আগামী অক্টোবরে মাসে ডাকা সংসদের বিশেষ অধিবেশনে সংখ্যালঘু বিষয়ক জাতীয় কমিশন গঠন আইন পাশ হবে। পর্যায়ক্রমে ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুত বাদবাকি ৬ দফদফা দাবি পূরণ করা হবে। এমন আশ্বাসের প্রেক্ষিতে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ৪৮ ঘণ্টার গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচী ১৪ ঘণ্টার আগেই প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ।
আজ শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কর্মসূচী প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে। এর আগে শহীদ মিনারে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনশনস্থলে এসে উপস্থিতত হন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার। তিনি ঐক্য পরিষদের সাত দফা দাবির প্রেক্ষিতে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে অনশন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান।
তার বক্তব্যের পর ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাণাদাশ গুপ্ত ৪৮ ঘণ্টার গণ-অনশন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এরপর কবির বিন আনোয়ার ও বর্ষিয়ান রাজনীতিক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সবাইকে পানি খাইয়ে অনশন ভঙ্গ করান। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধাণ সমন্বয়কারী কবির বিন আনোয়র এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আশা করছি আগামী অক্টোবরে ডাকা সংসদের বিশেষ অধিবেশনেই সংখ্যালঘু বিষয়ক জাতীয় কমিশন গঠন আইন পাশ হবে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সবাইকে আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। তা না হওয়ায় আজ নানা জটিলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
সংখ্যালঘু কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে আইন হওয়া উচিত একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা অনশন ভঙ্গ করুন, আমরা আপনাদের পাশে আছি। সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু নিয়ে এই সময়ে কথা বলতে আমার কষ্ট হচ্ছে।
কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তিনি বলেন, ঐক্য পরিষদের দাবি অনুযায়ি তিনটি আইনের অগ্রগতি হয়েছে। এরমধ্যে সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে, তা লম্বা সময় লাগার কারণ নেই। অর্পিত সম্পত্তি আইন চূড়ান্ত পর্যায়ে। বৈষম্য বিলোপ আইন সংসদে সংশোধন আকারে আছে। দেবোত্তর সম্পত্তি আইন আছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে। এরমধ্যে সংখ্যালঘু কমিশন দ্রুত করা দরকার।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ইশতেহারে উল্লেখিত সাত দফা বাস্তবায়ন করা হবে। এ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। তার বক্তব্যের পর রাণাদাশ গুপ্ত বলেন, যারা সাত দফার অঙ্গীকার করেছিলেন তারাই বাস্তবায়ন করবেন। সরকার আইনগুলো এক বছর ধরে এগিয়ে থাকার কথা বললেও এগুলো এই সময়ের মধ্যে সংসদে না যাওয়ায় আমরা আশা ও আস্থা হারিয়েছি।
সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন সংসদের আগামী অধিবেশনে পাশ করা সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও কমিশন গঠন এ দুটি আইনের খসড়া প্রধানমন্ত্রী হাতে দিয়েছিলাম।
তিনি কবির বিন আনোয়ারের উদ্দেশ্যে বলেন, অক্টোবরের মধ্যে যেসব দাবি পূরণের কথা দিয়েছেন, তা রাখতে হবে। এমনকি সকল দাবি দাওয়া পূরণে সুষ্পষ্ট ঘোষণা চাই।
তিনি বলেন, দাবি পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেষ আস্থা ও ভরসার জায়গা। এ ব্যাপারে আমরা আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না।
কবির বিন আনোয়ারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনি তো ভোট চান না, নেন না, আওয়ামী লীগের যারা আমাদের থেকে ভোট নেন তারা কোথায়। তারা কেউ এখানে না আসায় তীব্র নিন্দা জানাই। আওয়ামীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি চাইবেন না অথচ আমাদের ভোট দিতে হবে, এমন ভাবনার কোন কারণ নেই।
তিনি বলেন, অনশন প্রত্যাহার করলেও একই দাবিতে আগামী ছয় অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ডাকা মহাসমাবেশের কর্মসূচি বহাল থাকবে। সমাবেশ থেকে দাবি আদায়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী কর্মসূচি দেব। অঙ্গীকার বাস্তবায়ন না হওয়ায় আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুত সাত দফা দাবি আদায়ে শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে ৪৮ ঘন্টার গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। যা শেষ হওয়ার কথা ছিল আজ রোববার সকাল ৬টায়।
উল্লেখ্য, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু বিষয়ক জাতীয় কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রকৃত স্বত্বাধিকারীদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, দেবোত্তর সম্পত্তি আইন প্রণয়ন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশনের যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন সহ সরকারি দলের বিগত নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নের দাবিতে এই অনশন কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়।
মন্তব্য করুন