বাংলাদেশের গ্রামে হিমাগার সুবিধা স্থাপনের জন্য নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ডা. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ডাচ প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফের সঙ্গে এক বৈঠকে এ সহযোগিতা চান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশ দ্রুত বর্ধনশীল ফল ও শাকসবজি উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হচ্ছে। কিন্তু ফসলের মৌসুমে স্থানীয় বাজারে প্রচুর পরিমাণে পণ্য আসায় দাম হঠাৎ করে পড়ে যায়। এর ফলে লাখ লাখ ক্ষুদ্র কৃষক বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। গ্রামীণ এলাকায় স্বল্পমেয়াদি হিমাগার সুবিধার অভাবে তারা তাদের উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণ করতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘নেদারল্যান্ডস কৃষি প্রযুক্তিতে বিশ্বনেতা। আমাদের প্রয়োজন আপনার দেশের আধুনিক প্রযুক্তি, যাতে আমরা আমাদের ফল ও শাকসবজি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে পারি। এ ছাড়া আপনারা চাইলে আমাদের কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি কাজ করার জন্য গবেষক ও বিজ্ঞানী পাঠাতে পারেন।’
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, ‘প্রতিবছর বাংলাদেশে মূলত সংরক্ষণের অভাবে হাজার হাজার টন ফল ও শাকসবজি নষ্ট হয়। এতে কৃষকদের বড় ধরনের আর্থিক লোকসান হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা জাতীয় ফলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তবে রপ্তানি সম্প্রসারণের জন্য উন্নত সংরক্ষণ প্রযুক্তি ও কার্যকর লজিস্টিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার।’
অধ্যাপক ইউনূস নেদারল্যান্ডসের পানি ব্যবস্থাপনা, নদী ব্যবস্থাপনা ও সামুদ্রিক প্রযুক্তিতে নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, ‘আমরা চাই নেদারল্যান্ডস আমাদের জলবায়ু ও পানি ব্যবস্থাপনা, সমুদ্র গবেষণা এবং বাংলাদেশের নদীগুলোকে নৌগমনযোগ্য রাখার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।’
ডাচ প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কুফ প্রধান উপদেষ্টার উত্থাপিত বিষয়গুলো মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং জবাবে বলেন, ‘আমি উত্থাপিত বিষয়গুলো পর্যালোচনা করব। এ ছাড়া, আমরা বস্ত্র খাতেও সহযোগিতার সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে আগ্রহী।’
বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকার গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম, মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর ঝুঁকি এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতির বিষয়েও আলোচনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের আগে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো ঠেকাতে আন্তর্জাতিক সহায়তা কামনা করেন। তিনি বলেন, ‘তথ্যবিকৃতির ভয়ংকর এই ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের আপনার সহযোগিতা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া আমরা এর বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে লড়তে পারব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘১৫ বছরের স্বৈরশাসনের সময়ে প্রকৃতপক্ষে কোনো নির্বাচন হয়নি, শুধু ভুয়া নির্বাচন হয়েছে। বর্তমান সময়ে আগের শাসকদের ঘনিষ্ঠরা মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে।’
সূত্র : বাসস
মন্তব্য করুন