রুমিন ফারহানা
প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:৩৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
রুমিন ফারহানা

আওয়ামী লীগ গণদাবিকে উপেক্ষা করলে বড় ভুল করবে

বিএনপির সমাবেশ। ছবি : সংগৃহীত
বিএনপির সমাবেশ। ছবি : সংগৃহীত

২৮ অক্টোবরে বিএনপির মহাসমাবেশে সমগ্র দেশের মানুষ যেভাবে সাড়া দিয়েছে সেটি নতুন ইতিহাস তৈরি করা হয়েছে। পথে পথে তল্লাশি চালানো হয়েছে। গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘরোয়া বৈঠক থেকেও আমাদের নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নির্যাতন-দমনপীড়ন চলছে সমানতালে। পুরোনো মামলা ও নতুন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বহু বিএনপি কর্মীদের। পুরোনো মামলায় অনেককে নতুন করে আসামি করা হয়েছে।

সব প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে বিএনপির মহাসমাবেশস্থল জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। দুপুরের আগেই কাকরাইল মোড় পার হয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন ছাড়িয়ে পড়েছে। তখনোও সমাবেশ শুরু হয়নি। সমাবেশের আগের রাত থেকেই আমাদের নেতাকর্মী ও জনগণ সমাবেশস্থলে অবস্থান নিয়েছে। পুরো এলাকা জনস্রোতে পরিণত হয়েছে। সেই সঙ্গে আমাদের দাবির সঙ্গে একাত্ম প্রকাশ করে অন্যান্য রাজনৈতিক দল পথে নেমে এসেছে। তাদের সমাবেশেও বিপুল মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

জামায়াতে ইসলামী মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার অনুমতি পায়নি। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাদের বিপুল নেতাকর্মী সংশ্লিষ্ট স্থানে জড়ো হয়েছে। সরকার দৌদুল্যমান অবস্থায় ভুগছে। সভাস্থলে যে পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত রয়েছে জামায়াতের নেতাকর্মী ও জনগণের সংখ্যা তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। তাদের আটকে রাখাও সম্ভব নয়। বেলা ১০টার সময় থেকেই জামায়াতের নেতাকর্মীরা পথে নেমে এসেছে। বিএনপির সমাবেশস্থলে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে এরই মধ্যে।

সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে, মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিয়েছে। কোনো লাভ হয়নি। মানুষ ফুটপাতে ঘুমিয়েছে, সিঁড়িতে ঘুমিয়েছে, রাস্তায় থেকেছে। কৃষক, শ্রমজীবী মানুষরা রাস্তায় নেমে এসেছে। জনগণের বাধা বন্ধ করার কোনো শক্তি এ সরকারের নেই। আমি সরকারকে একটি উপদেশই দিব, ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যায়, সময় এখন ভালো না।’ সরকারের এখন পালিয়ে যাওয়ার সময়। সরকারের এখন সু-সময় নয়।

বিএনপির মহাসমাবেশ

বিএনপি আগেই ২৭ অক্টোবরের মধ্যে সরকারের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছিল। সরকার সে দাবি না মানলে বিএনপি তাদের পতনের জোরাল আন্দোলনে যাবে। দেশের আনাচে কানাচে থেকে মানুষ ঢাকায় এসে সমবেত হয়েছে। মানুষের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরিস্থিতি। তারা এখন মৃত্যুকেও ভয় করে না। সেই মানুষ কিন্তু খুবই ভয়ংকর যারা মৃত্যুর পরোয়া করে না। তারাই এখন ঢাকায় সমবেত হয়েছে। বিএনপির পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে সেটি সময়ই নির্ধারণ করে দেবে। সময়ই ঠিক করবে আমাদের আন্দোলন কোনো গতিতে কোনো পথে এগোবে।

সরকারের ভূমিকা

সরকার যদি সহিংসতা ও সংঘর্ষ তৈরি করে তাহলে সহিংসতা হবে। বিএনপির নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে ইতোপূর্বেই প্রমাণ করেছি মানুষকে সমবেত করে শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায় করা যায়। আমাদের আগের আন্দোলনগুলোর প্রতিটি ছিল শান্তিপূর্ণ। গত এক বছরে সরকারের বাহিনী ২৪ জন নেতাকর্মীকে গুলি করে মেরেছে। আমাদের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে নতুন ও পুরাতন মামলায় জেলে দিয়েছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। সরকার যদি মনে করে এক লাখ বা দেড় লাখ পুলিশ ও তাদের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে বা তাদের কিছু সুবিধাভোগীদের দিয়ে আন্দোলনকে দমন করতে পারবে, তাহলে আওয়ামী লীগ তার জীবনদ্দশায় সবচেয়ে বড় ভুল করবে।

