কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৪, ০৭:৫৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কোরবানির মাংস খাওয়ার সঠিক নিয়ম

রান্না করা গরুর মাংস। ছবি : সংগৃহীত
রান্না করা গরুর মাংস। ছবি : সংগৃহীত

ঈদুল আজহায় রেড মিট বা লাল মাংস খাওয়ার মাত্রা বেড়ে যায় বাংলাদেশে। এর স্বাস্থ্যঝুঁকির প্রভাব নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. খুরশিদ জাহান। স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে কোরবানির মাংস কী পরিমাণ বা কতটুকু খাওয়া উচিত তার সঠিক নিয়ম একটি সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে-

কোরবানির ঈদে বাংলাদেশের মানুষ প্রচুর মাংস খেয়ে থাকে। বিষয়টি আপনি কীভাবে দেখেন?

ড. খুরশিদ জাহান : কোরবানির ঈদ হলো মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই সময়ে বিভিন্ন পশু যেমন : গরু, ছাগল, মহিষ, উট, দুম্বা জবাইয়ের মাধ্যমে উৎসবটা পালন করা হয়। এগুলো কিন্তু রেড মিটের উৎস। আমি বলব, গরুর মাংস বা রেড মিট খাওয়ার আগে অবশ্যই নিজের স্বাস্থ্যগত দিক চিন্তা করতে হবে। বছরে একটা দিন আমরা কোরবানির মাংস খাব, এটা অনেকে আশা করে থাকে। কোরবানির মাংসকে অনেকে পবিত্রও মনে করে। এই গরুর মাংসের অনেক উপকারিতা আছে, কিন্তু বেশি খাওয়ার ঝুঁকিও রয়ে গেছে। মাংসের ক্ষতিকারক দিক মূলত চর্বি। খাওয়ার পর এই চর্বি বাসা বাঁধে রক্তে এবং এটা ক্ষতিকারক কোলস্টেরল বাড়িয়ে দেয়। যার কারণে হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেড়ে যায়। শরীরে আরও অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

মানবদেহের জন্য লাল মাংসের প্রয়োজনীয়তার দিকটি নিয়ে কী বলবেন?

ড. খুরশিদ জাহান : পুষ্টির দিক থেকে রেড মিট কিন্তু অনেক গুণে গুণান্বিত। এটা হাই কোয়ালিটির প্রোটিনের উৎস। এর মধ্যে অনেক ভিটামিন-মিনারেল রয়েছে। আয়রন আছে, যেটা রক্তশূন্যতা দূর করে। রেড মিট আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হাড় ও দাঁতের গঠনে ভূমিকা রাখে, চুল-নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। তারপর বাচ্চা বয়স থেকে শুরু করে সবারই শরীরের বৃদ্ধি ও বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে। আমাদের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে, অতিরিক্ত অসারতা দূর করতে সহায়তা করে। এসব স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় ভালো উৎস হলো রেড মিট।

যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে, কোলেস্টরেল বেশি, উচ্চ রক্তচাপ আছে- তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?

ড. খুরশিদ জাহান : তারা রেড মিট খেতে পারবেন কি না, কতটুকু খেতে পারবেন- এর জন্য অবশ্যই তাদের বিশেষজ্ঞ বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে। কোরবানির ঈদে সবাই মাংসটা খেতে চায়। যাদের কোনো সমস্যা নেই, তারা দিনে ৭০ গ্রাম পর্যন্ত খেতে পারবেন, যেটা সপ্তাহে সব মিলিয়ে ৩০০-৫০০ গ্রাম হতে পারে। কিন্তু যারা অসুস্থ, বিশেষ করে হৃৎপিণ্ডে সমস্যা আছে, যাদের কিডনির সমস্যা আছে, যাদের ওজন অনেক বেশি, আর্থরাইটিস আছে, তাদের বুঝেশুনে খেতে হবে, পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন, কোরবানির ঈদের সময় পাওয়া পশুর পাঁজর বা সিনার মাংসে চর্বি কম থাকে, সেখান থেকে কিছুটা হয়তো খাওয়া যাবে। কিন্তু বেশি খাওয়া যাবে না, সীমিত আকারে- সেটা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী।

গরু ও খাসির মাংস যাদের বারণ, তারা সাধারণত মুরগির মাংস খেয়ে থাকেন। এই বিকল্প ঠিক কি না?

