জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ ও উচ্চশিক্ষায় কোটা বৃদ্ধিসহ চার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ঋষি সম্প্রদায়। বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানিয়েছেন ঋষি সম্প্রদায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠায় গঠিত অ্যাডভোকেসি ফোরাম ও গ্রাম বিকাশ সহায়ক সংস্থা (জিবিএসএস)।
সংবাদ সম্মেলনে ঋষি সম্প্রদায়ের জন্য সাংবিধানিক অধিকার, সামাজিক ক্ষমতায়ন এবং সরকারি সেবায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিতে চারটি দাবি জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহার ও অঙ্গীকারে অন্তর্ভুক্তির জন্য জানানো দাবিগুলো হলো- জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আত্মকর্মসংস্থান প্রভৃতি বিষয়ে ঋষি সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ বরাদ্দ প্রণয়ন করতে হবে; নিরাপদ পরিবেশে বসবাসের (পানি, স্যানিটেশন, ইউটিলিটি পরিষেবা ইত্যাদি) ব্যবস্থা করতে হবে; প্রান্তিক জনগোষ্ঠীয় ছেলেমেয়েদের জন্য উচ্চ শিক্ষায় কোটা বৃদ্ধি করতে হবে এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির (বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা) আওতায় টিসিবি পণ্যে অংশগ্রহণ, নিরাপত্তা প্রদান, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে যারা পাদুকা শিল্পের সাথে জড়িত তাদের ঋষি সম্প্রদায় বলা হয়। অনেকে মুচি বলে থাকেন। বাংলাদেশে প্রায় ১৫ লাখ ঋষি জনগোষ্ঠী রয়েছে এবং এর মধ্যে ঢাকা শহর ও আশেপাশে প্রায় ২ লাখ ঋষি সম্প্রদায়ের বসবাস। তারা ২৬টি ক্লাস্টার বা পাড়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী অবহেলা, বৈষম্য, সামাজিক প্রতিবন্ধকতাসহ নানা ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত।
তারা আরও বলেন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও ন্যায়বিচার সহ অন্যান্য সাংবিধানিক অধিকার পাওয়া নিয়ে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে ঋষি সম্প্রদায়ের লোকেরা। সরকার আমাদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়নি। ফলে সরকারি সেবায় প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। অনেকের অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় হলেও সে বিষয়ে কারও কোনও আগ্রহ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রাম বিকাশ সহায়ক সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মাসুদা ফারুক রত্না বলেন, গ্রাম বিকাশ সহায়ক সংস্থা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে আনার ক্ষেত্রে কাজ করছে। ঋষি সম্প্রদায়ের অধিকার, সুরক্ষা সুরক্ষিত ও নিশ্চিত করলেই আগামীর সমতার পৃথিবী নিশ্চিত করা সম্ভব। তাদের পেছনে ফেলে নয়।
কাজীরবাগ পঞ্চায়েত সভাপতি সুজন দাস বলেন, ঢাকা শহরে ২৬ মহল্লায় আমরা থাকি। সেখানে জীবনমান খুবই খারাপ। অন্য সবার মতো সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা আমরা পাচ্ছি না। যখন কেউ শুনে আমরা ঋষি সম্প্রদায়ের, তখন আমাদের মহল্লার বাইরে বাসা ভাড়া দিতে চায় না, আমাদের বাচ্চাদের সাথে অন্যরা তাদের বাচ্চাদের মিশতে দিতে চায় না। এ ছাড়া, সবাই একসাথে থাকে বলে আমাদের পরিবারগুলো সাধারণত বড় হয়। সেজন্যও অনেকে বাড়ি ভাড়া দিতে চায় না। আমরা বয়স্ক ভাতা পেলেও মাতৃত্বকালীন ভাতা ও বিধবা ভাতা পাই না।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিজ ইন বাংলাদেশ (এডাব) পরিচালক এ কে এম জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ গার্হস্থ্য নারী শ্রমিক নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক মোসাম্মৎ মোরশেদা বেগম, কাজীরবাগ পঞ্চায়েত সাধারন সম্পাদক কিশোর দাস, জিগাতলা পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি রতন দাসসহ অ্যাডভোকেসি ফোরামের সদস্যবৃন্দ।
মন্তব্য করুন