বাংলাদেশ ও চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘কৌশলগত অংশীদারত্ব’ থেকে ‘বিস্তৃত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বে’- উন্নীত করতে সম্মত হয়েছে। পাশাপাশি এক চীন নীতির প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন দিনের দ্বিপক্ষীয় চীন সফর শেষে ঢাকা-বেইজিংয়ের ২৭-দফা যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ঢাকা-বেইজিং উভয়পক্ষ একে অন্যের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা, একে অপরের মূল স্বার্থ, প্রধান উদ্বেগের বিষয়গুলোতে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সমর্থনের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘দুই দেশের নেতারা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ৫টি নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে সম্মত হয়েছে। দুই দেশ দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, দুই দেশের উন্নয়ন কৌশলগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সমন্বয় গড়ে তুলতে, বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে একটি ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বে উন্নীত করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।’
চীন দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশকে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভিশন ২০৪১ এর অধীনে পরিকল্পিত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা এবং স্বাধীনভাবে তার জাতীয় অবস্থার সঙ্গে উপযোগী একটি উন্নয়ন পথ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।
যৌথ বিবৃতিতে, উভয়পক্ষ অভিন্ন মতপ্রকাশ করেছে, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষ, যারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাদের সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হলো দ্রুত প্রত্যাবাসন। উভয়পক্ষ জোর দিয়েছে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রেজ্যুলেশন ২৭৫৮ প্রশ্নাতীত এবং কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। বাংলাদেশ এক চীন নীতি এবং তার অবস্থানের প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে, চীন সরকার সমগ্র চীনের প্রতিনিধিত্ব করে এবং তাইওয়ান চীনের অংশ। বাংলাদেশ চীনের মূল স্বার্থ, জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় চীনের প্রচেষ্টা সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে চীনকে সমর্থন করে।
পাশাপাশি দুই দেশ নিজেদের মধ্যে ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারত্বের প্রশংসা করেছে এবং সম্মত হয়েছে সম্পর্কটি একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য একসঙ্গে পরিকল্পনা করতে এবং চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আরেকটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য দুই দেশ ২০২৫ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের সুযোগ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যৌথ ঘোষণায় উভয়পক্ষ কৌশলগত যোগাযোগ বাড়াতে বহুপক্ষীয় অনুষ্ঠানে সফর, চিঠি বিনিময় এবং বৈঠকের মাধ্যমে কৌশলগত পারস্পরিক বিশ্বাস আরও গভীর করতে সম্মত হয়েছে।
উভয়পক্ষ সরকারি ও জনগণের পর্যায়ে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও সহযোগিতার জন্য সম্মত হয়েছে। পারস্পরিক স্বার্থের ইস্যুতে মতামত বিনিময়ের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিশেষ করে শাসক দলগুলোর মধ্যে যোগাযোগে সন্তোষ প্রকাশ করেছে দুদেশ।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে গত ৮-১০ জুলাই বেইজিং সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারপ্রধানের বেইজিং সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ১ বিলিয়ন ইউয়ান আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দেয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ ও চীন সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারত্ব থেকে ব্যাপক অংশীদারত্বে নিতে ২১টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। পাশাপাশি ৭টি ঘোষণাপত্র সই হয়।
মন্তব্য করুন