খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, একই ধরনের খাদ্য বারবার গ্রহণ করার কারণে ভিটামিনের অভাব পূরণ হয় না। সেজন্য খাবারের ভিন্নতা আনতে হবে। একইসঙ্গে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেন তারা।
মঙ্গলবার (১৩ মে) বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এর কৃষিকৌশল বিভাগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘ফুড ফর্টিফিকেশন অ্যান্ড ইটস্ নেসেসিটি টু অ্যাড্রেস মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট ম্যালনিউট্রিশন’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ সব কথা বলেন।
আইইবির সেমিনার রুমে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আইইবির প্রেসিডেন্ট ও রাজউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রিয়াজুল ইসলাম রিজু। তিনি উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আজকের সেমিনারের বিষয়বস্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ফুড ফর্টিফিকেশনের মাধ্যমে খাদ্যের পুষ্টিগুণ ধরে রাখা যায়। আমাদের দেশে লবণ, চাউল, তেলসহ বিভিন্ন খাদ্য পণ্যের সেটি করা হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী এম. বোরহান উদ্দিন, বলেন, সূর্যের আলোর মাধ্যমে ভিটামিন ডি তৈরি হয়। অন্যান্য ভিটামিন খাদ্যের মাধ্যমে তৈরি হয়। আমরা শরীরে খাদ্যের অভাব হলে ক্ষুধা লাগে। কিন্তু ভিটামিনের অভাব হলে আমরা বুঝতে পারি না। যার কারণে আমরা নানা রোগে আক্রান্ত হই। আমরা একই ধরনের খাদ্য বার বার গ্রহণ করি যার জন্য ভিটামিনের অভাব পূরণ হয় না। তাই আমাদের খাবারের ভিন্নতা আনতে হবে। আমাদের দেশে লবণে আয়োডিন যুক্ত করার জন্য একটি সেল রয়েছে কিন্তু চাউল, তেলসহ অন্যান্য পণ্য তদারকি করার তেমন কোনো সেল নেই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আইইবির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী মো. সাব্বির মোস্তফা খান বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ভিটামিন ডি সহ বিভিন্ন ভিটামিনে অভাব রয়েছে। ভিটামিন ডি এর অভাব কীভাবে পূরণ করা যায় বা এর কোনো সহজ উপায় আছে কিনা?
আইইবির কৃষিকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মাওলার সভাপতিত্বে ও সম্পাদক প্রকৌশলী মো. বেলাল সিদ্দিকীর পরিচালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন আইইবির ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী শেখ আল আমিন, কৃষিকৌশল বিভাগের ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোহাম্মদ সরোয়ার মাওলা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টেকনোসার্ভ এর কান্ট্রি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (ফুড ফর্টিফিকেশন) প্রকৌশলী মো. গুলজার আহম্মেদ। তিনি খাদ্য সমৃদ্ধকরণের ওপর বিশদ আলোকপাত করেন। তিনি বিশ্বে ও বাংলাদেশে খাদ্য সমৃদ্ধকরণ এর বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন। সেমিনারে খাদ্য সমৃদ্ধকরণ এর বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পরে আলোচনায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে বহু মানুষ পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার গ্রহণ করলেও তারা প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের ঘাটতিতে ভুগছেন, যা শিশুদের বৃদ্ধি, নারীদের মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করছে। এই অপুষ্টির ঘাটতি দূর করতে খাদ্য সম্মৃদ্ধকরণ-ফুড ফর্টিফিকেশন একটি কার্যকর ও টেকসই সমাধান হতে পারে। খাদ্যের মাধ্যমে আয়োডিন, আয়রন, জিংক, ভিটামিন-এ, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি ১, বি-৬, বি-১২ ইত্যাদি উপাদান যোগ করলে জনগণের অনুপুষ্টিগত ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। অংশগ্রহণকারীগণ খাদ্য নিরাপত্তা এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।
সেমিনার শেষে একটি কার্যকর সুপারিশমালা প্রণয়ন করা হয়, যা ভবিষ্যতে নীতিনির্ধারকদের জন্য সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেগুলো হচ্ছে- ১. জাতীয় পর্যায়ে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা। ২. বেসিক খাদ্যপণ্যে বাধ্যতামূলক ফর্টিফিকেশন করা। ৩. মনিটরিং ও গুণগত মান নিশ্চিত করা। ৪. গবেষণা ও তথ্যভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করা। ৫. সচেতনতা বৃদ্ধি ও জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো। ৬. অংশীদারিত্ব ও আন্তঃখাত সমন্বয় করা। অর্থাৎ সরকার, বেসরকারি খাত, এনজিও এবং উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে সমন্বিত কর্মপন্থা তৈরি ও বাস্তবায়ন। কৃষি, স্বাস্থ্য, খাদ্য, শিল্প ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা।
মন্তব্য করুন