

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর, ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছিল। এই বিজয় দিবস বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে আত্মমর্যাদা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবে উজ্জ্বল হয়ে আছে। একই সময়ে, বিশ্বের অন্য প্রান্তে-বিশেষত ফিলিস্তিন ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে-এমনই নিপীড়িত জনগোষ্ঠীগুলো আজও তাদের নিজস্ব ‘বিজয় দিবস’-এর জন্য অপেক্ষা করে চলেছে। এই বৈপরীত্যের মূল কারণ নিহিত রয়েছে নেতৃত্ব, আন্তর্জাতিক সমর্থন এবং রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে। তখন তা কেবল একটি ৯ মাসের যুদ্ধের সমাপ্তি ছিল না; তা ছিল এক দূরদর্শী ও সাহসী নেতৃত্বে একটি পরাধীন জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত বিজয়।
ফিলিস্তিনি ও রোহিঙ্গারা দীর্ঘকাল ধরে রাষ্ট্রবিহীন জনগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। ফিলিস্তিনিদের সংগ্রাম ১৯৪৮ সালের নাকবা বা বিপর্যয়ের পর থেকে শুরু হয়, যখন ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ফলে লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয় এবং পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সামরিক জান্তার অধীনে পদ্ধতিগত বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন তাদের রাষ্ট্রহীন করে দেয় এবং ২০১৭ সালের সামরিক দমন-পীড়নের ফলে প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এই দুটি জনগোষ্ঠীরই মুক্তির তীব্র আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, কিন্তু তাদের এই সংগ্রাম একটি সার্বভৌম ‘বিজয় দিবস’ অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। বাঙালি জাতি সুদীর্ঘ ২৪ বছর ধরে পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক শাসন, অর্থনৈতিক শোষণ ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার হয়েছে। এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে জনমত গঠন এবং জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজটি অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, অন্যান্য জাতীয় নেতৃত্ব, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী, সেক্টর কমান্ডার বীর উত্তম জিয়াউর রহমান সহ সকল সেক্টর কমান্ডার, বিরাঙ্গনা, সকল মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামি জনগণ।
ফিলিস্তিনিদের ক্ষেত্রে, তাদের সংগ্রাম বিভিন্ন সময়ে ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা (পিএলও) এবং পরবর্তীকালে হামাস ও ফাতাহ-এর মতো বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছে। ইয়াসির আরাফাতের মতো বিশ্বজুড়ে পরিচিত নেতা থাকলেও, ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রায়শই অভ্যন্তরীণ বিভেদ, আদর্শগত পার্থক্য এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক চাপের কারণে একটি ঐক্যবদ্ধ ও অবিচল অবস্থানে পৌঁছাতে পারেনি। এছাড়া, ইসরায়েল ও তার শক্তিশালী মিত্রদের বিরুদ্ধে শক্তির ভারসাম্যহীনতা একটি বড় কারণ।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে নেতৃত্বের সংকট আরও প্রকট। তারা মিয়ানমারের ভেতরে এতটাই প্রান্তিক ও বিচ্ছিন্ন ছিল যে, তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা বা একটি একক নেতৃত্ব বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়নি। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)-এর মতো বিচ্ছিন্ন কিছু সশস্ত্র গোষ্ঠীর উত্থান হলেও, তা ব্যাপক জনসমর্থন এবং আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের আন্দোলন মূলত টিকে থাকার সংগ্রাম এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ন্যায়বিচার চাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমর্থন একটি নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। সক্রিয় কূটনৈতিক সমর্থন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটো ক্ষমতা জাতিসংঘে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করেছিল।
ফিলিস্তিন ও রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে এই সমর্থন খণ্ডিত। মুসলিম বিশ্বের সমর্থন থাকলেও, তা কার্যকর কূটনৈতিক বা সামরিক সহায়তায় রূপ নেয়নি। বৃহৎ শক্তিগুলো মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতি এবং মিয়ানমারের অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে বিভক্ত ছিল, যা এই জনগোষ্ঠীগুলোর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্নকে জটিল করে তুলেছে।
গাজা এবং রোহিঙ্গা পরিস্থিতির সাথে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের তুলনা করা অত্যন্ত জটিল এবং প্রতিটি ঘটনার নিজস্ব ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক মাত্রা রয়েছে। তবে সর্বক্ষেত্রে বাংলাদেশের পরিস্থিত গাজাবাসী এবং রোহিঙ্গাদের তুলনায় অনেক বেশি নাজুক ছিল। এই পরিস্থিতিগুলো বিশ্লেষণের জন্য আমার দৃষ্টিকোণ থেকে একটি দৃশ্যপট নিচে তুলে ধরা হলো, যা আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় রাজনীতির বৈসাদৃশ্য প্রতিফলিত করবে বলে আমার বিশ্বাস।
কল্পনা করুন, জেনেভার আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক একটি গোলটেবিল আলোচনা চলছে। আলোচকরা হলেন একজন ফিলিস্তিনি কূটনীতিক, একজন রোহিঙ্গা অধিকার কর্মী, একজন দক্ষিণ এশীয় ইতিহাসের অধ্যাপক এবং একজন আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ।
ফিলিস্তিনি কূটনীতিক - আমাদের জনগণ বছরের পর বছর ধরে দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়ছে। যখনই আমরা প্রতিরোধের কথা বলি, আন্তর্জাতিক মহল আমাদের ‘সন্ত্রাসী’ বা বিচ্ছিন্নতাবাদী তকমা দেয়। এই তকমা আমাদের বৈধ স্বাধীনতা সংগ্রামকে দুর্বল করে দেয় এবং আমাদের নেতৃত্বকে আন্তর্জাতিক আলোচনা থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।
রোহিঙ্গা অধিকার কর্মী - মিয়ানমারে আমাদের জাতিগত নিধনযজ্ঞ চলছে। আমাদের কাছে আত্মরক্ষা ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু বিশ্ব আমাদের আন্দোলনকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ বা উগ্র হিসেবে দেখে, কারণ আমাদের পক্ষে কোনো শক্তিশালী রাষ্ট্রের সমর্থন নেই। আমাদের নেতৃত্বের কণ্ঠস্বর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে পৌঁছায় না।
দক্ষিণ এশীয় ইতিহাসের অধ্যাপক - ১৯৭১ সালের প্রেক্ষাপটটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। এটি ছিল একটি ঔপনিবেশিক কাঠামো থেকে বেরিয়ে আসা একটি ন্যায্য সংগ্রাম, যেখানে বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের নেতৃত্ব জনগণের ম্যান্ডেট পেয়েছিলেন। তাদের রাজনৈতিক বৈধতাকে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা কঠিন ছিল, কারণ তারা নির্বাচিত ছিলেন।
আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ - মূল পার্থক্য হলো ‘বৈধতা’ এবং ‘আন্তর্জাতিক সমর্থন’। গাজা বা আরাকানের কিছু গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রায়শই তাদের কৌশলগত কারণে বিচ্ছিন্নতাবাদী বা উগ্রবাদী হিসাবে চিহ্নিত করে, যা তাদের রাজনৈতিক প্রভাব সীমিত করে দেয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, আন্দোলনটি একটি গণঅভ্যুত্থান এবং সুনির্দিষ্ট আইনি ও রাজনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছিল, যা আন্তর্জাতিক আইন ও বিশ্ব জনমতকে প্রভাবিত করেছিল। নেতৃত্বের শক্তি কেবল ব্যক্তিগত ক্যারিশমা নয়, বরং জনগণের ঐক্যবদ্ধ সমর্থন এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির সাফল্য।
এই দৃশ্যপটটি মূলত তুলে ধরে যে কোনো আন্দোলনকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ বলা হবে নাকি 'স্বাধীনতা সংগ্রাম' বলা হবে, তা প্রায়শই নির্ভর করে নেতৃত্বের প্রজ্ঞা বা বিচক্ষণতা - যার ওপর নির্ভর করে রাজনৈতিক স্বার্থ, আন্দোলনের রাজনৈতিক বৈধতা এবং আন্তর্জাতিক জনমত গঠনের ক্ষমতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে এই বৈধতা আদায় করে নিয়েছেন এবং বাংলাদেশকে এক ছাতার নিচে সমবেত করতে সক্ষম হয়েছেন। যা ফিলিস্তিন এবং রোহিঙ্গাদের কোনো নেতা করতে পারে নাই।
গাজা এবং রোহিঙ্গা সংকট, উভয়ই গভীর মানবিক দুর্দশার প্রতীক, যা লক্ষ লক্ষ মানুষকে মৌলিক চাহিদা এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবন থেকে বঞ্চিত করেছে। ’৭১-এর বিজয়ের আবেগময় প্রেক্ষাপট এই দুর্দশার চিত্রকে আরও স্পষ্ট করে তোলে, যেখানে নেতৃত্ব ও ঐক্যের শক্তি একটি জাতির ভাগ্য বদলে দিয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে একটি আবেগঘন ঘটনা হলো, উখিয়ার কুতুপালং শিবিরে এক রোহিঙ্গা মায়ের তার সন্তানের কাছে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলা : কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে বাঁশ আর প্লাস্টিকের ছাউনিতে ঢাকা এক ঝুপড়ি ঘর। বাইরে বর্ষার কর্দমাক্ত পরিবেশ, ভেতরে টিমটিম করে জ্বলছে সোলার লাইট। ফাতেমা (৪০), এক রোহিঙ্গা মা, তার ছোট ছেলে ইসমাইলকে (১০) কোলে বসিয়ে ফিসফিস করে বলছেন এক বিজয়ের গল্প।
গল্পটা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। ফাতেমা জন্মেছেন আরাকানে, কিন্তু তার বাবা তাকে শোনাতেন ৭১-এর কথা, যখন তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ফাতেমা ইসমাইলকে বলেন, জানো বাবা, এই যে দেশটা দেখছ, বাংলাদেশ, এটা একদিন পরাধীন ছিল। মানুষেরা আমাদের মতোই ঘরছাড়া হয়েছিল, হারিয়েছিল সব কিছু। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা এত বেশি মন্দা ছিল যে, একটি মাত্র পোশাক দিয়ে পরিবারের সাত জন সদস্য প্রতিদিন পাল্টাপাল্টি করে নামাজ পড়তে হত। কিন্তু তাদের একজন নেতা ছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আর ছিল অদম্য সাহস। ফাতেমার চোখ ভিজে আসে। তিনি বলেন, আমার বাবা বলতেন, যখন সবাই এক হয়েছিল, যখন প্রতিটি মানুষ বিশ্বাস করেছিল যে তারা পারবে, তখন তারা জয়ী হয়েছিল। লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে তারা স্বাধীনতা পেয়েছিল।
ইসমাইল মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার নিষ্পাপ চোখে অনেক প্রশ্ন। সে জিজ্ঞেস করে, মা, আমাদের নেতা কে? আমরা কবে ফিরে যাব আমাদের আরাকানে? আমরা কবে জয়ী হবো?
