গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১০-১২ অক্টোবর দলের এই পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাজধানীর হাতিরপুলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দলের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এই তারিখ ঘোষণা করেন। জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গণসংহতি আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা এবং দলের সদস্য নবায়ন ও সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এ সময় আবুল হাসান রুবেল জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—৪ জুলাই: জুলাই যোদ্ধা এবং শহীদ পরিবার ও আহতদের সম্মিলন; ৫ জুলাই: গণসংহতি আন্দোলনের তরুণ জুলাই যোদ্ধাদের নতুন বাংলাদেশ ভাবনা নিয়ে মতবিনিময় ও বিশেষ জাতীয় বর্ধিত সভা; ১৬ জুলাই: শহীদ আবু সাঈদের স্মৃতিবিজড়িত রংপুর জেলায় জুলাই সমাবেশ; ২৫ জুলাই: ঢাকায় জুলাই গণসমাবেশ; ১ আগস্ট: শহীদ জুলফিকার শাকিলের স্মৃতিবিজড়িত ঢাকার মিরপুরে জুলাই সমাবেশ; ৪ আগস্ট: জুলাই-আগস্টের শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি। এ ছাড়া বিভিন্ন বন্ধুপ্রতিম গণসংগঠনগুলো মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করবে।
প্রশ্নোত্তর পর্বে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে আমরা গভীর পরিতাপ ও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, দেশে এক ধরনের মব তৈরি করে হামলা, অবমাননা, নির্যাতনের সংস্কৃতি চালু হচ্ছে। এটা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এর আগে সংখ্যায় কম এমন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ হয়েছে, মাজারে আক্রমণ হয়েছে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর আক্রমণ হয়েছে, বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর আক্রমণ হয়েছে। অভ্যুত্থানের ১০ মাস অতিবাহিত হলেও এসব ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর কোনো ভূমিকায় আমরা দেখতে পাইনি; বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের উপস্থিতি থাকলেও নিষ্ক্রিয় দেখা গেছে। আমরা এ রকম পরিস্থিতিতে সরকারের এবং আইনশৃঙ্খলা কাজে নিয়োজিত সব বাহিনীর কার্যকর ভূমিকা দেখতে চাই। শুধু বিবৃতি দিয়ে দায় সারলে চলবে না, অবশ্যই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ২০১৮ সালের নৈশ নির্বাচনের হোতা নুরুল হুদাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে জুতার বাড়ি দেওয়া বা জুতার মালা গলায় পরানোর ঘটনা আমরা দেখলাম। বাংলাদেশে '১৪, '১৮ ও '২৪ এর প্রহসনের নির্বাচনের পেছনে যারা ছিলেন, তাদের প্রত্যেকেরই এসব নির্বাচনের ও গণতন্ত্র ধ্বংসের দায় আছে এবং তাদের সবাইকে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। কিন্তু বিচারের আগেই তাদের মব সৃষ্টি করে হেনস্তাকরণের মাধ্যমে অপরাধীর বিমানবিকীকরণের যে উদাহরণ সৃষ্টি হচ্ছে, তা মোটেই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কোনো দৃষ্টান্ত নয়। অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা ন্যায়বিচার দেখতে চাই, বিচারের নামে কোনো প্রহসন কিংবা মব বিচার আর কোনোভাবেই চলতে না পারে। সেজন্য সরকারকে অবিলম্বে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ ছাড়া সাকি গতকাল (সোমবার) জাতীয় নাগরিক পার্টির অফিসের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি অবিলম্বে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে এ বিষয়ে দায়ীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে আহ্বান জানান।
জোনায়েদ সাকি বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত না হলে এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটার আরও সুযোগ তৈরি হবে।
তিনি সামগ্রিকভাবে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে যথাযথ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য মনির উদ্দিন পাপ্পু সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, দিপক কুমার রায়, কেন্দ্রীয় সদস্য আলিফ দেওয়ান, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক মনিরুল হুদা বাবন, জাতীয় পরিষদ সদস্য পপী রানী সরকার, তৌহিদুর রহমানসহ আঞ্চলিক নেতারা।
মন্তব্য করুন