কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৪৬ পিএম
আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৪৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

‘ঢাকার যানজট নিরসনে নয়, আঞ্চলিক যোগাযোগ ও বাণিজ্যে ভূমিকা রাখবে’

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ছবি : কালবেলা
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। ছবি : কালবেলা

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আংশিক উদ্বোধন হলেও পুরোটা চালু হলে আঞ্চলিক যোগাযোগ, অর্থনীতি ও বাণিজ্যে সুফল হলে অতি দ্রুত প্রকল্পের এয়ারপোর্ট থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত পুরোটা চালু করতে হবে। এতে উত্তরাসহ টঙ্গী, গাজীপুর, বিমানবন্দর ও পূর্বাচলের সাথে ঢাকার যোগাযোগ দ্রুততর হবে।

ঢাকার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারকারীদের দ্রুত যাতায়াতে ভূমিকা পালন করবে এই এক্সপ্রেসওয়ে। তবে এই ধরনের এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে ঢাকার যানজট অনেক কমে যাবে, এ আশাবাদের বাস্তবতা নেই। বরং পুরোপুরি চালু হলে এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্পগুলোর আশপাশে যানজট আরও বাড়তে পারে।

আজ বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি) ভার্চুয়ালি আয়োজিত সমসাময়িক পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিশ্লেষণী অনুষ্ঠানে এসব মতামত উঠে এসেছে।

মূল প্রবন্ধে আইপিডির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকার যানজট নিরসনের জন্য প্রধানত ডিজাইন করা হয়নি; তদুপরি এই এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রভাব রাখবে। সম্প্রতি যানজট নিরসনে বিভিন্ন ধরনের ব্যয়বহুল প্রকল্প নেওয়া হয়েছে যার অধিকাংশই ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে। অথচ গণপরিবহনের উন্নয়ন, বাস-সার্ভিস ও কমিউটার ট্রেন নেটওয়ার্ক নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ কাজ করা হয়নি, ফলে নগর পরিবহন টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হচ্ছে না।

তিনি বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আংশিক উদ্বোধন ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থার বৈষম্যমূলক চিত্রকে স্পষ্ট করে তুলেছে যা সামাজিক অসন্তোষের জন্ম দেবার পাশাপাশি উন্নয়নের ন্যায্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে । এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে যেন ঢাকা-টঙ্গী ৩য় ও ৪র্থ লেন রেললাইন প্রকল্প কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে-এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের মধ্যে প্রয়োজনীয় সমন্বয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

আইপিডির পক্ষ থেকে বলা হয়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উপযোগিতা সাধারণ মানুষের জন্য নিশ্চিত করতে সিটি বাস সার্ভিসের জন্যও ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ডিজাইন সংশোধন করা ও বিশেষ বাস সার্ভিস চালু করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে চালু হওয়া আংশিক অংশে ফার্মগেট-এয়ারপোর্ট সরাসরি বাস সার্ভিস ও মিনিবাস সার্ভিস চালু করার পাশাপাশি পুরো প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে যাত্রাবাড়ী-এয়ারপোর্ট/উত্তরা বাস সার্ভিস চালু করবার দাবি করে আইপিডি। টোল আদায়ে অটোমেশন পদ্ধতির ব্যবহারের সাথে সাথে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ির গতিবেগ নজরদারির ব্যবস্থা করার আহ্বান জানায় আইপিডি।

আইপিডির উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, আমাদের পরিবহন ও যোগাযোগ সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ প্রকল্প ও উদ্যোগই গণমুখী নয়। ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়ের মতো প্রকল্পসমূহকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমরা সমতলের রাস্তা ও পরিবহন ব্যবস্থার চরম অবহেলা করেছি, যার উদাহরণ হচ্ছে হানিফ ফ্লাইওভার এর নিচের রাস্তার ব্যবহার অনুপযোগী অবস্থা। এর দায় পরিবহন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্পে উঠবার ও নামবার ক্ষেত্রে বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা দরকার, যেন এই পয়েন্টগুলোতে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

আইপিডির পরিচালক পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, মেগা প্রকল্প, পিপিপি প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় কমানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন নতুবা এ ধরনের প্রকল্পের অর্থনৈতিক উপযোগিতা থাকবে না। ব্যক্তিগত গাড়িকে নয়, বরং বাসযোগ্য শহর গড়ে তুলতে গণপরিবহনে প্রাধান্য দিতে হবে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ নুরুল হাসান বলেন, আমাদের পরিবহন সংশ্লিষ্ট অনেক সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন বস্তুনিষ্ঠ নয়। প্রকৃত চাহিদা নয়, বরং অনেকের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আগ্রহের ভিত্তিতে অনেক পরিবহন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে যা মানুষ ও শহরের জন্য বোঝা হয়ে যাচ্ছে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. আফসানা হক বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে শহরের যানজট কমাবে এ ধরনের আশাবাদ করার বস্তুনিষ্ঠতা নেই। এক্সপ্রেসওয়েটি যদি সার্কুলার রোডের অ্যালাইনমেন্টে ডিজাইন করা হতো তাহলে শহরের ওপর চাপ কমত।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফরহাদুর রেজা বলেন, এই ধরনের প্রকল্পের সামাজিক ও পরিবেশগত প্রভাব এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা মাথায় রেখে পরিকল্পনা করা হলে সেটা জনকল্যাণে কাজে আসবে।

ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, ব্যক্তিগত গাড়িনির্ভর পরিবহন পরিকল্পনার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অভীষ্ট টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শহর গড়া সম্ভবপর হবে না।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাল কমিশন

সাব-স্টেশনে বিস্ফোরণ, ব্ল্যাক আউট হবিগঞ্জ

‘পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে চেয়েছিলেন কিছু ভারতীয় ক্রিকেটার’

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা 

সাংবাদিক নেতা কাদের গনির খোঁজ নিলেন ড. মঈন খান

জুলাই সনদ আইনের ঊর্ধ্বে : সালাহউদ্দিন আহমদ

আয়-ব্যয়ের হিসাব দিল বিএনপি-জামায়াতসহ ২৯ দল, সাড়া নেই ১১ দলের

মাইলস্টোনে উদ্ধার কাজে অংশ নেওয়া সেনা সদস্যদের সম্মাননা

জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে নতুন বাংলাদেশ নয়, দেশ রাহুমুক্ত হয়েছে : টুকু 

আ.লীগ কর্মীদের প্রশিক্ষণের অভিযোগে সেনা কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে : সেনাবাহিনী

১০

ফিলিস্তিনকে সুখবর দিল রোনালদোর দেশ

১১

১০০ আসনে হবে উচ্চকক্ষ, পিআর পদ্ধতিতে সদস্য মনোনয়ন

১২

নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রেখে গতানুগতিক মুদ্রানীতি

১৩

থানা হোক ন্যায় বিচারের প্রথম ঠিকানা : আইজিপি

১৪

প্রাইজবন্ডের লাখ টাকা পুরস্কার পেল যেসব নম্বর

১৫

রাকসু নির্বাচনে প্রার্থী-ভোটাররা যা করতে পারবেন, যা পারবেন না

১৬

নির্বাচন কমিশনের ৫২ কর্মকর্তাকে বদলি

১৭

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না দিলে মামলা করবে জামায়াত

১৮

৫০ লাখ নারী প্রধানের নামে হবে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ : তারেক রহমান

১৯

সেই রাজ্জাকের আরেক বাসার খোঁজ পেল পুলিশ, টাকা উদ্ধার

২০
X