ডায়াবেটিস এখন অনেকের কাছেই পরিচিত এক রোগ। তবে অনেকেই জানেন না, টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার আগে শরীর আমাদের একটা সতর্কবার্তা দেয়– যেটাকে বলা হয় প্রি-ডায়াবেটিস।
এই সময়টায় রক্তে শর্করার পরিমাণ একটু বেড়ে যায়, কিন্তু এখনো সেটা পুরোপুরি ডায়াবেটিস নয়। ভালো খবর হলো– এই পর্যায়েই সচেতন হলে অনেক সময় ডায়াবেটিস একেবারেই এড়ানো সম্ভব।
আরও পড়ুন : কোলন ক্যানসার সম্পর্কে জানুন
আরও পড়ুন : রাতে না খেলে কমবে ওজন! জানুন পুষ্টিবিদের মত
চলুন সহজ ভাষায় জেনে নিই, প্রি-ডায়াবেটিস কী, কেন হয় এবং এখনই কোন ছোট পরিবর্তনগুলো এনে আপনি নিজেকে সুস্থ রাখতে পারেন।
প্রি-ডায়াবেটিস মানে ঠিক কী?
প্রি-ডায়াবেটিস তখনই ধরা পড়ে, যখন রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি, কিন্তু ডায়াবেটিস হিসেবে গণ্য করার মতো নয়।
এই অবস্থায় অনেকেই ভয় পান, ভাবেন এখন টাইপ-২ ডায়াবেটিস হবেই। কিন্তু আসলে আপনি চাইলে জীবনধারায় পরিবর্তন এনে পুরো সমস্যাটাই রোধ করতে পারেন। এমনটাই জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের ‘ডায়াবেটিস ইউকে’-এর বিশেষজ্ঞরা।
প্রি-ডায়াবেটিসের প্রায় কোনো লক্ষণই বাইরে থেকে বোঝা যায় না। অনেকেই রুটিন চেকআপ বা রক্ত পরীক্ষার সময় হঠাৎ জানতে পারেন, তাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়েছে।
বিশেষ কিছু কারণে আপনার প্রি-ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি হতে পারে, যেমন :
- বয়স বাড়া
- অতিরিক্ত ওজন
- বিশেষ করে পেটে মেদ জমা
- অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
- পারিবারিক ইতিহাস
- কিছু জাতিগোষ্ঠীর (Ethnicity) ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকি
কেন বাড়ে প্রি-ডায়াবেটিসের ঝুঁকি?
শরীরে ইনসুলিন নামের একটি হরমোন কাজ করে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে। যদি শরীর মোটা হয়ে যায় বা পেটে বেশি চর্বি জমে, তখন ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তখন রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায় এবং শুরু হয় প্রি-ডায়াবেটিস।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু সহজ পরিবর্তন আনলে প্রি-ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নিচে ৪টি গুরুত্বপূর্ণ দিক দেওয়া হলো :
১. ওজন কিছুটা কমালেই মিলতে পারে বড় উপকার
গবেষণায় দেখা গেছে, আপনি যদি আপনার বর্তমান ওজনের মাত্র ১০% কমাতে পারেন, তাহলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
একজন বিখ্যাত গবেষক ডা. রয় টেইলর বলেন, ‘আপনার ওজন যতই হোক, যদি আপনার দেহে চর্বি বেশি জমে যায় (বিশেষ করে লিভার ও অগ্ন্যাশয়ে), তাহলে প্রি-ডায়াবেটিস হতে পারে।’ তাই ওজন কমানোটা গুরুত্বপূর্ণ।
তবে দ্রুত ওজন কমানোর পরিকল্পনার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
২. ওজন কমিয়ে সেটাকে ধরে রাখুন
দ্রুত ওজন কমানো অনেকেই পারেন, কিন্তু সেই ওজন ধরে রাখা হয় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই দীর্ঘমেয়াদে যেটা আপনার পক্ষে সহজ, এমন খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা অনুসরণ করাই ভালো।
- নিরামিষ বা ভিগান ডায়েট,
- লো-কার্ব খাবার,
- উচ্চ ফাইবার ও লো গ্লাইসেমিক খাবার — এসবই কার্যকর।
৩. যেসব খাবার এড়িয়ে চলা ভালো
কিছু খাবার আছে যেগুলো প্রি-ডায়াবেটিস থেকে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের পথে ঠেলে দিতে পারে। যেমন :
- চিনি বা অ্যাডেড সুগারযুক্ত পানীয়
- প্রক্রিয়াজাত মাংস ও বেশি রেড মিট
- পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট (সাদা পাউরুটি, ময়দা, মিষ্টি স্ন্যাক্স)
- ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ও অন্যান্য ভাজাপোড়া আলুভিত্তিক খাবার
এই খাবারগুলোতে ফাইবার কম এবং শর্করা অনেক বেশি, যা দ্রুত রক্তে সুগার বাড়িয়ে দেয়।
৪. যেসব খাবার খেলে উপকার
নিয়মিত কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। যেমন :
- সবুজ শাক-সবজি ও মূলজাতীয় সবজি
- ফল (বিশেষ করে ব্লুবেরি, আঙ্গুর, আপেল)
- গোটা শস্য (ওটস, ব্রাউন রাইস, আটার রুটি)
- দই, পনির (লো-ফ্যাট হলে ভালো)
- চা ও কফি (চিনি ছাড়া)
এসব খাবারে আছে ভিটামিন, ফাইবার ও কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স, যা রক্তে শর্করার ওঠানামা কমায়।
একটা কথাই মনে রাখুন— আপনি এখনো সময়ের আগেই ধরে ফেলেছেন।
প্রি-ডায়াবেটিস মানে আপনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন– এমনটা নয়। বরং এটা আপনার শরীরের পক্ষ থেকে একটা সতর্কবার্তা, যাতে আপনি এখনই বদল আনতে পারেন।
আরও পড়ুন : এলাচেই লুকিয়ে আছে ১০ রোগের সহজ সমাধান
আরও পড়ুন : পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে কি না বুঝবেন কীভাবে, জানালেন চিকিৎসক
ডা. অ্যামান্ডা অ্যাভেরি জানান, এটা ভয় পাওয়ার কিছু নয়, বরং স্বাস্থ্য ঠিক রাখার একটা দারুণ সুযোগ।
আপনি যদি এখনই ছোট ছোট পরিবর্তন আনতে শুরু করেন, তাহলে ডায়াবেটিস পুরোপুরি এড়ানো সম্ভব। মনে রাখুন— অল্প একটু ভালো পরিবর্তন, ভবিষ্যতের জন্য অনেক বড় উপকার।
আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ হতে পারে :
- রুটিন চেকআপে রক্তে সুগার পরীক্ষা
- খাবারের বিষয়ে সচেতনতা
- প্রতিদিন কিছুটা হাঁটা বা ব্যায়াম
- পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ কমানো
সূত্র : বিবিসি
মন্তব্য করুন