কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে ফরম ফিলাপের টাকা জমা দিতে গিয়ে মায়া আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী জানতে পারেন পরীক্ষার্থীর তালিকাতেই তার নাম নেই। উপজেলার লালচাঁদপুর আজহারিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায় এমন ঘটনা ঘটেছে। মায়া আক্তার ওই মাদ্রাসার দশম শ্রেণির ছাত্রী। কোনো উপায়ন্ত না দেখে ওই শিক্ষার্থী মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দ্বারস্থ হয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে শিক্ষার্থী মায়া আক্তার উল্লেখ করেন, নবম শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ হয়ে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়ন করে নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন। লালচাঁদপুর আজহারিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার এ শিক্ষার্থীর অভিভাবক ফরম ফিলাপের ফি জমা দিতে অফিসে যোগাযোগ করলে কর্তৃপক্ষ জানায় পরীক্ষার্থীর তালিকায় তার নাম নেই।
শিক্ষার্থীর মা হাফেজা বেগম বলেন, ফরম ফিলাপের জন্য যোগাযোগ করলে মাদ্রাসা থেকে টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে। আমার মেয়ে প্রথমে প্রথমে ২ হাজার টাকা নিয়ে গেলে প্রিন্সিপাল ৩ হাজার টাকা নিয়ে যেতে বলে। পরে ৩ হাজার টাকা নিয়ে গেলে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল জানান, পরীক্ষার্থীর তালিকায় মায়ার নাম নেই। তাকে আবার অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হতে হবে। তার সব ধরনের খরচ মাদ্রাসা থেকে দেওয়া হবে। এমন কথা শুনে আমরা দিশাহারা হয়ে পড়েছি। আমার স্বামী দিনমজুর। টেইলারি কাজ করে কোনোমতে সংসার চালান। এখন কী করব, কার কাছে যাব, কোনো কূল পাচ্ছি না।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের ভুলে আমার মেয়ের জীবন থেকে দুটি বছর হারিয়ে গেল। দুবছর তার বেতন-ফি নিয়েও পরীক্ষা দিতে না পারা সম্পূর্ণ অমানবিক। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। আর যেন কোনো শিক্ষার্থীর জীবনে এমন পরিস্থিতি না হয়।
এদিকে, পরীক্ষার্থীর তালিকা থেকে মায়া আক্তারের নাম বাদ পড়ার সঠিক কারণ জানাতে পারেননি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা একে ফজলুল হক। তিনি বলেন, এখন ওই শিক্ষার্থীকে আবার অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হতে হবে। আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা মাদ্রাসা থেকে তার সমস্ত শিক্ষা ব্যয় বহন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।
ওই শিক্ষার্থীর নাম বাদ পড়ার কারণ জানতে চাইলে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান অপু জানান, মোট ৩২ জনের ফরম ফিলাপ হয়েছে। শুধু এ মেয়েটি বাদ পড়েছে। সে সময়মতো নিবন্ধন জমা দেয়নি। এ ছাড়া একটানা ৩ মাস সে মাদ্রাসাতেই আসেনি। তবে মানবিক বিবেচনায় মেয়েটি যাতে পরীক্ষা দিতে পারে, সেজন্য আমরা কাগজপত্র ঠিক করার চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজালা রানি চাকমা জানান, অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন