

নব্বইয়ের শেষ প্রান্তে যিনি এক ঝলকেই কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন রুপালি পর্দা, সেই মাহিমা চৌধুরীর জীবনের গল্প যে এতটা আঁধারে মোড়া—তা খুব কম মানুষই জানেন। অভিষেকের সাফল্যের রেশ কাটতে না কাটতেই একের পর এক ছবি থেকে বাদ পড়া, অদৃশ্য হয়ে যাওয়া লাইমলাইট, আর তার ওপর ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনা—সব মিলিয়ে যেন নিয়তির কঠিন পরীক্ষা। বহু বছর পর সেই হারিয়ে যাওয়া সময়, ভাঙা স্বপ্ন আর বেঁচে ফেরার লড়াইয়ের কথা অকপটে তুলে ধরলেন বলিউড অভিনেত্রী মাহিমা চৌধুরী।
ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি সিদ্ধার্থ কানানকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মাহিমা চৌধুরী। এ আলাপচারিতায় অভিনেত্রী জানান, চুক্তি সংক্রান্ত বিভ্রান্তির কারণে তাকে ভয়াবহভাবে পেশাগত সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
মাহিমা চৌধুরী বলেন, 'অনেক কিছুই হয়েছে। আমার প্রথম সিনেমার পর আমাকে কোর্টে নেওয়া হয়েছিল। অনেক সিনেমা থেকে আমাকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, আমি মুক্তার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ, যা সত্যি ছিল না। তারপর আমি দুর্ঘটনার কবলে পড়ি। আমি এক বছর বাড়িতেই বসে ছিলাম।'
বিরতি কাটিয়ে মাহিমা যখন কাজে ফেরেন, তখন তাকে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দিতে শুরু করেন নির্মাতারা।
এ বিষয়ে মাহিমা চৌধুরী বলেন, 'আমি তখন ছোটখাটো চরিত্রে কাজ করতে শুরু করি। আর সেই সব সিনেমা হিট হয়ে যায়। এমনকি, শুধু একটা গানের দৃশ্যেও অভিনয় করতাম। এরপর আমাকে শুধু একটি গানের জন্য প্রস্তাব দিতে শুরু করে, পরে আমি সেগুলো ‘না’ করে দিই। আমাকে ‘লাকি ম্যাসকট’ বলা হতো। কিন্তু আমি আরো অনেক কিছু করতে চেয়েছিলাম।'
‘দিল কেয়া করে’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়ে মাহিমা চৌধুরী মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। এতে মুখে গুরুতর আঘাত পান এই অভিনেত্রী।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মুখে ৬৭টি ছোট কাচের টুকরো ঢুকে গিয়েছিল, মাইক্রোস্কোপের সাহায্য নিয়ে এসব বের করতে হয়েছিল। দুর্ঘটনার পরের দিন মুখ আরও ফুলে যায় এবং বিকৃত দেখাচ্ছিল। আমার মুখের আঘাত দেখে বন্ধুরা হাসছিল, ওরা ভেবেছিল আমি কারো সঙ্গে ঝগড়া করেছি এবং মিথ্যা বলছি। সেই সময় আমি জানতাম না জীবনে কী করব, খুব কঠিন সময় ছিল। রোদে বেরোতে পারতাম না, সেলাই কাটার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল।‘
এদিকে ২০২০ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাহিমা বলেছিলেন, 'আমার মনে হচ্ছিল মারা যাব। ওই সময় কেউ আমাকে সাহায্যও করছিল না। পরবর্তীতে হাসপাতালে পৌঁছানোর অনেক পর মা ও অজয় আসে। অস্ত্রোপচারের পর আমার মুখমণ্ডল থেকে ৬৭টি কাচের টুকরো বের করেছিল। কথাগুলো যখন বলি আমার কান্না পায়। আমার মুখমণ্ডলে সেলাই, স্ট্যাপল করা ছিল এবং ঘরের মধ্যে থাকতে হয়েছে। আমার ঘর সবসময় অন্ধকার থাকত। নিজেকে দেখতাম না। সূর্যের আলোতে বের হওয়া বাড়ন ছিল। অতিবেগুনি রশ্মি রয়েছে এমন আলোতে যাওয়া নিষেধ ছিল।'
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পরদেশ’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক ঘটে মাহিমা চৌধুরীর। সুভাষ ঘাই পরিচালিত এ সিনেমায় তার বিপরীতে অভিনয় করেন শাহরুখ খান। পরবর্তীতে ‘দাগ: দ্য ফায়ার’, ‘পেয়া কই খেল নেহি’, ‘দিওয়ানে’, ‘কুরুক্ষেত্র’ এর মতো অনেক সিনেমায় অভিনয় করেন মাহিমা।
চলতি বছরে মাহিমা চৌধুরী অভিনীত দুটো সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। গত ১৭ জানুয়ারি মুক্তি পায় ‘ইমার্জেন্সি’, ৭ মার্চ মুক্তি পায় ‘নাদানিয়া’ সিনেমা। বর্তমানে তার হাতে ‘দুর্লভ প্রসাদ কি দুসরি শাদি’ সিনেমার কাজ রয়েছে। রোমান্টিক-কমেডি ঘরানার এ সিনেমা নির্মাণ করছেন সিদ্ধান্ত রাজ।
এ সিনেমার নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সঞ্জয় মিশ্রা। ববিতা চরিত্রে দেখা যাবে মাহিমা চৌধুরীকে। তা ছাড়াও অভিনয় করেছেন—শ্রীকান্ত ভার্মা, পলক লালওয়ানি, নবনী প্রমুখ। আগামী ১৯ ডিসেম্বর সিনেমাটি মুক্তির কথা রয়েছে।
মন্তব্য করুন