ড. খুরশিদ জাহান : হাই কোলেস্টরেলের কারণে যাদের গরুর মাংস খাওয়া নিষেধ, তারা ঝুঁকি কমাতে মুরগির মাংস খেয়ে থাকেন। মুরগির মাংসেও কিন্তু গরুর মাংসের মতোই হাই কোয়ালিটির প্রোটিন থাকে। যাদের সমস্যা, তাদের প্রোটিন কম খাওয়া উচিত, কিডনি রোগীদের এমনিতেই কম খাওয়া উচিত। ‘ফুড ডাইভারজিফিকেশন’ বা খাদ্যে বৈচিত্র্যময়তা বলে কিন্তু একটা কথা আছে। আমরা প্রতিদিন যে খাবারগুলো খাই, সেসবের মধ্যে অনেক ধরনের খাবার যুক্ত করা উচিত। এই খাবারের সঙ্গে আমরা যদি শাকসবজি, ফলমূল, দানাদার খাবার যুক্ত করি- তাহলে আমাদের মাংসের পরিমাণটা কম হয়ে যায়। সব খাবার মিলিয়ে খেলে সমস্যা কমে যায়।

আমিষের চাহিদা পূরণে মাছ-মাংস ছাড়া আর কোন কোন খাবার গ্রহণ করা যায়?

ড. খুরশিদ জাহান : দুই রকম উৎস থেকে আমরা আমিষ পেতে পারি। একটা হলো প্রাণিজ উৎস যেমন : মাছ-মাংস। আরেকটা হলো ভেজিটেবল। দেশে আমরা যত জরিপ করেছি, সেখানে আমরা বেশির ভাগই পেয়েছি সিরিয়াল প্রোটিন। বিভিন্ন ধরনের ডাল হলো আমিষের ভালো উৎস। ডাল ও চাল মিলিয়ে যদি আমরা খাবার খাই, তাহলে কিন্তু হাই কোয়ালিটির প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। ডালে যে অ্যামিনো অ্যাসিড কম থাকে, সেটা চালে থাকে। আবার চালে যে অ্যামিনো অ্যাসিড কম থাকে, সেটা ডালে থাকে। এখন যদি মিলিত খাবারটা খাই, তাহলে এটা পরিপূর্ণ হাই ক্লাস অ্যামিনো অ্যাসিডযুক্ত খাবার হয়।

ছোটবেলা থেকেই শাকসবজি খাওয়ার প্রতি কিছু অনীহা দেখা যায়। এর কারণ কী? সমাধান কীভাবে হতে পারে?

ড. খুরশিদ জাহান : বাচ্চাদের যখন সাপ্লিমেন্ট ফুড দেওয়া হয়, তখন থেকে যদি আমরা এমন খাবারে অভ্যস্ত করি, যেটা তাদের উপযোগী এবং তাদের টেস্ট অনুযায়ী, যা ভেজিটেবলস ও অ্যানিমেল সোর্সের মিলিত খাবার। এমন খাবার দিলে বাচ্চারা এভাবেই অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। কিন্তু অনেক মাকেই দেখি, তারা এত ঝামেলার মধ্যে যান না। তারা বাচ্চাদের সিরিয়াল বা দানাদার জাতীয় খাবার দেন, যেটাতে হয়তো অনেক ভিটামিন মিক্সড থাকে। একটু বড় হতে হতেই দেখি, তাদের বাইরে থেকে প্রসেস ফুড কিনে এনে দেন। তারা আর কখনোই শাকসবজি খেতে চায় না। তারা প্রসেস ফুডেই ঝুঁকে যায়। আমাদের বড় ছাত্রদের মধ্যে দেখেছি একই অবস্থা। খাবারের তো একটা অভ্যাস গড়ে তুলতে হয় ছোটবেলা থেকে, সেটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হয় না।

কোরবানির ঈদের সময় খাবার গ্রহণ নিয়ে আপনার পরামর্শ কী থাকবে?

ড. খুরশিদ জাহান : ধর্মীয় উৎসব তো আমরা পালন করবই। যেভাবেই খাই, কিছু হলেও মাংস খাব। তবে এই সময়ে মাংস খাওয়ার ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। প্রয়োজন বুঝে খেতে হবে। বেশি মাংস থাকলে, বেশি রান্না হলে অতিরিক্ত খাওয়া হয়। আমি বলব, মাংস রান্না করার আগে চর্বিযুক্ত অংশগুলো ফেলে দেওয়া উচিত। মাংস রান্নার সময় অতিরিক্ত তেল বা ঘি ব্যবহার না করাই ভালো। কোরবানির সময় মাংসটাই প্রধান থাকার হিসেবে না খেয়ে সঙ্গে যদি শাকসবজি, দানাদার খাবার, বিভিন্ন ধরনের সালাদ খাই, তাহলে কিন্তু মাংসের পরিমাণ কম হয়ে যায়। এ ছাড়া আঁশযুক্ত খাবার অতিরিক্ত খাওয়া উচিত। কারণ এই সময় দেখা যায়, অতিভোজনে কোষ্ঠকাঠিন্য, গ্যাসট্রিক সমস্যা ও ডায়রিয়াসহ অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে। যাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে, তাদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। ঈদের আগে তাদের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ করে নিতে হবে। যেহেতু রেড মিট হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক, আর্থরাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়- সে জন্য আমাদের অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। সূত্র : ডয়চে ভেলে

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ছাত্রদলের ১ ইউনিটের কমিটি স্থগিত

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনে নেবে ১ হাজার ১৫২ জন

এরিয়া সেলস ম্যানেজার পদে নিয়োগ দিচ্ছে ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্স

বাংলাদেশ সি-সুইট অ্যাওয়ার্ডসের ‘সিইও অব দ্য ইয়ার ২০২৫’ সিটি ব্যাংকের মাসরুর আরেফিন

ইসরায়েলসহ মিত্রদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি, ১৭ জনের মৃত্যুদণ্ড

জাতীয় ইমাম-খতিব সম্মেলনে চরমোনাই পীর / আলেমদেরকে ক্ষমতার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহারের কোনো সুযোগ দেওয়া যাবে না

ইপিআই টিকাকেন্দ্রে আগুন

কৃষি ব্যাংক স্টাফ কলেজে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স অনুষ্ঠিত

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা

বগুড়ায় হৃদরোগীর চিকিৎসায় সহায়তা দিলেন তারেক রহমান

১০

৪৭তম বিসিএসের সময় পেছানোর দাবিতে খুলনায় রেলপথ অবরোধ

১১

২৪ শীর্ষ নির্বাহী পেলেন চতুর্থ বাংলাদেশ সি-স্যুট অ্যাওয়ার্ডস

১২

ভূমিকম্প / জবি ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা, হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা

১৩

ইবির ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের নতুন ডিন ড. আব্দুস শাহীদ

১৪

সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠক

১৫

সাংবাদিকদের ওপর হঠাৎ কেন ক্ষুব্ধ সোহেল রানা

১৬

‘তৌহিদি জনতার’ সঙ্গে বাউল শিল্পীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, আহত ৪

১৭

ভূমিকম্প ঝুঁকি / গ্যাস কূপ খনন কার্যক্রম বন্ধ

১৮

তরুণদের নিয়ে প্লাস্টিকমুক্ত ভবিষ্যৎ গড়ার অভিযানে ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’

১৯

না ফেরার দেশে সাবেক খেলোয়াড় ও আম্পায়ার

২০
X