চিড়িয়াখানায় গিয়ে কোনো দর্শনার্থী প্রাণীদের উত্ত্যক্ত বা খাবার দিলে জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে। এক্ষেত্রে প্রাণীকে উত্ত্যক্ত করলে দুই হাজার টাকা এবং প্রাণীকে জখম করলে বা অনুমতি ছাড়া খাবার দিলে দুই মাসের জেল ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হবে দর্শনার্থীদের। এমন বিধান রেখে গতকাল বুধবার সংসদে চিড়িয়াখানা বিল ২০২৩ পাস হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বিলটি পাসের জন্য সংসদে তোলেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
এর আগে বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, চিড়িয়াখানায় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে। প্রাণীর খাবারের জন্য যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তা লুটপাট করা হয়। চিড়িয়াখানায় নানা অব্যবস্থাপনা আছে। তিনি বলেন, সরকারি মুরগির খামার নিয়ে প্রথম আলোতে একটি বড় প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। এই প্রতিবেদনটি দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি মন্ত্রীকে আহ্বান জানান।
বিলটি পাস হলে দেশের সরকারি সব চিড়িয়াখানা এর অধীনে পরিচালিত হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা উপদেষ্টা কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, কোনও দর্শনার্থী ফি ছাড়া চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করলে তার কাছ থেকে প্রবেশ ফির সমপরিমাণ মূল্য আদায় করা হবে। মাত্রা বিবেচনা করে দুই হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করা যাবে। কোনও দর্শনার্থী চিড়িয়াখানায় কোনও প্রাণীকে উত্ত্যক্ত করলে তার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা প্রশাসনিক ক্ষতিপূরণ আদায় করা যাবে।
এই আইন পাস হলে কোনো দর্শনার্থী চিড়িয়াখানার কোনো প্রাণীকে কোনোভাবে আঘাত বা জখম করলে বা কিউরেটরের নির্দেশনা অমান্য করে বা অনুমতি ছাড়া খাবার দিলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। এ জন্য দুই মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এসব অপরাধের বিচার করা যাবে।
বিলে বলা হয়েছে, চিড়িয়াখানায় কোনো নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই একই প্রজাতির একই লিঙ্গের একটি প্রাণী রাখা যাবে না। ভেটেরিনারি কর্মকর্তার নির্দেশনা ছাড়া প্রকৃতিগত কারণে দলবদ্ধভাবে অবস্থানকারী প্রাণীদের মধ্য থেকে কোনও প্রাণীকে আলাদা বা এককভাবে রাখা যাবে না। প্রাণীর প্রকৃতি বিবেচনা করে ন্যূনতম প্রাকৃতিক পরিবেশ বা সুবিধাসম্পন্ন খাঁচায় আবদ্ধ বা মুক্ত রাখতে হবে। প্রাণীর প্রকৃতিগত আচরণ, সংশ্লিষ্ট প্রাণীর লালন-পালনে নিয়োজিত ব্যক্তি ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনা করে প্রাণীর খাঁচার অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। কোনও বিপন্ন প্রজাতি সংরক্ষণের জন্য সরকার এক বা একাধিক চিড়িয়াখানা নির্দিষ্ট করতে পারবে।
বিলে বলা হয়েছে—চিড়িয়াখানায় অবস্থিত প্রাণীর দেহে যেসব রোগ-জীবাণু প্রাণী থেকে প্রাণীতে বা মানুষে সংক্রমণযোগ্য সেসব রোগ-জীবাণু বা পরজীবীর সীমা বা মাত্রা নির্ণয়ের জন্য প্রযোজ্যতা অনুযায়ী নিয়মিতভাবে প্রত্যেক প্রাণীকে পরীক্ষা করে প্রাপ্ত তথ্য প্রত্যেক প্রাণীর জন্য বিধি দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে পৃথকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
এতে বলা হয়েছে, সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো চিড়িয়াখানায় বিদেশি প্রজাতির বন্যপ্রাণী কেনা, বিনিময়, উপহার হিসেবে বা অন্য কোনোভাবে সংগ্রহ করা যাবে না। চিড়িয়াখানার কোনো প্রাণীকে লোকালয়ে ছেড়ে দেওয়া যাবে না।
মন্তব্য করুন