সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নামে-বেনামে আরও পাঁচ দেশে সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও কম্বোডিয়ায় সম্পদ অর্জনের রেকর্ডপত্র উদ্ধার করেছে দুদকের নেতৃত্বাধীন টাস্কফোর্স। ইতোপূর্বে যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই ও সিঙ্গাপুরে ৫৮২টি বাড়ি ও ফ্ল্যাটের প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দুদকের জনসংযোগ (উপপরিচালক) কর্মকর্তা মো. আক্তারুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের এ কর্মকর্তা বলেন, শনিবার রাত ৪টা ১৫ মিনিটে (২১ সেপ্টেম্বর ভোরে) চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানাধীন ৩নং শিকলবাহা ইউনিয়নের ওসমান তালুকদারের বাড়ি থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, পুলিশ ও অন্য সাক্ষীদের উপস্থিতিতে এসব আলামত উদ্ধার করা হয়।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, ১৬ সেপ্টেম্বর কালুরঘাটে অবস্থিত আরামিট গ্রুপের একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে গোপনে ডকুমেন্টগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়। ইউসিবিএল চেয়ারম্যান রুকমীলা জামানের ড্রাইভার মো. ইলিয়াস তালুকদার প্রথমে সেগুলো নিজের বাড়িতে রাখলেও পরে ১৮ সেপ্টেম্বর অভিযানের আগে পাশের ওসমান তালুকদারের বাড়িতে সরিয়ে রাখেন।
উদ্ধার হওয়া আলামত প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আগেই চিহ্নিত ৪টি দেশ (যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই ও সিঙ্গাপুর) মিলিয়ে ৫৮২টি সম্পদের পাশাপাশি ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও কম্বোডিয়ায়ও সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া দেশে-বিদেশে ক্রয় করা বাড়ির মালিকানা, ভাড়ার আয়, রক্ষণাবেক্ষণ খরচসহ বিভিন্ন তথ্য ও কাগজপত্র এবং সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার ও মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণও ওই ডকুমেন্টগুলোতে রয়েছে।
অনুসন্ধান টাস্কফোর্স ধাপে ধাপে এসব নথি যাচাই করে সুনির্দিষ্ট তথ্য কমিশনের কাছে উপস্থাপন করবে।
এদিকে ঘুষ নেওয়া, প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী ইউসিবি পিএলসির সাবেক চেয়ারম্যান রুকমিলা জামানসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। ১৮ সেপ্টেম্বর বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদকের উপপরিচালক আখতারুল ইসলাম।
অন্য আসামিরা হলেন—ইউসিবি পিএলসির সাবেক পরিচালক সৈয়দ কামরুজ্জামান, আরামিট পিএলসির এজিএম উৎপল পাল, ইম্পেরিয়াল ট্রেডিংয়ের মালিক ও আরামিট পিএলসির এজিএম আব্দুল আজিজ, ক্ল্যাসিক ট্রেডিংয়ের মালিক ও আরামিট পিএলসির এজিএম মো. জাহাঙ্গীর আলম, মডেল ট্রেডিংয়ের মালিক ও আরামিট পিএলসির এও মো. মিসবাহুল আলম, রেডিয়াস ট্রেডিংয়ের মালিক মো. ফারিদ উদ্দিন, লুসেন্ট ট্রেডিংয়ের মালিক মো. জাহিদ, নূর মোহাম্মদ এবং মো. ইয়াসিনুর রহমান।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রতারণার মাধ্যমে থার্মেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ঢাকায় ইউসিবিএলের প্রধান কার্যালয়ের গ্রাহক আব্দুল কাদির মোল্লাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫২ কোটি টাকা ঘুষ দিতে বাধ্য করেন। পরে ওই টাকা বিদেশে পাচার ও হস্তান্তর করা হয়।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী। তিনি দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংসদ সদস্য। সাইফুজ্জামান চৌধুরী মূলত তার বাবার মাধ্যমে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তার বাবা চট্টগ্রামের আনোয়ারা আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পর ওই আসনে উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবার নির্বাচিত হন।
সাইফুজ্জামান চৌধুরী ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের নির্বাহী কমিটি চেয়ারম্যান ছিলেন। বাংলাদেশের শিল্পপ্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি চট্টগ্রাম চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তিনবারের নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন।
মন্তব্য করুন