কোনো কোনো রাজনৈতিক দল সঠিক সময় যেন নির্বাচন না হয়, সেই চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির প্রকাশনায় ‘মহাকালের মহানায়ক শহীদ জিয়াউর রহমান’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
৬৪০ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম ও আবদুল হাই শিকদার। হামিদুল ইসলামের প্রচ্ছদ করা গ্রন্থটির মূল্য রাখা হয়েছে দুই হাজার টাকা।
মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সহযোগিতা দিয়ে একটা জায়গায় আসার চেষ্টা করছি, যেন একটা নির্বাচন করা যায়। আমি কোনো দলকে দোষারোপ করতে চাই না… কোনো ব্যক্তিগত দোষারোপ করতে চাই না। কিন্তু হতাশার সঙ্গে লক্ষ্য করি, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন যেন পিছিয়ে যায়, নির্বাচন যেন সঠিক সময় না হয় তার চেষ্টা করছে। এটা ঠিক হচ্ছে না।’
মির্জা ফখরুল জাতীয় সংস্কার কমিশনকে অতি অল্প সময়ের কিছু সংস্কারের কাজ শেষ করা জন্য ধন্যবাদ জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান ২০২২ সালে যে ৩১ দফা দিয়েছিলেন তারই ধারাবাহিকতায় কিন্তু আমরা এই সংস্কারগুলো দিয়েছি। ম্যাডাম (বেগম খালেদা জিয়া) দিয়েছিলেন ২০১৬ সালে ভিশন-২০৩০। আর আমাদের নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দিয়েছিলেন ১৯ দফা কর্মসূচি। সব কিছু মিলিয়ে এসব সংস্কার।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির জন্ম তো সংস্কারের মধ্যে। সংস্কার দিয়েই একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থায় প্রেসিডেন্ট জিয়া নিয়ে এসেছিলেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফ্রিডম অফ প্রেস প্রেসিডেন্ট জিয়া দিয়েছিলেন। জনগণের মৌলিক স্বাধীনতার অধিকারগুলোর স্বাধীনতা প্রেসিডেন্ট জিয়া দিয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম অফ গভর্নমেন্ট থেকে পার্লামেন্টারি ফর্ম গভর্নমেন্টে নিয়ে এসেছিলেন। মেয়েদের ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা খরচে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। মেয়েদেরকে চাকরি দেওয়া, মহিলা অধিদপ্তর করা … সব তো বিএনপি ও ম্যাডামের করে দেওয়া। অথচ এমনভাবে কথা বলা হয় যেন বিএনপি একটা ভিলেন। কিছু কিছু লোক বলার চেষ্টা করেন আমি বিস্মিত হই। আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, বাংলাদেশে যা কিছু ভালো হয়েছে, সব বিএনপির হাত দিয়ে হয়েছে। জিয়াউর রহমানের হাত দিয়ে হয়েছে। খালেদা জিয়ার হাত দিয়ে হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়ার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল আওয়ামী লীগ। জিয়াউর রহমানের মাজার পর্যন্ত তুলে নিয়ে যাবে, তার নামগন্ধ থাকবে না— এমন সব চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস ধারণ করেছে। তাকে মুছে ফেলা যাবে না। কারণ সত্যিকার অর্থেই জিয়াউর রহমান ক্ষণজন্মা। আল্লাহ যাকে পাঠিয়েছেন মানুষের কল্যাণের জন্য তাকে কি এত সহজেই ছুড়ে ফেলা যায়? যায় না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারেক রহমান আমাদের নেতা যিনি আজকে নতুন করে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করবার জন্য কাজ করছেন। তিনি সেই একই ধারার (জিয়াউর রহমান-খালেদা জিয়া) নেতা। আমার এখনো মনে আছে যে, তিনি চীনে একবার গিয়েছিলাম ম্যাডামের সঙ্গে, আমরাও ছিলাম। ওই সময়ে প্রচণ্ড শীত ছিল। সেজন্য গ্রেট হলের ভেতরে ম্যাডামকে গার্ড অফ অনার দেয়ার অনুষ্ঠানটি হয়। ম্যাডাম যখন চীনের প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন। যখন তারেক রহমানের সামনে এসে বললেন, হি ইজ মাই সান (আমার ছেলে)। তখন চীনের প্রধানমন্ত্রী তার (তারেক রহমানের) হাতটা শক্ত করে ধরে ঝাঁকিয়ে বললেন, ‘কেরি অফ দি ফ্ল্যাগ, স্ট্যান্ড ফাদার অ্যান্ড মাদার।’ আজকে তারেক রহমান সাহেব সেই পতাকা তুলে ধরেছেন, যে পতাকা হচ্ছে স্বাধীনতার পতাকা, যে পতাকা হচ্ছে এই দেশের মানুষের অধিকারের পতাকা, গণতন্ত্রের পতাকা, উন্নয়নের পতাকা। ইনশাআল্লাহ আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে নিশ্চয়ই এই বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করব এবং গণতন্ত্রকে আরো উজ্জীবিত করব। অর্থনীতিকে গণতান্ত্রিকীকরণ করব।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও প্রকাশনা উপকমিটির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশররফ হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল হাই শিকদার, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর পাভেল, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, জাসাসের সাবেক সভাপতি রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী, কলামিস্ট সাখাওয়াত হোসেন সায়ান্থ, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত বক্তব্য রাখেন।
মন্তব্য করুন