সামুদ্রিক জাহাজে ১৫ মাস আটক রেখে বাংলাদেশি যুবককে নির্যাতন করা হচ্ছে। তাকে দেশে ফিরতে ও জাহাজ থেকে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। হতভাগ্য যুবকের নাম আজহারুল হক সিফাত (৩৫)।
তিনি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের চরসাহাভিখারি গ্রামের লাল মিয়া ফকির বাড়ির মৃত বেলায়েত হোসেনের ছেলে। দেশে ফেরার জন্য আকুতি জানাচ্ছে সিফাত।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ভাগ্য বদলের আশায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই যায় সিফাত। তিনি সেখানে প্রাইম ট্যাঙ্কারস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের অধীনে এমটি গ্লোবাল পিস নামে একটি ট্যাঙ্কার জাহাজের ক্রু হিসেবে কাজে যোগ দেন। জাহাজটির মালিকের নাম জুগবিন্দর সিং ব্রার। তারা আগে শেল সিপিং নামে একটি কোম্পানির অধীনে চার্টার ছিলেন।
গত ১৪ এপ্রিল জাহাজটির শেষ পণ্য খালাস হয়। সেদিনই সিফাতের সাইন-অফ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোম্পানি ও চার্টার পার্টির মধ্যে আর্থিক দ্বন্দ্বের কারণে অবৈধভাবে তার পাসপোর্ট ও সিডিসি আটকে রাখা হয়। তাকে জাহাজ থেকে নামতে দেওয়া হয়নি।
পরিবার সূত্র আরও জানায়, সিফাতের কাজের চুক্তি ছিল ৬ মাসের। কিন্তু তিনি ১৫ মাস ধরে কাজ করছেন, যা আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন ও মেরিটাইম লেবার কনভেনশন, ২০০৬ অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। জাহাজের অধিনায়ক আলভার্ট সেরজেই একজন ইউক্রেনিয়ান। তিনি সিফাতসহ সব ক্রুকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করছেন। তাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করার হুমকি দিচ্ছেন। যার কারণে সিফাত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
বর্তমানে সিফাত দুবাইয়ের হামরিয়াহ পোর্টের ব্রাভো অ্যাঙ্করেজে আটকে আছেন। যেখানে তিনি ও তার সহকর্মীসহ মোট ১৯ জন রয়েছেন। যার মধ্যে ১৭ জন ভারতীয়, একজন ইউক্রেনীয়। তারা ১৫ মাস ধরে সমুদ্রে আটকে আছেন, দেশে ফিরতে পারছেন না।
সিফাতের মা ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, ভারতীয় কনস্যুলেট এরই মধ্যে তাদের নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমার ছেলের হয়ে এখন পর্যন্ত কেউ সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। আমি একজন সাধারণ গৃহিণী, দূরে বসে প্রতিদিন ছেলের জন্য প্রহর গুনছি। জানি না কী খাচ্ছে, কী অবস্থায় আছে। অসুস্থ কি না, কোনো খোঁজ নেই।
তিনি বলেন, প্রতিদিন ওর ফোন পেলে কান্নায় বুক ভেসে যায়; কিন্তু কিছুই করতে পারছি না। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে আবেদন করছি, একজন মায়ের কষ্ট বুঝতে নিশ্চয়ই আপনার কষ্ট হবে না। ছেলেকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করুন। তার কাগজপত্র ফিরিয়ে দিয়ে, তাকে সাইন-অফ করিয়ে, সে যেন নিরাপদে ফিরে আসতে পারে—এই আবেদন জানাচ্ছি।
মন্তব্য করুন