হৃদরোগ (হার্ট ডিজিজ) এখনো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর কারণ। অনেক সময় এটি কোনো লক্ষণ ছাড়াই আচমকা আঘাত হানে। কিন্তু যদি এমন একটি রক্ত পরীক্ষা থাকে যা আগে থেকেই হৃদরোগের ঝুঁকি শনাক্ত করতে পারে?
সিআরপি (C-reactive protein) টেস্ট এমনই একটি সহজ পরীক্ষা, যা শরীরের ভেতরের ইনফ্ল্যামেশন (জ্বালাভাব) চিহ্নিত করে এবং সেইসঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকিও বুঝতে সাহায্য করে।
সিআরপি (CRP) বা C-reactive protein হচ্ছে একটি প্রোটিন, যা শরীরের ভেতরে জ্বালাভাব বা ইনফ্ল্যামেশন হলে লিভার থেকে তৈরি হয়। স্বাভাবিকভাবে এটি শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার (ইমিউন সিস্টেম) অংশ। তবে দীর্ঘ সময় ধরে যদি সিআরপির মাত্রা বেশি থাকে, তাহলে এটা হৃদযন্ত্রের ধমনিতে (arteries) লুকানো জ্বালাভাবের ইঙ্গিত দিতে পারে, যা ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক সিআরপি ও হৃদরোগের সম্পর্ক। সিআরপি নিজে হৃদরোগ করে না; কিন্তু এর উচ্চমাত্রা দেখায় যে, আপনার শরীরে এমন কিছু হচ্ছে যা হৃৎপিণ্ডের রক্তনালির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে high-sensitivity CRP (hs-CRP) টেস্ট খুবই সংবেদনশীল, যা শরীরে খুব সামান্য পরিমাণে ইনফ্ল্যামেশন হলেও তা ধরে ফেলতে পারে।
আরও পড়ুন : ওজন কমাতে সকালের শুরুটা হোক সঠিক খাবার দিয়ে
আরও পড়ুন : ঘুম থেকে উঠেই কফি ডেকে আনছে যেসব বিপদ
গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক মানুষ যাদের কোলেস্টেরল স্বাভাবিক, কিন্তু hs-CRP বেশি—তারাও ভবিষ্যতে হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই এটি হৃদরোগ ঝুঁকি মূল্যায়নে বাড়তি সুবিধা দেয়।
কম ঝুঁকি : ১.০ mg/L-এর কম
মাঝারি ঝুঁকি : ১.০ – ৩.০ mg/L
উচ্চ ঝুঁকি : ৩.০ mg/L-এর বেশি
তবে এই ফলাফলগুলো সবসময় অন্য ঝুঁকির বিষয়গুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখা উচিত—যেমন বয়স, রক্তচাপ, ধূমপান, ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরল লেভেল।
অনেক সময় হার্ট অ্যাটাক এমন মানুষদের হয় যাদের ধমনি খুব বেশি ব্লকড না, কিন্তু সেখানে ইনফ্ল্যামেশন বা ক্ষয় হয়। CRP টেস্ট কোনো রুটিন কোলেস্টেরল টেস্টের বিকল্প নয়, তবে এটা বাড়তি একট টুল যা ঝুঁকি আগেভাগেই ধরতে সাহায্য করে—বিশেষ করে যাদের ঝুঁকি মাঝামাঝি।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং সিডিসি (CDC) বলছে, যাদের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা আগামী ১০ বছরে ১০-২০%—তাদের এই hs-CRP টেস্ট করা যেতে পারে। এই টেস্ট তাদের জন্যও উপকারী,
- যাদের পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস আছে
- যাদের ডায়াবেটিস বা মেটাবলিক সিনড্রোম আছে
- যারা ধূমপান করেন বা ওজন বেশি
- অথবা যাদের মাঝে মাঝে ক্লান্তি বা হালকা উপসর্গ হয়, কিন্তু কারণ পাওয়া যাচ্ছে না
হ্যাঁ, কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাস মেনে চললে CRP-এর মাত্রা কমানো সম্ভব:
পুষ্টিকর খাবার: ফল, সবজি, ওমেগা-৩ (যেমন মাছ), ও হোল গ্রেইন খাবার খাওয়া
নিয়মিত ব্যায়াম: শরীরচর্চা ইনফ্ল্যামেশন কমায়
ওজন কমানো: সামান্য ওজন কমলেও উপকার পাওয়া যায়
ধূমপান বন্ধ করা
ওষুধ: কিছু ক্ষেত্রে স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধ কোলেস্টেরল কমানোর পাশাপাশি CRP-ও কমাতে সাহায্য করে
আরও পড়ুন : শরীর যথেষ্ট ফাইবার পাচ্ছে কিনা বুঝবেন যেভাবে
আরও পড়ুন : মাছের মাথা খাওয়ার ৭ দারুণ উপকারিতা
CRP বা hs-CRP টেস্ট কোনও নিশ্চিত ভবিষ্যদ্বাণী করে না, কিন্তু এটি একটি মূল্যবান সিগনাল হতে পারে যে শরীরে কোনো লুকানো সমস্যা তৈরি হচ্ছে কি না। হৃদরোগ যেহেতু অনেক সময় কোনো লক্ষণ ছাড়াই আসে, তাই এমন একটা টেস্ট যেটা আগে থেকে সতর্ক করে দিতে পারে— সেটাকে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
আপনার ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করে দেখুন, আপনার ক্ষেত্রে এই টেস্টটি দরকার কি না।
সূত্র: আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন
মন্তব্য করুন