রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন ঘিরে নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ম্যানুয়ালি ভোট গণনা ও স্বচ্ছ ব্যলট বাক্সসহ ১২ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছেন ছাত্রদল ও রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জ প্যানেল।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাবনা জানায় প্যানেল দুটি।
দুটি প্যানেলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, তপশিল ঘোষণার পর থেকেই ছাত্রশিবির নিয়ম ভেঙে হলে হলে শিক্ষার্থীদের আতর, খাবারসহ নানা উপঢৌকন দিচ্ছে। তারা কালো টাকার ছড়াছড়ি করছে। এমনকি ব্যালট নম্বর প্রদানে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এটি আচরণবিধি লঙ্ঘন এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতার ঘাটতি।
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে তারা বলেন, প্রতীক্ষিত এ নির্বাচন যেন কোনোভাবেই কলঙ্কিত না হয়। আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক একটি রাকসু নির্বাচন।
এ সময় ছাত্রদল ও রাকসু ফর রেডিক্যাল চেঞ্জসহ সমন্বিত প্যানেলগুলো ১২ দফা দাবি তুলে ধরে। দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার ও ভোট শুরুর আগে সাংবাদিক ও এজেন্টদের উপস্থিতিতে তা উন্মুক্ত করা, ভোটারদের আঙুলে অমোচনীয় কালি ব্যবহার, এক দিনের মধ্যে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রকাশ, ম্যানুয়াল ভোট গণনা, নির্বাচনী খরচ ও পোস্টারের সংখ্যা নির্দিষ্টকরণ, ব্যালট ছাপানো ও বাঁধাই পর্যন্ত এজেন্টদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, পর্যাপ্ত বুথের ব্যবস্থা, ডিজিটাল বোর্ডে ভোটার নাম্বার প্রকাশ, সাইবার বুলিং প্রতিরোধে কার্যকর সেল গঠন ও বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিভ্রান্তিকর পেজ-গ্রুপ বন্ধ করা এবং ভোটের দিন ভোটার তালিকা হাতে ধরিয়ে না দেওয়া।
তারা বলেন, এ ১২ দফা বাস্তবায়ন করা হলে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য রাকসু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে।
ছাত্রদল প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নুর উদ্দিন আবীর বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি, ডাকসু নির্বাচনে অন্তত দুটি হলে শিবিরের ভিপি প্রার্থীর প্রাপ্তভোটের সংখ্যা একই। এমনকি ছাত্রদলের প্রার্থী এবং অন্যান্য ভিপি প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যাও ছিল এক। এটি কাকতালীয়ও হতে পারে, ডিজিটাল গণনা মেশিনের কারণেও হতে পারে। তাই আমরা রাকসু নির্বাচন অবাধ, গ্রহণযোগ্য এবং সুষ্ঠু হওয়ার স্বার্থে ম্যানুয়াল গণনা পদ্ধতি এবং স্বচ্ছ ব্যালট পেপারের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের এখনো ১০-১১ দিন বাকি রয়েছে। সুতরাং নির্বাচন কমিশন ইচ্ছা করলেই আমাদের দাবি অনুযায়ী স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান উপহার দিতে পারে। আমরা অবাস্তব কোনো দাবি করছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। সুতরাং ম্যানুয়ালি ভোট গণনা দ্রুত করার ক্ষেত্রে যত বেশি লোকবল প্রয়োজন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর ছাড়াও জিএস প্রার্থী নাফিউল জীবন, এজিএস প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা এবং ‘রাকসু ফর র্যাডিক্যাল চেইঞ্জ’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মেহেদী মারুফ, জিএস প্রার্থী আফরিন জাহান, এজিএস প্রার্থী আল শাহরিয়ার শুভসহ দুই প্যানেলের অন্য প্রার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।
রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এফ নজরুল ইসলাম বলেন, রাকসু নির্বাচন কেন্দ্রিক আমাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। ইতোমধ্যে সব কার্যক্রম প্রায় শেষ। সুতরাং এই ধরণের দাবি কতটা যৌক্তিক সেটা বোঝাই যাচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা মেনে নিয়ে তারা কী অবস্থায় পড়েছে সেটাও আমরা দেখছি। তারপরেও যদি সেইটা নিয়ে কোনো আবেদন বা দাবি আমাদের কাছে আসে, সেটা নিয়ে বিবেচনা করব।
উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে মোট ভোটার ২৮ হাজার ৯০১ জন।
মন্তব্য করুন