কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৯ মে ২০২৪, ০৬:২৮ পিএম
আপডেট : ০৯ মে ২০২৪, ০৬:৪২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিতে নারীর ক্ষমতায়নের আহ্বান

ছবি : সৌজন্য
ছবি : সৌজন্য

বৈশ্বিক পর্যায়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের প্রেক্ষাপটে এই খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লেও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে, কর্মসংস্থানসহ এ-বিষয়ক জাতীয় নীতিমালায় এখনো জেন্ডার বৈষম্য বিদ্যমান। টেকসই জ্বালানি খাত নিশ্চিতে ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সেখানে পৌঁছাতে হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে নারীর ক্ষমতায়নের বিকল্প নাই।

গতকাল, (বুধবার ০৮ মে) একশনএইড বাংলাদেশের আয়োজিত ‘এমপাওয়ারিং উইমেন ইন রিনিউয়েবল এনার্জি : অ্যা ফেমিনিস্ট পার্সপেক্টিভ ফ্রম বাংলাদেশ অ্যান্ড বিওন্ড’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এই আহ্বান জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের সভাপতি তানভীর শাকিল জয়, এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)-এর চেয়ারম্যান মুনীরা সুলতানা, এনডিসি উপস্থিত ছিলেন। ভার্চুয়াল এই প্রাণবন্ত আয়োজনে নীতি-নির্ধারক, উন্নয়ন সহযোগী, জলবায়ুকর্মী, শিক্ষাবিদ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এসময় দেশে টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিতে নারীর ক্ষমতায় ও সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় স্টেম শিক্ষা ও খাতে নারীদের উৎসাহ প্রদান, প্রান্তিক পর্যায়ে নারী নেতৃত্ব গড়ে তোলার পরিবেশ প্রদান, নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে কর্মপরিকল্পনাতে অগ্রাধিকার প্রদানসহ জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করে এ-সংক্রান্ত সরকারি নীতিমালা তৈরি বা সংশোধনের আহ্বান জানানো হয়।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন একশনএইড বাংলাদেশ-এর জাস্ট এনার্জি ট্রানজিশনের অ্যাসোসিয়েট প্রোগ্রাম অফিসার রিফাহ তামান্না বর্না। জাতীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে জ্বালানি খাতে নারীদের অবস্থান ও বিনিয়োগ, দেশের জ্বালানিবিষয়ক নীতিমালায় নারীদের অবস্থান, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে চ্যালেঞ্জ এবং টেকসই জ্বালানি প্রভৃতি বিষয় উপস্থাপনায় তুলে ধরেন তিনি।

ভার্চুয়াল এই আয়োজনে টেকসই জ্বালানি খাত উন্নয়নে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠায় দেশের বর্তমান অবস্থা, সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নিয়ে প্যানেল ডিসকাশন আয়োজিত হয়। এসময় একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবিরের সঞ্চালনায় প্যানেল ডিসকাশনে অংশ নেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আনিসুজ্জামান তালুকদার, ব্রাইট গ্রিন এনার্জি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান দীপাল চন্দ্র বড়ুয়া, সোলারিক গ্রুপের ডিরেক্টর নাজনীন আক্তার, ভারতের ওয়াটার রিসোর্স কাউন্সিলের ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট মানসী বাল ভারগাভ, টেকনো গ্রিন-কার্বন লিমিটেডের চেয়ারপারসন আনিকা আলী ও কটন গ্রুপের পরিচালক মাঈশা মাহমুদ।

প্যানেল ডিসকাশনে বক্তারা বলেন- দেশে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, আর্থিক নিয়ন্ত্রণের অভাবসহ জেন্ডার অসমতা নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নারীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে। সংশ্লিষ্ট সরকারি সিংহভাগ নীতিমালা বা কর্মপরিকল্পনাতেও নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি গুরুত্ব কম পেয়ে থাকে। জ্বালানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জলবায়ুবিষয়ক ২২ নীতিমালার মধ্যে ১০টিতে নারীদের অংশগ্রহণের কথা বলা হয়েছে। তবে জেন্ডার মেইনস্ট্রিমের ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের স্পষ্ট করা হয়নি। এই খাতে জেন্ডার সমতা নিশ্চিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। এজন্য নারীদের এ খাতে প্রাধান্য দেয়া, স্টেম খাতে তাদের উৎসাহ প্রদান, জ্ঞান বিনিময়, দক্ষতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিসহ সরকারি নীতিমালায় জেন্ডার সমতা নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই।

২০১৬ সালে জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি গৃহীত হওয়ার পর থেকে, ব্যাংকগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির সম্প্রসারণের জন্য ৩ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ। তবে কিছুটা স্বস্থির বিষয় হলো- ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির গবেষণা মতে, ২০১৭-২০২২ সালের মধ্যে অনবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ কমেছে ৩.৮ শতাংশ এবং নবায়নযোগ্য শক্তিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৪.৮ শতাংশ।

নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে আরও সহায়ক পলিসির প্রয়োজন রয়েছে উল্লেখ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের সভাপতি তানভীর শাকিল জয়, এমপি বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও জলবায়ু এই দুটি বিষয় খুবই সম্পর্কিত। জলবায়ু পরিবর্তন যেমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বর্তমান সময়ে, তেমনি নবায়নযোগ্য শক্তিও গুরুত্বপূর্ণ জায়গা তৈরি করেছে সবুজ রূপান্তরসহ বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণে। ২০০৮ সালের আগে প্রত্যেক খাতে নারীদের অবস্থান খুব একটা সন্তোষজনক অবস্থায় ছিল না। গত ১৫ বছরে নারী ক্ষমতায়নে অনন্য অবদান রেখেছে বর্তমান সরকার। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে নারীদের উন্নয়ন হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে আশা অনুযায়ী উন্নতি করতে পারি নাই। এখানে আরও উন্নতি করার অনেক জায়গা রয়েছে। সরকারের অনেক সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে প্রয়োজন বেটার ফ্লেক্সিবল পলিসি।’

