বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ২০২৫-২৬ সেশনের প্রথম কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (২৬ জুলাই) সকালে রাজধানীর মতিঝিলস্থ ঢাকা জেলা ক্রীড়া পরিষদ মিলনায়তনে এ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতির বক্তব্যে দলের আমির মামুনুল হক বলেন, ‘রাজনীতিকে আমরা পবিত্র দায়িত্ব হিসেবে দেখি। চাঁদাবাজি, রাহাজানি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত ইসলামি নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস চলতি সেশনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অতিক্রম করেছে। দেশব্যাপী সাংগঠনিক সম্প্রসারণ, প্রায় ৫০টি জেলায় গণসমাবেশ, ৪০টির অধিক জেলায় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং বায়তুল মাল বিভাগে স্থানীয় পর্যায়ের সক্রিয়তা আমাদের সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি অপরিহার্য শক্তিতে পরিণত হয়েছে। আমরা ইসলাম ও দেশের জন্য সর্বোচ্চ কল্যাণকর ভূমিকায় অবিচল রয়েছি। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে ২২৩টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। ইনশাআল্লাহ, বাকি আসনগুলোতেও খুব শিগগির ঘোষণা আসবে।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা রাখুন। প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, মাদক ও সামাজিক অনাচার প্রতিরোধে কাজ করুন।’
শূরা সদস্যদের উদ্দেশে তিনি অনুরোধ করেন, খোলামনে মতামত দিন, সংগঠনের সম্ভাবনা ও দুর্বলতা নির্ভয়ে উপস্থাপন করুন। আমাদের লক্ষ্য একটি আদর্শ ও গতিশীল ইসলামি রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলা।
দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ এবং যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিনের পরিচালনায় এ সময় বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সংগঠনের অভিভাবক পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ইসমাইল নূরপুরী, সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ প্রমুখ।
অধিবেশনে শূরার সদস্যরা আগামী জাতীয় নির্বাচন ও সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং কর্মপন্থা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরেন। কেন্দ্রীয় বিভিন্ন বিভাগ, জেলা ও মহানগর শাখা, প্রবাস শাখা এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর ষান্মাসিক প্রতিবেদনও অধিবেশনে উপস্থাপন ও পর্যালোচনা করা হয়।
শুক্রবারের (২৫ জুলাই) বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব গৃহীত হয়। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন। ২. আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলামের অবমাননার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ। ৩. আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার। ৪. ফিলিস্তিন ও ভারতের মুসলিম নিধন বন্ধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণ। ৫. কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা। ৬. পাঠ্যপুস্তকে বিদ্যমান শিরকি ও কুফরি বিষয়বস্তু বাতিল। ৭. সীমান্ত হত্যা বন্ধে সমতাভিত্তিক কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার। ৮. ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টন পদ্ধতি চালু। ৯. ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধে বিরোধী রাজনৈতিক ঐক্য সুদৃঢ়করণ। ১০. ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দ্রুত প্রকাশ ও চলমান সংস্কারে ইসলামি মূল্যবোধের প্রতিফলন। ১১. খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্ব মুসলিম জাতির প্রতি আহ্বান। ১২. জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদন বাতিল এবং ১৩. বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতদের প্রতি শোক ও সমবেদনা প্রকাশ।
এদিকে দলের সাংগঠনিক পদে রদবদল করা হয়েছে। নতুন করে সহ-প্রশিক্ষণ সম্পাদকের দায়িত্ব পরিবর্তন করে হাসান জুনাইদকে প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে। সহ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক হিসেবে নূর মুহাম্মদ আজীজকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এ ছাড়া মুফতি নূর হোসাইন নূরানী, মাওলানা সালাউদ্দিন, মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী, হোসাইন আহমদ, জাহিদুজ্জামানকে (সভাপতি, যুব মজলিস) কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন