে আছে, যা নিরাপত্তা ও অবকাঠামো উন্নয়নে অন্তরায়। ১০ দশমিক ৩৫ একর জমি হস্তান্তর হলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সম্প্রসারণ, কেন্দ্রীয় এলাকা সংযোগ, সীমানা প্রাচীর, প্রাকৃতিক ড্রেনেজ উন্নয়ন, সম্মুখভাগের উন্নয়ন এবং গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করা সম্ভব হবে।
ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি (এফএমআরটি) ডিসিপ্লিন দেশে মৎস্য গবেষণায় অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। জমি হস্তান্তর হলে এ ডিসিপ্লিন পূর্ণাঙ্গ গবেষণা ইনস্টিটিউটে রূপ নেবে, যা মৎস্য চাষ, প্রজনন ও সংরক্ষণে জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এবং খামারের উৎপাদনও সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বহুগুণ বাড়বে।
বিশ্ববিদ্যালয় আরও জানায়, খামার স্থাপনের সময় ময়ূর নদীতে জোয়ার-ভাটার প্রভাব ছিল, যা এখন পলি জমে ও নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে বিলুপ্ত হয়েছে। ফলে খামারটি জোয়ার-ভাটা সম্পন্ন নদীর পাশে বড় জায়গায় স্থানান্তর করাই যুক্তিযুক্ত।
উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. রেজাউল করিম কালবেলাকে বলেন, জমি সংকটের কারণে অবকাঠামো উন্নয়ন, গবেষণাগার সম্প্রসারণ ও শিক্ষার্থী আবাসন সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। খামারের জমি বিশ্ববিদ্যালয়ে হস্তান্তর করা গেলে তা বর্তমান সংকট সমাধান, শিক্ষার্থীদের দাবির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এবং দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
মন্তব্য করুন