

নীরবে থেমে গেল এক প্রতিবাদী শিল্পীর হৃদস্পন্দন। ফিলিস্তিনি সিনেমা ও নাট্যাঙ্গনের কিংবদন্তি অভিনেতা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মোহাম্মদ বাকরি আর নেই। শিল্প, সংগ্রাম ও মানবিকতার ভাষায় যিনি সারাজীবন কথা বলেছেন, সেই কণ্ঠস্বরটি বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) ৭২ বছর বয়সে চিরতরে স্তব্ধ হয়ে গেল।
মার্কিন গণমাধ্যম ‘সিএনএন’ সূত্রে জানা যায়, প্রয়াত এই অভিনেতার ছেলে সালেহ বাকরি সামাজিক মাধ্যমে তার বাবার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন; আর ফিলিস্তিনের নিজ গ্রামেই তাকে সমাহিত করা হয়। আরও জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে তিনি হৃদরোগজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন।
১৯৫৩ সালে জন্ম নেওয়া এই গুণী শিল্পী আশির দশকে থিয়েটারের মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু করেন। ফিলিস্তিনি নাগরিক হয়েও তিনি আরবি ও হিব্রু- উভয় ভাষায় দক্ষ ছিলেন। অস্কারজয়ী গ্রিক-ফরাসি পরিচালক কস্তা-গাভরাসের ‘হানা কে’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় তার অভিষেক ঘটে।
১৯৮৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বিয়ন্ড দ্য ওয়ালস’ সিনেমায় এক ফিলিস্তিনি কয়েদির চরিত্রে অভিনয় করে তিনি বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান। সিনেমাটি একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের (অস্কার) জন্য মনোনীত হয়েছিল।
এদিকে ২০০২ সালে তার পরিচালিত প্রামাণ্যচিত্র ‘জেনিন, জেনিন’ ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বর্বরতার ভয়াবহতা তুলে ধরায় ইসরায়েল সরকার সিনেমাটি নিষিদ্ধ করে।
বিতর্ক, নিষেধাজ্ঞা আর হুমকির মাঝেও মোহাম্মদ বাকরি কখনো থেমে যাননি। শিল্পকে তিনি অস্ত্র বানিয়েছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে, ক্যামেরাকে ব্যবহার করেছিলেন নিপীড়িত মানুষের সাক্ষ্য হিসেবে। তার মৃত্যু শুধু একজন অভিনেতা বা নির্মাতার বিদায় নয়—এটি ফিলিস্তিনি সংস্কৃতি ও প্রতিবাদের এক সাহসী অধ্যায়ের অবসান।
মন্তব্য করুন