চব্বিশের ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী নারীদের সম্মাননা ও সংবর্ধনা দিয়েছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকালে রাজধানীর বিজয়নগরে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার।
দলের নারীবিষয়ক সম্পাদক ফারাহ নাজ সাত্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী ও এবি পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি উপস্থিত ছিলেন।
এতে বক্তব্য রাখেন, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সানজিদা আক্তার, ডা. পারশা রহমান, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নুর নিরভানা বৃষ্টি, শহীদ নাঈমার মা মিসেস আইনুন নাহার, শহীদ সুমাইয়া আক্তারের মা আসমা বেগম, শহীদ শাহীনুর বেগমের মেয়ে খাদিজা বেগম ও শহীদ নাসিমা আক্তারের বোন কোহিনূর বেগম।
ডা. সানজিদা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাজারো শহীদ রক্ত দিল, আমরা রাতদিন এক করে আহত-নিহতদের চিকিৎসা করার চেষ্টা করলাম। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ কিংবা ক্যাজুয়ালিটি ইউনিট রক্তে ভেসে গেল। সব মিলিয়ে একটি স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদের হাত থেকে লোকজন মুক্তি পেল। আজ এক বছর পর আমরা কি পেলাম? যত পরিবর্তন বা সংস্কারের বক্তব্য আমরা শুনলাম, তা আজ কতদূর?’
গণঅভ্যুত্থানে নারীদের উজ্জ্বল ভুমিকার কথা উল্লেখ করে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ পতন আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা, আমাদের মায়েরা, বোনেরা কারফিউ ভঙ্গ করে মিছিল করেছে। আমি দীর্ঘ সময় ধরে শহীদদের পরিবারের অনুভূতি শুনছিলাম, ডাক্তার বোনদের বক্তব্য শুনছিলাম। এগুলো আমাদের শুনতে হবে, বুঝতে হবে, কীভাবে একটি স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছিল। দেশের মানুষ মুক্তির নেশায় কতটা ত্যাগ করেছিল।’
দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘আমি ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে থেকে পত্র-পত্রিকায় লিখেছি, টকশোতে কথা বলেছি। তখনই আমি বলেছিলাম, শেখ হাসিনা একটি ফ্র্যাঙ্কেস্টাইন শাসন চালু করতে চলেছে। এই যে শেখ হাসিনা একটি কর্তৃত্ববাদী শাসক থেকে ফ্যাসিবাদী শাসকে পরিণত হলো। এর জন্য আমরাও কম দায়ী নই। এ দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো, তথা কথিত বুদ্ধিজীবীরা সবকিছু দেখেও চুপ ছিল। এত হত্যা, গুম, খুনের পর তথাকথিত বন্ধু রাষ্ট্র হাসিনা ও তার দোসরদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। শুধু আশ্রয় দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, এখন তারা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্টের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।’
দিলারা চৌধুরী আরও বলেন, ‘যেই ফ্যাসিবাদীদের পতনে দেশের নারীরা জীবন দিল, প্রতিরোধ গড়ে তুলল, চিকিৎসা দিল। কিন্তু এখন আমার সেই নারী বোনেদের আর চোখে পড়ে না। মুক্তিযুদ্ধেও আমরা একই চিত্র দেখেছি, কিছু মানুষ যুদ্ধ না করেও সার্টিফিকেট নিয়েছে, সুযোগ-সুবিধা নিয়েছে। এখন এই গণঅভ্যুত্থানের পরও অনেক মানুষ ক্রেডিট নিতে ব্যস্ত, সরকারি নানা সুবিধা আদায়ে সচেষ্ট। কিন্তু আন্দোলনের সেই অগ্নিকন্যারা আমাদের মাঝ থেকে নীরবে সরে যাচ্ছে।’
সভাপতির বক্তব্যে আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে আমাদের ডাক্তার সানজিদা, পারশা যে ভূমিকা রেখেছেন, তা অনন্য। আমরা আন্দোলনের সময় শত শত মানুষকে শুধু হাসপাতালে যেতে দেখেছি, সঠিক চিকিৎসা দেওয়ার পরিবেশও তখন ছিল না। তৎকালীন স্বৈরাচার লাশ গণকবর দিয়েছে, আহত, নিহতের কোনো হদিস করা সম্ভব হয়নি।’
নাসরীন সুলতানা মিলি বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের এক বছর যেতে না যেতেই আমরা আন্দোলনে অংশ নেওয়া নারীদের ভুলে যাচ্ছি। সেই সময়ের অগ্নিকন্যারা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। তাহলে আমরা কি বুঝব, প্রয়োজনেই শুধু নারীদের গুরুত্ব।’
সংবর্ধনা শেষে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সকল নারীদের সম্মাননা প্রদান করেন ড. দিলারা চৌধুরীসহ উপস্থিত নেতারা।
মন্তব্য করুন