আজকের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিনে, হঠাৎ করে সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছবি শিবিরপন্থিরা যেভাবে ব্যবহার করল, সেটি প্রশ্নতো তুলবেই। প্রশ্ন হলো, শিবিরকে কে এই অনুমতি দিল? এবং আরেকটি বড় প্রশ্ন, শান্তিপূর্ণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এমন বিতর্কিত ইস্যু সামনে এনে অশান্ত করার কী দরকার ছিল?
বাংলাদেশের ইতিহাসে জামায়াত-শিবিরের নেতিবাচক রাজনৈতিক ভূমিকা বহুদিন চাপা পড়ে ছিল, যা নতুন প্রজন্মের অনেকে জানেও না। কিন্তু নিজেরাই নিজেদের কৃতকর্ম আবার সামনে টেনে আনছে, যেন ইতিহাস নিজেই নিজের মুখ খুলে কথা বলছে।
১) ১৯৭১ সালে দেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল জামায়াত।
২) ৯০-এর দশকে এরশাদবিরোধী গণআন্দোলন চলাকালীন সময়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন মোর্চা থেকে বের হয়ে গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেয় তারা, যা ছিল একটি বিভ্রান্তিকর সিদ্ধান্ত।
৩) ১৯৯৬ সালে মাত্র দুটি আসন পাওয়ার পর সংসদ থেকে পদত্যাগ করে, আবার হাসিনার সঙ্গে বসে কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে ভারতীয় প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী আন্দোলনে নেমেছিল জামায়াত।
৪) ২০০৮ সালে ১/১১-এর সেনাসমর্থিত সরকারের কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়ার প্রশ্নে বিএনপি যখন দ্বিধায় ছিল, তখন জামায়াত নেতারা খালেদা জিয়াকে রাজি করিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণে সম্মত করায়। সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত শুধু জামায়াত নয়, করতে হয়েছে গোটা দেশকে।
এরপর থেকেই বাংলাদেশে ভারতীয় প্রভাব ক্রমেই জেঁকে বসে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন, ২০১৮ সালের রাতের ভোট এবং ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির সাজানো নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ একের পর এক ক্ষমতা ধরে রাখে। এসব নির্বাচনের পরিণতিতে গুম-খুন-ক্রসফায়ার-হামলা-মামলার দুঃসহ অধ্যায় শুরু হয়, যা সমগ্র জাতির গলায় শেকল পরিয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে ছাত্রশিবির বা জামায়াতের উচিত ছিল আত্মসমালোচনার জায়গা তৈরি করা, নিজেদের অতীত ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া। বরং তারা বিতর্কিত প্রতীককে সামনে এনে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্পর্শকাতর জায়গায় অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনার জন্ম দিচ্ছে।
যে তরুণরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, যারা আজকের প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের প্রতীক তাদের ত্যাগকে সম্মান জানানো উচিত সব রাজনৈতিক শক্তির। গোপনে রাজনীতি করে সুবিধা নেওয়ার দিন শেষ। ইতিহাস কাউকে ছাড় দেয় না।
শিবিরের উচিত আজ introspection করা! কিন্তু তারা কি আবার সেই পুরোনো ভুলের পথে হাঁটছে?
লেখক : মামুন খান, সাবেক সহসভাপতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কেন্দ্রীয় সংসদ
মন্তব্য করুন