সরকার আমাদের সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তার করছে। খায়রুল কবির খোকনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রুহুল কুদ্দুস দুলু, এ্যানি ভাইসহ অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমানুল্লাহ ভাইকে আগেই গ্রেপ্তার করে জেলে রাখা হয়েছে। রুহুল কুদ্দুস দুলু ভাইকে আদালত বলছে আপনার ক্যান্সার হলে আপনি সভা-সমাবেশে যোগদান করেন কীভাবে। একটি দেশ ও তার নির্বাহী বিভাগ নষ্ট হয়ে গেলে এ ধরনের মন্তব্য করতে পারে। রাতে কোর্ট বসিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা ও রায় দেওয়া হচ্ছে। এসব দুঃখজনক ঘটনার জন্ম আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে দিয়েছে। এর পরিণতি আওয়ামী লীগকে ভোগ করতে হবে।

আলোচনার পরিবেশ

আমাদের আন্দোলন ও আলোচনার একটি এজেন্ডা এই সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার কীভাবে গঠিত হবে, তাদের দ্বারা গঠিত হবে, কতদিন তারা ক্ষমতায় থাকবে, কতদিনের মধ্যে নির্বাচন হবে ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। সরকার পদত্যাগ করে কার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে সেটি নিয়েও আলোচনা হতে পারে। ১৯৯০ সালে দায়িত্বপালনরত প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে এসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করে নির্বাচন আয়োজন করা হয়েছিল। সব দলের ঐকমত্যে সেটি সম্ভব হয়েছে। এবারও নিশ্চয়ই সম্ভব হবে।

আগামী কর্মসূচি

সরকার আমাদের সমাবেশে বাধা দিলে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে বিএনপি। সরকার শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে দিলে পরিস্থিতি ও কর্মসূচি এক রকম হবে। সরকার সব রকম প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে বিএনপির আন্দোলন দমানোর। আওয়ামী লীগ তার ৭০ বছরের জীবনদ্দশায় সবচেয়ে বড় ভুল করবে যদি তারা আজকের গণদাবিকে উপেক্ষা করে।

রুমিন ফারহানা : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সহআন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক।

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

প্রবাসী কর্মীর প্রতিবন্ধী সন্তানদের ভাতার জন্য আবেদন শুরু

এপোস্টল কনভেনশন স্বাক্ষর অনুমোদন / বছরে সাশ্রয় হবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা 

মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে রাইসি যা বলেছিলেন

জনগণ আর ভোটারবিহীন নির্বাচন হতে দেবে না : বিপিপি

‘ইব্রাহিম রাইসি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদান রেখেছেন’

স্নাতক পাসে অফিসার পদে চাকরি দেবে ব্র্যাক ব্যাংক

বিআরটিসির ২৯৮তম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত

বিএনপির ৩ নেতাকে শোকজ

রাইসির আত্মার মাগফিরাত কামনায় সৌদি বাদশাহ

দৈনিক কালবেলায় সংবাদ প্রকাশের পর শারমিনের পাশে দাঁড়ালেন ইউএনও

১০

শক্তিশালী ব্যালেন্স শিট প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে লক্ষ্যণীয় সাফল্য অর্জন ব্র্যাক ব্যাংকের

১১

১৫৭ উপজেলায় কাল ভোট, ইভিএমে ২৪টি

১২

বজ্রপাতে নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু

১৩

অটোরিকশাচালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে : প্রধানমন্ত্রী

১৪

চাঁদার ৫০ টাকা না পেয়ে হত্যা, ৮ বছর পর যাবজ্জীবন

১৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যমুনা ইলেকট্রনিক্সের শোরুম উদ্বোধন

১৬

নির্বাচনের পর আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে সরকার : ফখরুল

১৭

ইরানের সরকার আসলে কীভাবে পরিচালিত হয়?

১৮

আরও ২২ জন করোনা শনাক্ত

১৯

ঢাকায় ম্যানেজার পদে চাকরি দেবে বিকাশ

২০
X