বাজেটের আকার কমলেও গুণগত দিক থেকে খুব বেশি পরিবর্তন নাই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ।
সোমবার (২ জুন) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ বাজেটের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করেন ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।
তারা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটকে জন-আকাঙ্ক্ষা সমন্বয় করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে বাজেটের আকার কমলেও গুণগত খুব বেশি পরিবর্তন নাই। উচ্চ আকাঙ্ক্ষা বা লুটপাটের উন্নয়নে বরাদ্দ হ্রাস করায় জনগণের ওপর চাপ কিছুটা হলেও হালকা হবে।
দলটির নেতারা বলেন, বরাবরের মতো এবারের বাজেটও বিগত সরকারগুলোর ধারাবাহিকতাকে পাশ কাটাতে পারে নাই। বাজেটের আকার আরও ছোট হলে বাস্তবায়ন করা সহজ হতো। প্রকৃতপক্ষে বাজেটের আকার কমলেও পুরোনো কাঠামো অক্ষুণ্ন রয়েছে।
নেতৃদ্বয় বলেন, গত ১৬ বছরে প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আকার বৃদ্ধি পেলেও দেশের অর্থনীতি কয়েক বছর ধরেই মন্দা সময় পার করেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দিশেহারা সাধারণ জনগণ। ডলার সংকট, রিজার্ভের বড় ক্ষয়সহ বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও কঠিন সংকট ছিল বাংলাদেশ। ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সকল বাজেটই ছিল কল্পনার ফানুস মাত্র।
তারা বাজেটে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি না করা, চিনি-সয়াবিন তেলের দাম কমানোর প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এর ফলে মধ্যবিত্ত ও সাধারণ জনগণের উপর চাপ অনেকটা হ্রাস পাবে। তবে, ফ্রিজ, এসির উপর ভ্যাট বৃদ্ধি করায় অনেকটাই সমস্যা সৃষ্টি করবে। বাজেটে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহতদের পুনর্বাসন ও কল্যাণে বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব ও বয়স্ক, বিধবা ভাতা বৃদ্ধি করার প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য। তবে, দেশীয় টেক্সটাইল মিলে উৎপাদিত সুতার ভ্যাট বৃদ্ধি হলে মধ্যেবিত্তসহ সাধারণ মানুষের গামছা, লুঙ্গিসহ পোশাকের দাম বৃদ্ধি পাবে যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।
নেতৃদ্বয় বলেন, ঋণনির্ভর এ বিশাল ঘাটতি বাজেটে জনগণের অর্থনৈতিক বৈষম্য খুব বেশি কমছে না। প্রায় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত এ বাজেটে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার বিশাল অঙ্কের ঘাটতি রয়েছে যা জিডিপির ৩.৬০ শতাংশ। এই ঘাটতি পূরণে দেশি-বিদেশি ঋণ ও সুদের বোঝা আরো বৃদ্ধি পাবে। পরিচালনা ব্যয় ও সুদ পরিশোধের মতো অনুন্নয়ন খাতেই ব্যয় হবে বাজেটের অধিকাংশ অর্থ। তবে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৫.৫০ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির গড় হার ৬.৫০ শতাংশ রাখতে পারলে তা হবে বাজেটের বড় চমক।
তারা আরও বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশের অর্থনীতি কয়েক বছর ধরে নানামুখী সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গত ফ্যাসীবাদী শাসনামলে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব, মুদ্রার বিনিময় ও সুদের হার ক্রমাগত বৃদ্ধি, সর্বক্ষেত্রে সুশাসন ও ন্যায়নীতির নির্বাসন এবং সর্বগ্রাসী লুটপাটের কারণে দেশের আর্থিক খাত ধ্বংস হয়ে গেছে। বাজেটে এ বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে টেনে তোলার আরো ব্যবস্থা থাকার দরকার ছিল। বিপর্যস্থ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, দুর্নীতির সকল পথ বন্ধ করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে। পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
মন্তব্য করুন