খালেদা জিয়া গত সাড়ে চার বছরে বিভিন্ন সময়ে ৪৭৯ দিন বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।
তিনি জানান, দীর্ঘ সময় বিমানে চড়ার ‘নেগেটিভ প্রেসার’ (নেতিবাচক চাপ) সহ্য করার মতো শারীরিকভাবে সুস্থ হলেই ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির দুই দিনের কর্মসূচি নিয়ে অঙ্গ সংগঠনের সাথে সমন্বয় সভা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহিদ এ কথা জানান।
এদিকে ‘ফিরোজা’য় হঠাৎ অসুস্থবোধ করায় খালেদা জিয়াকে মাঝরাতে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে প্রাইভেট কারে রওনা হয়ে রাত পৌনে দুইটার দিকে হাসপাতালে পৌঁছান তিনি।
বিএনপির মিডিয়া সেল সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া বুধবার রাতে বাসায় হঠাৎ অসুস্থবোধ করতে থাকেন। এর আগে কয়েকদিন ধরে তার জ্বর জ্বর ভাব ছিল। এমন পরিস্থিতিতে মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে বেগম জিয়াকে মাঝরাতে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য জানান, ম্যাডামকে কয়েকদিন হাসপাতালে থাকতে হতে পারে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ডা. জাহিদ হোসেনের বরাত দিয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, বেগম খালেদা জিয়া মেডিকেল বোর্ডের সার্বিক তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এর আগে বুধবার রাত ২টার দিকে ডা. জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাতে ম্যাডামকে এভারকেয়ার হাসপাতালে আনা হয়েছে। বোর্ড ওনার বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েছে। সেগুলোর রিপোর্ট পর্যালোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে মেডিকেল বোর্ড।’
খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছানোর পর সেখানে তার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা ছাড়াও বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, দলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসক জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) গত সাড়ে চার বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে ৪৭৯ দিন এভারকেয়ার হাসপাতালে ছিলেন। আমরা উনাকে ২১ আগস্ট বাসায় নিয়ে এসেছিলাম।
তিনি বলেন, গতকাল (বুধবার) আবার ওনাকে ভর্তি করতে হয়েছে। কথা আসবে, আপনারা ওনাকে বাইরে নিচ্ছেন না কেন? একজনকে বাইরে নিতে হলে শারীরিক সুস্থতা প্রয়োজন, প্লেনে উঠতে হলে নেগেটিভ প্রেসার সহ্য করার মতো সুস্থতা থাকতে হয়। ল্যান্ড করার সময়ে কতটুকু উনি সহ্য করতে পারবেন, সেটি গল্পের বিষয় না। সেটি একাডেমিক, প্রফেশনাল ও সায়েন্টিফিক বিষয়।
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করছে। শারীরিকভাবে তিনি একটু সুস্থ হলেই তাকে যত দ্রুত সম্ভব উন্নত সেন্টারে ফলোআপের জন্য বাইরে নেওয়া হবে।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ডা. জাহিদ অভিযোগ করেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে জেলে নেওয়ার পর একাকিত্ব, চিকিৎসা না করানো এবং তাকে ধীরে ধীরে সংকটাপন্ন একটা অবস্থায় রেখে দেওয়ার বিষয়টি বিগত সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অংশ ছিল।
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিল; কিন্তু বিএসএমএমইউতে যে চিকিৎসা হওয়া উচিত ছিল, তা সঠিকভাবে হয়নি। সে কারণে তার (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা এই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে কয়েক দিন পরপর তাকে হাসপাতালে নিতে হচ্ছে।
এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুদারের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন আছেন। ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস ও কিডনি জটিলতা, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন।
তিনি বলেন, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসনের রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয় ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে তার রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তখন তার স্বাস্থ্য কিছুটা স্থিতিশীল হলে পাঁচ মাসের বেশি সময় হাসপাতালে থাকার পর বাসায় নেওয়া হয়। পরে আবার অসুস্থ হলে চলতি বছর ২৫ জুন এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়।
তারও আগে সবশেষ গত ৮ জুলাই গভীর রাতে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে। এরপর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে সাজামুক্ত বিএনপি চেয়ারপারসন এক মাস ১২ দিন পর গত ২১ আগস্ট বাসায় ফেরেন। তখন থেকে তার চিকিৎসা বাসায় চলছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতেও চেষ্টা চলছে।
মন্তব্য করুন