ফাতেমা ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন। তার কাছে এর কোনো উত্তর নেই। ’৭১-এর বিজয়ের গল্প তাকে সাহস জোগালেও, নিজেদের বর্তমান পরিস্থিতি তাকে অসহায় করে তোলে। গাজায় অনাহার ও মৃত্যুর মিছিল এবং রোহিঙ্গা শিবিরের এই মানবেতর জীবন-উভয় ক্ষেত্রেই অভাব হলো সেই ঐক্যের, সেই নেতৃত্বের, যা একটি জাতিকে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে।
’৭১-এর আবেগঘন স্মৃতি রোহিঙ্গাদের মনে আশার সঞ্চার করলেও, বাস্তবতার কঠিন জমিনে তারা আজও বিজয়ের সূর্যোদয়ের অপেক্ষায়। এই অপেক্ষার বেদনা, আর বিজয়ের গল্পের পার্থক্যই গাজা ও রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকটের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি।
আজ যখন আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিই, তখন গভীর বেদনাবোধ ও সহানুভূতির সাথে বিশ্বজুড়ে শোষিত ও পরাধীন অন্যান্য জনগোষ্ঠীর দিকে তাকাই, যারা আজও স্বাধীনতার সূর্য দেখতে পায়নি। যেমন, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার জনগণ এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী-তাদের জীবন আজও পরাধীনতার গøানি ও চরম মানবিক সংকটে আবর্তিত।
আমার এই লেখনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বা গাজাবাসীকে তাচ্ছিল্য করা নয়। বরং আমি আশাবাদী একদিন স্বাধীন ফিলিস্তিন-এর পতাকা ফতফত করে উড়বে। রোহিঙ্গা বা গাজার মানুষেরা হয়তো ভৌগোলিক বা রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে বাংলাদেশের মতো একটি সুসংগঠিত, ঐক্যবদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি, কিংবা তাদের নেতৃত্ব বিভিন্ন ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তবে তাদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগকে কোনোভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। তাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথটি হয়তো ভিন্ন এবং আরও জটিল।
বাংলাদেশের বিজয় দিবস কেবল সামরিক বিজয়ের উদযাপন নয়, এটি একটি জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যোগ্য নেতৃত্বে সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল। এক ঝাঁক সাহসী, সৎ ও মেধাবী নেতা, যারা মৃত্যুকে ভয় না করে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তারাই পারেন একটি পরাধীন জাতিকে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে।
ফিলিস্তিনি ও রোহিঙ্গারা চরমভাবে নির্যাতিত হলেও, একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব, সুসংগঠিত আন্দোলন এবং অনুকূল আন্তর্জাতিক পরিবেশ তারা আজও পায়নি। তাই, ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, মুক্তি ও বিজয় অর্জনে প্রয়োজন সঠিক সময়ে সঠিক নেতৃত্ব এবং জাতির সম্মিলিত আত্মত্যাগ। যতদিন না ফিলিস্তিন ও রোহিঙ্গারা এই উপাদানগুলো একত্রিত করতে পারছে, ততদিন তাদের জন্য ‘বিজয় দিবস’ কেবলই এক অধরা স্বপ্ন হয়ে থাকবে।
লেখক : ড. মো. আনোয়ার হোসেন, প্রাবন্ধিক, কথা সাহিত্যিক, প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী সংগঠন ফ্রিডম ইন্টারন্যাশনাল এন্টি অ্যালকোহল।
মন্তব্য করুন