টেকসই উন্নয়নে নারীদের সমর্থন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রান্তিক পর্যায় থেকে যাতে নারীরা সাপোর্ট পায় সেজন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সংস্থাদের একসাথে কাজ করা দরকার। নারীদের সাথে নিয়ে টেকসই নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করতে হবে। অনেক খাতেই নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমি মনে করি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতেও নারীরা নেতৃত্ব দেবেন।’

গত ১৫ বছরে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের পাওয়ার সেলের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে পাওয়ার প্লান্ট ছিল ২৭টি, ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৫টি এবং ৪ হাজার ৯ শ’ ৪২ মেগাওয়াট থেকে বিদ্যুৎ সক্ষমতা বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ২ শ’ ৭৭ মেগাওয়াটে। ২০৪১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য সরকারের। এই খাতে এই সময়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে ২৩০ থেকে ৬৮৯ মেগাওয়াটে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) এর চেয়ারম্যান মুনীরা সুলতানা, এনডিসি বলেন, ‘বৈশ্বিক পর্যায়ের তুলনায় বাংলাদেশ এখনও এই খাতে পিছিয়ে আছে। কৃষি ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ স্বল্পতার কারণে কাজগুলো করা যাচ্ছে না। এজন্য সরকার এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে। এখানে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে নারীদের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে। শিক্ষা পদ্ধতির মধ্যে চেঞ্জ দরকার। নারীরা স্টেম শিক্ষায় খুব বেশি তাদের আগ্রহ দেখাচ্ছে না। শিক্ষা ও গ্রিন জবসের মধ্যে একটা সমন্বয় দরকার। দেশের পলিসি পর্যায়ে কোনও বৈষম্য নাই। আমরা সবাই অনেক কমিউনিটির সঙ্গে বসেছি। সবারই আসলে এই নীতিমালা ফলো করা উচিত। রিসোর্স এক্সেস করার ক্ষেত্রে নারীদের চ্যালেঞ্জ দেখা যায়। এখানে কাজ করার আছে।’

বৈশ্বিক পর্যায়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুসারে, নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে নারীদের কর্মসংস্থানের হার ৩২ শতাংশ। ১০ কোটিরও বেশি নারী এই খাতে কাজ করছেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের কর্মসংস্থানের হার সেই তুলনায় অনেক কম। দেশে এই বিশেষ খাতে নারীদের কর্মসংস্থানের হার শুধু ১০ শতাংশ।

একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে নারীদের অংশগ্রহণে তাদের প্রাধান্য দিতে হবে। এই খাতে বৈশ্বিক নারীদের কর্মসংস্থানের হার যখন ৩২ শতাংশ বাংলাদেশে এই হার ১০ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এই খাতে নারীদের প্রাধান্য দিতে হবে। স্টেম শিক্ষায় উদ্বুদ্ধকরণ, দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে হবে নারীদের। এছাড়াও এই খাতে নারীদের অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধিতে নেটওয়ার্ক তৈরি করা দরকার। স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ে এই খাতে নারীদের ক্ষমতায়নে সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, একাডেমিয়া ও উন্নয়ন সংস্থার একসাথে সমন্বয়ে কাজ করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে- নারী ছাড়া আমরা সমাজ চিন্তা করতে পারি না। নারী ছাড়া কোনো চেঞ্জ সম্ভব নয়।’

অনুষ্ঠানে এসময় উন্নয়ন সহযোগী, জলবায়ুকর্মী, শিক্ষাবিদ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিসহ দেড় শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কুঁচিয়া বিক্রি করে সংসার চালান খোকন

আ.লীগ নেতার অন্তরঙ্গ ভিডিও ভাইরাল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির সুযোগ, আবেদন ফি ৩০০

বিশ্বসেরা কোচ, তবুও তারা কেন বেকার?

ইরানে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

ইরানের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের নাম ঘোষণা

অটোরিকশাচালকদের ওপর স্টিম রোলার চালাচ্ছে সরকার :  রিজভী 

২৫০০ অটোরিকশা চালকদের বিরুদ্ধে মামলা

নবীনদের চাকরি দিচ্ছে ওয়ালটন

দিনাজপুরে বোরো সংগ্রহের উদ্বোধন

১০

বাড়ি ফেরার পথে ট্রাকচাপায় নিহত ২

১১

শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটাল যুবলীগ নেতা

১২

বুনো হাতির তাণ্ডবে নির্ঘুম রাত কাটছে গ্রামবাসীর

১৩

ব্যাটারিচালিত রিকশা চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী : ওবায়দুল কাদের

১৪

অসাধারণ ক্লপের আবেগঘন বিদায়

১৫

বিএনপির হাত থেকে ইসলামকে রক্ষা করতে হবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

১৬

প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিবে ঢাবি শিক্ষক সমিতি

১৭

চাকরি দেবে নোমান গ্রুপ, আবেদন করুন শুধু পুরুষরা

১৮

টাকা নিতে অস্বীকৃতি, পোলিং অফিসারকে মারধর

১৯

দীপিকার নাম বদলে দিলেন রণবীর

২০
X