আমাদের আশপাশে তাকালে দেখা যায়, নাক খোঁটার অভ্যাসটা অনেকেরই আছে। কেউ লুকিয়ে করেন, কেউ আবার প্রকাশ্যেই। ছোটবেলা থেকে অনেক সময় অজান্তেই গড়ে ওঠা এই অভ্যাসকে অনেকে হালকা বিষয় ভেবে গুরুত্ব দেন না। কিন্তু আসলে এটি যেমন সামাজিকভাবে বিব্রতকর ও দৃষ্টিকটু, তেমনি স্বাস্থ্যের জন্যও ভয়ঙ্কর ঝুঁকি ডেকে আনতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাকে আঙুল দেওয়ার এই বদঅভ্যাস শুধু সংক্রমণ ছড়ায় না, বরং মস্তিষ্কের জটিল রোগের কারণ পর্যন্ত হতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, নাক খোঁটার অভ্যাসের সঙ্গে ডিমেনশিয়ার মতো মারাত্মক স্নায়ুরোগের যোগ থাকতে পারে। আর এ কারণে এখনই সচেতন হওয়া জরুরি।
বিজ্ঞানীদের ভাষ্য
বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, নাকে আঙুল দেওয়ার এই অভ্যাসই মস্তিষ্কের কঠিন অসুখ ডেকে আনতে পারে। তারা বলছেন, এমনটিই জানা গেছে এক গবেষণায়।
যদিও এ বিষয় নিয়ে আগেও গবেষণা হয়েছে। এসব গবেষণার সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে এক ডজনে। এবার নতুন করে আবার সতর্ক করলেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় সব গবেষণারই ফলাফল কাছাকাছি। অর্থাৎ ঘন ঘন নাক খুঁটলে মস্তিষ্কের কঠিন রোগ হতে পারে। আর সেই রোগের নাম ডিমেনশিয়া। এটি অ্যালঝাইমার্স ডিজিজ নামেও পরিচিত।
এ বিষয়ে ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একটি গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, ডিমেনশিয়া রোগীদের মস্তিষ্কে একটি বিশেষ রকমের প্রোটিন বাসা বাঁধছে। ‘টাও’ নামের ওই প্রোটিন কিছু প্যাথোজেনেসিসের মাধ্যমে শরীরে আসে। অর্থাৎ শরীরের বাইরে থেকে কোনো না কোনো জিনিসের সংস্পর্শে প্যাথোজেনের মাধ্যমে তা ব্রেনে ঢোকে।
এদিকে এজাতীয় কিছু ব্রেনে ঢোকার সবচেয়ে সহজ পথ হলো নাক। বিজ্ঞানীদের দাবি, নাকই এর জন্য দায়ী। নাকের পথ দিয়েই সোজা মস্তিষ্কে পৌঁছে যাচ্ছে ওই প্যাথোজেন। ঘটাচ্ছে নিউরোইনফ্লেমেশন অর্থাৎ স্নায়ুর প্রদাহ। যা থেকে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
বেশিভাগ মানুষই নাক খোঁটান ময়লা পরিষ্কারের জন্য। তবে নাক খোঁটার অভ্যাস যাদের আছে, তারা প্রায়ই ময়লা হাতে তা করেন। নাকে আঙুল দেওয়ার আগে বা পরে হাত ধুয়ে নেন না। এতে প্যাথোজেন নাকের ভেতর দিয়ে সহজেই সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
মনে রাখা জরুরি, সংক্রমণ দুভাবে ছড়ায়। একটি হলো তলের মাধ্যমে, অন্যটি বায়ুর মাধ্যমে। তলের মাধ্যমে ছড়ানো সংক্রমণ ছোঁয়াচে হয়। আর সেই সংক্রমণই ডিমেনশিয়ার জন্য দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।
গবেষণার ফল
বায়োমলিকিউল জার্নালে প্রকাশিত ওই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু প্রমাণ তুলে ধরেছেন। নাকের ভেতর ব্যাকটেরিয়ার বাসা বাঁধার পেছনে আমাদের আঙুলের ভূমিকা কতটা তা দেখানো হয়েছে।
পাশাপাশি দেখা গেছে, ওই ব্যাকটেরিয়াগুলোও পরে স্নায়ুর প্রদাহের কারণ হয়ে ওঠে। গবেষক বলেন, কোভিডের সময় সবাই যেমন পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব টের পেয়েছেন, সেই অভ্যাসটি বজায় রাখলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।
সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া
মন্তব্য করুন