টানা ভারি বৃষ্টি ও বাঁধ খুলে দেওয়ায় ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। বন্যার পানিতে লাখ লাখ মানুষের বাড়িঘর-ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। সেসব এলাকায় তৈরি হয়েছে মানবিক বিপর্যয়।
এসব জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। এখন পর্যন্ত ১৩ জন মারা গেছেন। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) দুপুর ১২টার পর সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান।
বন্যাকবলিত এলাকায় আবহাওয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে শুক্রবার সকালে আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন জানান, সারা দেশেই কমবেশি বৃষ্টি হবে। চট্টগ্রাম বিভাগসহ কিছু অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারি ও অতি ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী রোববার পর্যন্ত এ পরিস্থিতি থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে নদীবন্দরের জন্য ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখিয়েছে আবহাওয়া অফিস। তারা বলছে, আজ সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাজশাহী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে।
এখন পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে, এমন স্টেশন ১১টি। সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার শেওলা ইউনিয়নে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার, শেরপুর-সিলেট অঞ্চলে ১০, মারকুলী এলাকায় ৭, মনু নদের মনু রেলওয়ে ব্রিজে ২৯, খোয়াই নদের বাল্লা এলাকায় ১৯৯, হবিগঞ্জে ১৬৫, গোমতী নদী কুমিল্লায় ১১৯, দেবীদ্বারে ৫৩, হালদা নদী নারায়ণহাটে ১১০ ও পাঁচপুকুরিয়া এলাকায় বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
তবে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলে বিদ্যমান বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও শঙ্কা কাটেনি। আখাউড়ার সীমান্তবর্তী এলাকা জয়নগর দিয়ে ভারতের পাহাড়ি ঢলের পানি তীব্র বেগে আসছে। মূলত উপজেলার হাওড়া নদীর ও আগরতলা সংযুক্ত আখাউড়া ইমিগ্রেশনের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জাজিরা, কাটা ও কালন্দি খাল দিয়ে ভারত থেকে পানি ঢুকছে।
তবে ভারি বৃষ্টি না হওয়ায় সিলেটে নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে। তবে এখনো জেলার কুশিয়ারা নদীর চার পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেটে বৃষ্টিপাত খুব বেশি না হওয়ায় পানি কমতে শুরু করেছে। এখন পর্যন্ত জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যার শঙ্কা রয়েছে।
দীর্ঘ ৮ দিন পর নোয়াখালীতে রোদের দেখা মিলেছে। ভাটায় পানি মেঘনা নদীতে নামতে শুরু করলেও এখনো পানিবন্দি আছেন ২০ লাখ মানুষ। জেলা আবহাওয়া অফিস বলছে, গত ১৬ আগস্ট থেকে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে জলাবদ্ধতা বাড়ে এবং মুহুরী নদীর পানি প্রবেশ করায় তা বন্যায় রূপ নেয়। শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, বৃষ্টি কমে আসবে এবং বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আজ সকালে কেন্দ্রের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। উজানে বৃষ্টি কমেছে এবং সেখানে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। ভারতে পানি কমছে। এর প্রভাব দেশেও পড়বে।
মন্তব্য করুন