‘আলসার’ শব্দের অর্থ ক্ষত বা ঘা বোঝানো হয়। পেটের ভেতরে ক্ষতের সৃষ্টি হলে একে স্টোমাক আলসার বা পেপটিক আলসার বলা হয়। আলসার মূলত অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়ে থাকে। লক্ষণ বুঝে, ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। অবহেলা করলে রোগটি প্রাণঘাতীও হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই এ রোগের কারণ ও লক্ষণ সম্পর্কে ধারণা নেই। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা ভেবে বেশিরভাগ মানুষই আলসারকে চিনতে পারেন না। ফলে পেটের ক্ষত অনেকটাই বেড়ে যায়।
গ্যাস্ট্রিক আলসার বা পেপটিক আলসার অথবা স্টোমাক আলসার মূলত গ্যাস্ট্রিক আলসার নামেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এটি মানবদেহের পাকস্থলী বা ডিউডেনাম বা খাদ্যনালিতে যখন ক্ষত বা ঘা হয়, তখন এটাকে বলা হয় গ্যাস্ট্রিক আলসার বা পেপটিক আলসার।
খাদ্যনালির শুরু থেকে মলত্যাগের রাস্তা পর্যন্ত খাদ্যনালিকে এলিমেন্টারি ট্র্যাক্ট বলা হয়। আর গ্যাস্ট্রিক বা পেপটিক আলসার হয় সাধারণত খাদ্যনালি, পাকস্থলী ও ডিউডেনাম—এ তিনটা অংশে। সাধারণত অতিরিক্ত অ্যাসিড সিক্রেশনের (নিঃসরণ) কারণে ধারণা করা হয় যে গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এইচ পাইলোরি নামক ইনফেকশনের কারণে পেটে আলসার হয়।
এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথার ওষুধ, কেমোথেরাপির ওষুধ খাওয়ার কারণেও পেটে ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে। আবার যারা তৈলাক্ত ও ঝালজাতীয় খাবার দীর্ঘদিন ধরে খান ও মদপান বা ধূমপান করেন, তাদের মধ্যেই বেশি দেখা যায় এই কঠিন অসুখ।
১. পেটব্যথা ২. পেটে জ্বালাপোড়া ভাব ৩. বমি হওয়া ৪. পেট ফুলে যাওয়া ৫. ক্ষুধা না লাগা ৬. অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিডিটি সমস্যা
১. পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া অথবা রং কালো বা আলকাতরার মতো হওয়া। ২. লাল অথবা কালো রঙের রক্ত বমি। ৩. হঠাৎ করে শরীরের ওজন কমে যাওয়া। ৪. খাবারে রুচির পরিবর্তন হওয়া।
বিশেষজ্ঞরা জানান, দীর্ঘদিন এই রোগের চিকিৎসা করা না হলে অ্যানিমিয়া, পাকস্থলী ও ডিওডেনাম ফুটো হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা যায়।
এ ছাড়া এই ক্ষত থেকে অনেকের হতে পারে ক্যান্সারও। তাই দ্রুত রোগ নির্ণয় করা জরুরি। এ পরিস্থিতিতে এন্ডোস্কোপি করে রোগ চিহ্নিত করা যায়।
বিশেষজ্ঞের মতে, ইনফেকশন দেখা দিলে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের পরামর্শ দেন চিকিৎসক। দুই সপ্তাহের কোর্স হয়। এ ছাড়া অ্যাসিডজনিত কারণে সমস্যা হলে প্যান্টোপ্রাজল জাতীয় ওষুধ খেতে হয়।
এর পাশাপাশি জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষ করে খাদ্যতালিকা থেকে অস্বাস্থ্যকর সব খাবার বাদ দিতে হবে।
১. ভাজাপোড়া ও মসলাযুক্ত খাবার কম খাওয়া।
২. ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন করা।
৩. ক্যাফেইনযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা।
৪. অ্যাসপিরিন ও ব্যথানাশক ওষুধ এড়িয়ে চলা। এই ওষুধগুলোর কারণে আলসারের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
৫. ভিটামিন এ, সি ও ই-যুক্ত ফলমূল ও শাকসবজি বেশি পরিমাণে খাওয়ার অভ্যাস করা। এই ভিটামিনগুলো আলসারের ঘা শুকাতে সাহায্য করে।
৬. পরিমিত পানি পান করা।
৭. ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও কোমলপানীয় এড়িয়ে চলা।
মন্তব্য করুন