রাজধানীর আবুজর গিফারী কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মামুন চৌধুরী ও বিদ্যোৎসাহী সদস্য আলী কাওসারের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলেছেন কলেজের শিক্ষক, গর্ভনিং বডির (জিবি) একটি অংশ। এই দুই সদস্য দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে কলেজের স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত করছেন এবং ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। এতে কলেজের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
রোববার (১১ মে) ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন জিবির সদস্য শিক্ষক প্রতিনিধি জুলেখা বেগম। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অভিভাবকদের ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলনে জিবির ১১ সদস্যের মধ্যে ৮ জন, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জুলেখা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ৫ আগস্টের পর এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে মোহাম্মদ মামুন চৌধুরী মনোনীত হওয়ার পর নিজে একটি বলয় তৈরি করে ইচ্ছানুযায়ী কাজ করছে। এর মধ্যে ছিল অধ্যক্ষকে মিথ্যা অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত, উপাধ্যক্ষকে পদোন্নতির প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত সভা আহ্বান না করে নিজেদের পছন্দের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা।
তিনি অভিযোগ করেন, সভাপতি তার অনুগত শিক্ষকদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে পাঁচ সদস্যের একটি অবৈধ সভা পরিচালনা করেন যেখানে অধিকাংশ সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন। অনুপস্থিত মহিলা সদস্যকে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ দেওয়া এবং চাকরিচ্যুতি ও বেতন বন্ধের হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে শিক্ষকরা জানান।
শিক্ষকমণ্ডলী অভিযোগ করেন, সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত শিক্ষক প্রতিনিধি ও উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির সমন্বয়কারীর বেতন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের যোগসাজশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, এডহক কমিটির সভায় সভাপতির সম্মানী অনৈতিকভাবে কয়েক দফায় বৃদ্ধি করা হয়েছে, যেখানে অন্য সদস্যদের সম্মানী অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। শিক্ষকরা মনে করেন, গত পাঁচ মাসে ৯টি সভা আহ্বান এবং আরও সভা আহ্বানের জন্য অধ্যক্ষকে চাপ প্রয়োগ শুধু সভাপতির সম্মানী লাভের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
কলেজ প্রাঙ্গণের বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের বারান্দা বা অন্য কোনো বিভাগে সভা আয়োজন করে সদস্যদের অসম্মান করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। অধ্যক্ষের কাছ থেকে মূল রেজুলেশন খাতা নিজের জিম্মায় নেওয়া এবং ব্যাংকের মাদার অ্যাকাউন্টের লেনদেনের তথ্য নিজের মোবাইল নম্বরে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে বাধ্য করার অভিযোগ করেন তারা।
শিক্ষকদের আরও অভিযোগ, একজন বিতর্কিত আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষককে কমিটিতে রাখার জন্য জোরপূর্বক চেষ্টা করা হয়েছে, যা নবীনবরণ অনুষ্ঠান বানচালের কারণ হতে পারত। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগও রয়েছে।
এছাড়াও, আইসিটি শিক্ষকের সহায়তায় অধ্যক্ষের কক্ষসহ অন্যান্য কক্ষে গোপনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং কলেজের সব সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ সভাপতির নিজের হাতে নেওয়ার অভিযোগ শিক্ষকরা করেছেন। কলেজের প্রশাসনিক কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ, শিক্ষক পরিষদ নির্বাচন ও গভর্নিং বডিতে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং ও কোন্দল সৃষ্টির অভিযোগও আনা হয়েছে। কতিপয় সাধারণ শিক্ষকের অবাধ যাতায়াতকে প্রশ্রয় দেওয়া এবং শুধু তাদের খুশি করার জন্য কোনো কোনো শিক্ষককে ক্লাসসহ যাবতীয় কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
শিক্ষকরা আরও অভিযোগ করেন, কলেজে সিএসই বিভাগ খোলার জন্য আবেদন ফাইল আটকে রাখা হয়েছে এবং শিক্ষক প্রতিনিধিদের কাছে কাজ করে দেওয়ার বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা চাওয়া হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় কলেজে পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও সভাপতির পছন্দের কলেজ থেকে ১১ জন পরিদর্শক নিয়োগ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
কলেজে সার্বিক পরিস্থিতি উত্তরণে শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন বন্ধের হুমকিতে কলেজের পরিস্থিতি চরম অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে এবং শিক্ষক-কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
অন্যদিকে, কতিপয় সুবিধাভোগী শিক্ষক একটি তথাকথিত সংবাদ সম্মেলন করেছেন যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অন্য শিক্ষকরা দাবি করেছেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিতির ভুয়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কলেজের সার্বিক শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য এসব গুরুতর অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রতিকার চান তারা।
মন্তব্য করুন