পাবিপ্রবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৯:১২ এএম
অনলাইন সংস্করণ

পাবিপ্রবিতে ল্যাবে নষ্ট হচ্ছে ৪৪ লাখ টাকার যন্ত্র

পাবিপ্রবিতে ল্যাবে পড়ে আছে ইউনিভার্সাল টেস্টিং মেশিন। ছবি : কালবেলা
পাবিপ্রবিতে ল্যাবে পড়ে আছে ইউনিভার্সাল টেস্টিং মেশিন। ছবি : কালবেলা

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষার্থীদের জন্য ২০১৬ সালে ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ল্যাবে ইউনিভার্সাল টেস্টিং মেশিন (ইউটিএম) নামের একটি যন্ত্র ক্রয় করা হয়। মূলত কোনো পদার্থের শক্তি, ইমপ্যাক্ট লোড, কম্প্রেসিভ লোড ও টেনসাইল লোড নেওয়ার ক্ষমতাসহ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য এ যন্ত্র ক্রয় করা হয়।

যন্ত্রটি দিয়ে প্রথম বছর ত্রুটিহীনভাবে কাজ করা গেলেও ধীরে ধীরে নানা সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। ২০২০ সালে যন্ত্রটি দ্বিতীয়বারের মতো মেরামত করা হলেও কিছুদিন পর এটি আবার নষ্ট হয়ে যায়। এরপর থেকে যন্ত্রটি অযত্ন—অবহেলায় অকেজো হয়ে বিভাগের ল্যাব রুমে পড়ে আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের অধীনে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে ২০০ কিলো নিউটন চাপ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি মাইক্রো কন্ট্রোল ইলেকট্রো হাইড্রোলিক ইউনিভার্সাল টেস্টিং মেশিন ক্রয় করার দরপত্র আহ্বান করা হয়।

পরে ২০১৬ সালের জুনে আল আরাফা সায়েন্টিফিক সার্জিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি চায়না থেকে আমদানিকৃত জিয়াং টুংগো ইন্সট্রুমেন্ট কোম্পানির (Zhejiang Tugong Instrument Co. Ltd) WAW-2000B মডেলের একটি ইউটিএম মেশিন ৪৪ লাখ টাকা দামে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করেন।

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যন্ত্রটি প্রথম দিকে ভালো কাজ করলেও ২০১৮ সালে নষ্ট হয়ে যায়। এরপর দুবার যন্ত্রটি মেরামত করা হলেও এটি আগের মতো কার্যক্ষম হয়ে ওঠেনি। সর্বশেষ ২০২০ সালে ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে যন্ত্রটি দ্বিতীয়বারের মতো মেরামত করা হলে এর কয়েকদিন পরেই আবার নষ্ট হয়ে যায়। এরপর পর থেকে যন্ত্রটি অকেজো অবস্থায় ল্যাবে পড়ে আছে।

বিভাগ থেকে আরও জানা যায়, যন্ত্রটির হাউড্রোলিক্স সিস্টেম নষ্ট। আর হাইড্রোলিক্স সিস্টেম হচ্ছে এর মূল অংশ। হাইড্রোলিক্স সিস্টেমের মাধ্যমেই চাপ পরিমাপ করা হয়। হাইড্রোলিক্স সিস্টেমের ভেতরে যে বাল্ব দেওয়া হয়েছে সেগুলো খুবই নিম্নমানের। কাজ করতে গিয়ে চাপ দিলে বাল্বগুলো ভেঙে যায়, যার কারণে এটি দিয়ে চাপ পরিমাপ করা যায় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা কালবেলাকে জানান, যন্ত্রটি কেনার সময় অনেক টাকা দুর্নীতি হয়েছে। যন্ত্রটির সঙ্গে দেওয়া অনেকগুলো পার্টস নকল ছিল। যার কারণে কয়েকদিন পরেই তা নষ্ট হয়ে যায়। এটা সম্পূর্ণ ঠিক করতে যে পরিমাণ টাকার দরকার তার সঙ্গে কিছু টাকা যুক্ত করলে নতুন একটি যন্ত্র ক্রয় করা যাবে। তাই এটা ঠিক করা নিয়ে প্রশাসন ও বিভাগ চুপ আছে।

তিনি আরও জানান, এ ছাড়া পরবর্তীতে যন্ত্রটি ক্রয় নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ পায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ফলে ২০১৭ সালে যন্ত্রটি ক্রয় নিয়ে অডিট আপত্তি আসে। অডিট আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়, যন্ত্রটি কেনার সময় কোনো বিশেষজ্ঞ রাখা হয়নি। এ ছাড়াও এটি ক্রয়ের সময় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের কোনো শিক্ষককেও বিশেষজ্ঞ দলের নামের তালিকায় রাখা হয়নি।

বিভাগের শিক্ষকরা জানান, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জন্য এটি একটি প্রয়োজনীয় যন্ত্র। এটি ইউনিভার্সাল টেস্টিং মেশিন হওয়াতে ব্যবহারিক ক্লাসের অনেকগুলো টেস্ট এ যন্ত্র দিয়ে করা যায়। কিন্তু তা নষ্ট হওয়াতে এখন আর কাজ করা যায় না। যার কারণে এ যন্ত্রের টেস্টগুলো ছাড়াই শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাস শেষ করতে হচ্ছে।

