বগুড়ার জেলা জজ এ একে এম মোজাম্মেল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী কাজে বাধা প্রদান ও অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। ওই জেলার জন্য গঠিত ৭টি নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারকেরা এই অভিযোগ তুলেছেন। এ অবস্থায় ওই জেলা জজের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের এবং কর্মস্থল বগুড়া থেকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করার সুপারিশ করার উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) এ ব্যাপারে ইসি সিদ্ধান্ত দেবে। কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচনী অপরাধ, নির্বাচনী আচরণবিধি, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি বা পরিচালনায় বাধাগ্রস্ত বা ব্যাহত করে এমন ‘নির্বাচনপূর্ব অনিয়ম’ সংক্রান্ত বিষয়সমূহ অনুসন্ধানপূর্বক কমিশনের নিকট প্রতিবেদন দাখিলের লক্ষ্যে গত ২২ নভেম্বর সারা দেশের ৩০০ আসনের জন্য নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে ইসি। এসব অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান করা হয় সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার বিচারকদের। এদের মধ্যে বগুড়া জেলার জন্য ৭টি নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়।
এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কর্মকর্তারা নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের নিমিত্তে নির্বাচন কমিশনে ন্যস্ত থাকবেন এবং অত্র প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ হতে উক্ত কর্মকর্তাগণ নিজ দপ্তর হতে তাৎক্ষণিকভাবে অনমুক্ত মর্মে গণ্য হবে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ হতে নির্বাচনের ফল সরকারি গেজেটে প্রকাশের সময় পর্যন্ত নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় উপস্থিত থেকে সার্বক্ষণিক নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করবেন মর্মে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।’
কমিশন সূত্র জানায়, অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যানদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়; কিন্তু বগুড়ার জেলা জজ দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নিতে বাধা দেন। নির্বাচনী দায়িত্ব পালন না করে বিচারিক দায়িত্ব পালনে বাধ্য করেন। এছাড়া অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্ব পালনের জন্য যে বাজেট ইসি থেকে দেওয়া হয়েছে তা বণ্টন করেননি। এ অবস্থায় বগুড়ার ৭টি কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারকেরা ইসিকে অবহিত করেন। পাশাপাশি একযোগে পদত্যাগের হুমকি দেন। এরপর বিষয়টি ইসি থেকে গুরুত্বসহকারে নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে এ সংক্রান্ত একটি নোট প্রস্তুত করা হয়েছে। বুধবার নির্বাচন কমিশন থেকে তাকে বদলির ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হতে পারে বলেও কমিশন সূত্র জানায়।
সূত্র জানায়, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে বাধা বা অসহযোগিতা প্রদান নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ৪ ও ৫ ধারা অনুযায়ী অসদাচরণ। বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি নির্বাচন-কর্মকর্তা নিযুক্ত হইলে তাহার নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাহাকে নির্বাচন-কর্মকর্তা হিসেবে কোনো দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে বাধা দিতে পারিবেন না বা বিরত রাখিতে পারিবেন না।’
জানতে চাওয়া হলে বগুড়া জেলা ও দায়রা জজ এ একে এম মোজাম্মেল হক চৌধুরী তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘এটা একটা ভুল তথ্য। আমি বরং নির্বাচনী কার্যক্রম সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনা শোনার পর আমি তাদের (অনুসন্ধান কমিটির বিচারক) সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা কোনো অভিযোগ করেননি বলে দাবি করেছেন। যারা নির্বাচনকে ভন্ডুল করতে চায়, তারা এ ধরনের অভিযোগ করেছে বলে আমি মনে করি।’
মন্তব্য করুন