বিদেশে অবস্থিত ব্যাংকগুলোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের অর্থায়নে গঠিত ও পরিচালিত ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবেও থাকতে পারবেন ব্যাংকের চেয়ারম্যানরা। ফলে চেয়ারম্যানদের শুধু দেশে অবস্থিত ব্যাংকের সিকিউরিটিজ, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির পদ ছাড়লেই চলবে। তবে আগের মতো বিদেশের ব্যাংকের ফাউন্ডেশনের পদে থেকে চেয়ারম্যান ব্যাংকের সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির টাকা খরচের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে বহির্বিশ্বে যুদ্ধাবস্থা চলমান থাকায় ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতি এড়াতে ও ফাউন্ডেশনের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন : এক পরিবার থেকে ৩ জনের বেশি ব্যাংক পরিচালক নয়
এর আগে, কোনো ব্যাংক বা ব্যাংকের সহায়ক কমিটির চেয়ারম্যান ওই ব্যাংকের ফাউন্ডেশন বা সহযোগী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে থাকতে পারবেন না, যারা এসব পদে বহাল রয়েছেন তাদের ৩০ জুনের মধ্যে পদত্যাগ করার নির্দেশনা দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২২ সালে এক সার্কুলারের মাধ্যমে এ নির্দেশনা জারি করেছিল আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে গতকাল এ বিষয়ে নতুন একটি সার্কুলার জারি করে কিছুটা শিথিলতা এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে জারি করা সার্কুলারে বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পরিচালক সেই কোম্পানির দেশের বাইরে থাকা এক্সচেঞ্জ হাউস ও মানি ট্রান্সফারসহ সহযোগী প্রতিষ্ঠানের পদে থাকলে তাদের জন্য এ শর্ত শিথিল করা হয়েছে। অর্থাৎ শুধু দেশের বাইরের এক্সচেঞ্জ হাউস ও মানি ট্রান্সফারসহ সহযোগী প্রতিষ্ঠানে বহাল থাকলে গত বছরের দেওয়া সার্কুলার তার জন্য প্রযোজ্য হবে না।
আরও পড়ুন : বাজার থেকে যেসব নোট প্রত্যাহার করবে বাংলাদেশ ব্যাংক
এর আগে গত বছরের ১১ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে জানানো হয়, ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পর্ষদ সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাহী কমিটি, নিরীক্ষা কমিটি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি ওই ব্যাংকের সহযোগী বা ব্যাংকের অর্থায়নে গঠিত ও পরিচালিত কোম্পানি বা ফাউন্ডেশনের পরিচালক হতে পারবেন না। কোনো ব্যক্তি এমন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বা পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত থাকলে তাকে ২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে। পরে এ সময় বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল। বহির্বিশ্বে যুদ্ধাবস্থা চলমান ও রেমিট্যান্স আহরণে চ্যালেঞ্জ এবং প্রতিষ্ঠান পরিচালনাসংক্রান্ত ঝুঁকি মোকাবিলায় যথাযথ অভিজ্ঞতা ও দক্ষ লোকের অভাবে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সব ব্যাংকরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠোনা নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের বাইরে ব্যাংকের এক্সচেঞ্জ হাউস বা মানি ট্রান্সফার অপারেটর ও ফাইন্যান্স কোম্পানি হিসেবে স্থাপিত সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থার নীতিমালা বা বিধিনিষেধ অনুসরণীয় হয়ে থাকে। এ মুহূর্তে বহির্বিশ্বে যুদ্ধাবস্থা চলমান থাকায় রেমিট্যান্স আহরণসহ বিদেশে কার্যরত এক্সচেঞ্জ হাউস ও মানি ট্রান্সফার অপারেটর এবং ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালনা করার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ কারণে পরিচালনাসংক্রান্ত ঝুঁকি মোকাবিলায় যথাযথ অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ঘাটতির কারণে বিদেশস্থ সাবসিডিয়ারি কোম্পানির পরিচালনা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং হতে পারে; যা ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা সৃষ্টির কারণ হতে পারে। যা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ভাবমূর্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, ‘ব্যাংক-কোম্পানির অর্থায়নে গঠিত ও পরিচালিত ফাউন্ডেশনের জন্য বরাদ্দ করা অর্থের সদ্ব্যবহারের লক্ষ্যে ওই প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রয়োজন; যা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের আয়-ব্যয়, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া আবশ্যক’। এমন অবস্থায় দেশের বাইরে ব্যাংকের এক্সচেঞ্জ হাউস বা মানি ট্রান্সফার অপারেটর এবং ফাইন্যান্স কোম্পানির সুষ্ঠু পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি হিসেবে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির এবং ব্যাংকের অর্থায়নে গঠিত ও পরিচালিত ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পর্ষদ ও গভর্নিং বডি, যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, তারা ওই পদে থাকতে পারবেন। তবে অন্যান্য সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, পরিচালক বা সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে আগের নির্দেশনা পরিপালনীয় হবে। আগের অন্যান্য নির্দেশনা অপরিবর্তিত থাকবে।
মন্তব্য করুন