এদিকে মেশিনটি দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদউল্লাহ আল মাসুম কালবেলাকে বলেন, যন্ত্রটি দিয়ে অনেকগুলো টেস্ট করা যায়। এটা নষ্ট হওয়াতে থিসিসের কিছু টেস্ট করানোর জন্য কুয়েটে যেতে হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ব্যবহারিক করা এক বিড়ম্বনার কাজ। তাই আমাদের ল্যাব সমৃদ্ধ করার ব্যাপারে প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।

বিভাগের অন্য এক শিক্ষার্থী রায়হান আহমেদ রাফান বলেন, এটা আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় একটি মেশিন। কিন্তু এটি নষ্ট থাকার কারণে ব্যবহারিক অনেক কিছু করতে পারি না, তেমনি গবেষণার কাজেও এটি কাজে আসছে না। তাই এটি দ্রুত ঠিক করে দেওয়া দরকার।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক গোলজার হোসেন কালবেলাকে বলেন, যন্ত্রটি অনেক আগে কেনা হয়েছে। যে কোনো যন্ত্রকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই এটি হয়তো নষ্ট হয়েছে। বর্তমানে যন্ত্রটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রকৌশল দপ্তরের অধীনে। যন্ত্রটি বিকল হয়ে আছে কেন এ বিষয়ে প্রকৌশল দপ্তরই ভালো বলতে পারবে।

প্রকৌশল দপ্তরের উপপ্রকৌশলী (সিভিল) ফরিদ আহমেদ বলেন, যন্ত্র নষ্ট হবে এটা স্বাভাবিক। কোনো যন্ত্র নষ্ট হলে এটাকে মেরামত করতে হয়। আমাদের দপ্তর থেকে ২০২১ সালে বিভাগকে যন্ত্রটি ঠিক করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে কিন্তু বিভাগ এতে কোনো সাড়া দেয়নি। সে কারণে এটি মেরামত করা নিয়ে আমরা কিছু করতে পারিনি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. রাশেদুল হক কালবেলাকে বলেন, যে যন্ত্রটি দেওয়া হয়েছে সেটি ভালো পড়েনি। এটি কেনার পর দুবার মেরামত করা হয় কিন্তু কিছুদিন ব্যবহার করলে সেটি আবার নষ্ট হয়ে যায়। শেষবার আমরা বিভাগের টাকা দিয়ে এটি মেরামত করেছি কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এখন আবার যন্ত্রটি মেরামত করলে আবার কয়েকদিন পরে নষ্ট হয়ে যাবে। তখন এটা মেরামত করা নিয়ে আবার এদিক সেদিক দৌড়াদৈড়ি করতে হবে।

তিনি বলেন, যন্ত্রটির এ সমস্যার কারণে আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি আমাদের নতুন একটি যন্ত্র কিনে দেওয়ার জন্য। নতুন যন্ত্র আসলে আমরা সেটা দিয়ে কাজ করব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দ্বিতীয় পাকিস্তানি হিসেবে ইতিহাস গড়লেন আমির

দীর্ঘ বিরতির পর ২৩ আগস্ট আসছে কোক স্টুডিওর ৪র্থ গান

হবু স্বামীর সঙ্গে কথা বলা কি জায়েজ?

পরীক্ষা শুরুর আগে হলেই কলেজছাত্রীর মৃত্যু

সীমান্তে ১১ বাংলাদেশিকে আটকের পরে ফেরত দিল বিএসএফ

বিস্ফোরণ মামলায় ফখরুলসহ ৬৫ জনকে অব্যাহতি

রাঙামাটিতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে দুদকের অভিযান

আর্জেন্টিনায় ম্যাচ চলাকালে সমর্থকদের তুমুল মারামারি

আশুলিয়ায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জুয়েল গ্রেপ্তার

৬০০ কোটি আয় ছাড়াল রজনীকান্তের ‘কুলি’

১০

শেখ হাসিনার বিচার চেয়ে ট্রাইব্যুনালে সাইদীর মামলার সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি

১১

গাজীপুরে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

১২

জাতিসংঘের প্রতিবেদন নিয়ে নির্দেশনা দিলেন হাইকোর্ট

১৩

ডাকসু নির্বাচনে ব্যালট পেপারে প্রার্থীদের ছবি যুক্তের দাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের

১৪

ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধের মেয়াদ আরও বাড়াল পাকিস্তান

১৫

র‌্যাঙ্কিংয়ে উধাও রোহিত-কোহলির নাম, কারণ জানাল আইসিসি

১৬

রাজসাক্ষী হতে চান পুলিশ সদস্য শেখ আফজালুল

১৭

ভাঙন ভাঙন খেলায় দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ

১৮

চালককে ওয়াশরুমে রেখে প্রাইভেটকার নিয়ে ছুটছিলেন তিন বন্ধু

১৯

নথি গায়েব করে ১৪৬ কোটি টাকার কর ফাঁকি / কর কমিশনার মো. মুস্তাকসহ ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করছে দুদক

২০
X