মোঃ তাইমুর হোসেন
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৪৬ পিএম
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৪২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রাজনীতিতে শিক্ষিত ও সমাজসচেতন মানুষের অংশগ্রহণ জরুরি

ছবি : সৌজন্য
ছবি : সৌজন্য

ক্রিকেটে দ্বাদশ খেলোয়াড় বলে একটা ধারণা আছে। যিনি নরম্যালি টিমের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। অন্য খেলোয়াড়দের মতো তার ওপর চাপ থাকে না। কিন্তু, সর্বক্ষণ সতীর্থদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে তিনি তৎপর থাকেন। কখনো ঘটনাচক্রে কারো প্রক্সি দেওয়ার প্রয়োজন হলে, তাকে সক্রিয় হতে দেখা যায়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দেশের জনগণের ভূমিকা অনেকটা দ্বাদশ খেলোয়াড়ের মতো। ব্রিটিশ আমলে এ দেশের মানুষ তাদের সমাজ জীবনে ব্রিটেনের মানুষের উপস্থিতি খুব একটা দেখেননি। দেখার কথাও না।

প্রশান্ত মহাসাগর পেরিয়ে সব ব্রিটেনবাসী ভারতে আসেননি, আসার কথাও না। প্রথমে বাণিজ্য, তারপরে ধর্মপ্রচারকগণ এবং সবশেষে আসে সৈন্যরা। স্থানীয় জনসাধারণের নির্লিপ্ততা তাদের রাজনীতিতে সক্রিয় করে এবং কালক্রমে তারা ক্ষমতার প্রধান উৎসে পরিণত হন।

ব্রিটিশদের উপস্থিতি ছিল কেবল অফিসিয়ালি। অর্থাৎ প্রশাসনের কর্তাস্থানীয় পদগুলোতে ব্রিটিশদের দখল ছিল। আইনকানুন তারা তৈরি করত। সিদ্ধান্ত গ্রহণের একক স্বৈরাচারী ক্ষমতাও ছিল কেবল তাদের। ফলে দেশের মানুষ তাদের সমাজ জীবনে ছিল নিজেদের মতো। সামাজিক কিন্তু, রাজনীতি বিমুখ। কোনো বহিঃশক্তির উপস্থিতি তাদের বিচলিত করতে পারেনি। পাকিস্তান আমলেও ব্যাপারটা অনেকটা তেমনই ছিল। বাড়তি ছিল, স্থানীয় কিছু সুযোগ সন্ধানী গোষ্ঠী। যারা পাকিস্তানি শোষণ আরও মজবুত করতে সদা সক্রিয় ছিলেন। বিনিময়ে তারা পেয়েছিলেন ক্ষমতাশালীদের নৈকট্য।

দেশ স্বাধীন হবার পরেও অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন ঘটেনি। এখনো দেশের মানুষ একইরকম রাজনৈতিক বিমুখ রয়ে গেছেন। সবাই নিজের সামাজিক গণ্ডির ছোট্ট পৃথিবীতে আটকে আছে। ক্ষুদ্র স্বাধীনতা নিয়ে সুখী। রাজনীতি এখনো অন্যদের কাজ, নিজেদের তা নিয়ে হয়রান হবার কিছু নেই। দেশ বা জাতির ধারণা আজও আমাদের কাছে বিদেশি শব্দ। তার প্রতিক্রিয়ায় হচ্ছে দুর্নীতি। ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময়, লোক দেখানো হলেও -তার মুখোশ কিছুটা উন্মোচিত হয়েছিল। কিন্তু, রাজনৈতিক সরকারগুলো সবসময় এক্ষেত্রে আপসকামী।

রাজনীতি একটি দর্শন। শুধু ব্যক্তি না, এটি সমষ্টির দর্শন। ভারত উপমহাদেশের রাজনীতিতে বাইরের হস্তক্ষেপ নতুন না, একটি প্রাচীন সংস্কৃতি। ইন্দ্রা গান্ধী ১৯৭৫ সালে একবার সংবিধান স্থগিত করে সামরিক শাসন জারি করেছিলেন। সে সময় ইন্ডিয়া সারাবিশ্বের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। মিসেস গান্ধী একটি কনফারেন্সে বক্তৃতায় বলেছিলেন, 'সামষ্টিক মানসিকতার মৌলিক পরিবর্তন না ঘটলে উন্নয়ন বৃথা।'

এক সময় আমাদের পূর্ব পুরুষদের জাতীয় সংগীত ছিল, 'Long live our king...’ । তারপরে হয়ছিল, ‘পাকসার জমিন সাদবাদ...'। তারপরে স্বাধীন দেশে আমাদের নিজেদের মাতৃভাষায় জাতীয় সংগীত পেয়েছি। আরও অনেক কিছু। মানে আগের মতোই বাংলাদেশ is going on।

কিন্তু, আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পর্বে শুধু ইংরেজ না। প্রায় সহস্রাব্দের ইতিহাসে বারবার বাইরের আক্রমণের শিকার হয়েছি। এখন, আমরা সহজে বলে থাকি আমাদের প্রধান সমস্যা রাজনৈতিক অথবা অর্থনৈতিক। কিন্তু না, আমাদের প্রধান সমস্যা বুদ্ধিবৃত্তিক (Intellectual)। ইন্ডিয়া স্বাধীনতার দুই দশক পড়েই তা উপলব্ধি করেছিল। কিন্তু, আমরা পাঁচ দশক পড়েও তা পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি। গান্ধীর অহিংস মানে নির্লিপ্ততা না। কিন্তু, আমরা ভবিতব্যের ওপর সব দায় চাপিয়ে, হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার শপথে বদ্ধপরিকর। এতে বাইরের লোকেরা আরও বেশি দাদাগিরি করতে আসবে, আর আমরা নির্লিপ্ততা দিয়ে তাকেই সাধুবাদ জানাব।

চলতি অবস্থার অবসান অতীব জরুরি। সমাজ সচেতন মানুষের রাজনৈতিক চর্চা এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন স্তরে অংশগ্রহণমূলক সংগঠন সৃষ্টি করার মাধ্যমে তা সম্ভব। এর মাধ্যমে তৈরি হবে সময়োচিত সামাজিক নেতৃত্ব। চিহ্নিত করা যাবে জাতির প্রকৃত সমস্যা। সন্ত্রাসীনির্ভর প্রহসনের নির্বাচন নয়, নিশ্চিত হবে জনসম্পৃক্ত অংশগ্রহণমূলক জাতীয় সংসদ। জনগণের সুযোগ্য নেতৃত্ব বয়ে আনবে আগামীর সমৃদ্ধি। ব্যাপারটা যত দ্রুত রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আলোচনায় আসে, ততই তা জাতির জন্য মঙ্গলজনক।

মো. তাইমুর হোসেন : ব্যাংক কর্মকর্তা

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]
কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

চাল না পেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভুক্তভোগীরা

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে : আব্দুল হালিম

গণসংহতি আন্দোলনের কার্যালয়ের পাশে ককটেল বিস্ফোরণ, তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ

আগামী বছরের শুরুতেই নির্বাচন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ড. ইউনূস

স্ত্রী-সন্তানসহ প্রবাসীর মৃত্যু, কেয়ারটেকারকে ঘিরে সন্দেহ

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ

শাহজালাল বিমানবন্দরে অতিরিক্ত নিরাপত্তায় ৬ নির্দেশনা

খালসহ ১০টি জলমহাল উন্মুক্ত করলেন খুলনার জেলা প্রশাসক

৩০ আগস্ট ইতালির প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় আসছেন

জুলাই শহীদদের স্মৃতি স্মরণে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন

১০

বছর ঘুরে ফিরল সেই জুলাই 

১১

৩৬ জুলাই বিপ্লব ও নির্মম নির্যাতনের মধ্যেও বেঁচে ফেরার গল্প

১২

৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ / এস আলম পরিবারের তিন সদস্যসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে দুই মামলা

১৩

খুবির দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনকে কটাক্ষের অভিযোগ

১৪

রাজশাহীতে ঐতিহাসিক ‘সান্তাল হুল’ দিবস উদযাপন

১৫

২৯৫ জন অস্থায়ী কর্মীকে স্থায়ী করল চসিক

১৬

যে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করলেন ইউনূস-রুবিও

১৭

করোনার ‘ভুল রিপোর্ট দিয়ে প্রতারণা’, অতঃপর...

১৮

ইরানে একাধিক ইউরোপীয় নাগরিক গ্রেপ্তার

১৯

ঢাবি শিক্ষার্থী সৌমিকের মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা

২০
X