ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের মেধা তালিকার প্রথম শিক্ষার্থীটিও এক যুগের অধিক সময় অপেক্ষায় রয়েছেন সেই শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফলের আশায়। তার মতো অন্যান্য মেধাবী চাকরিপ্রার্থীদের এখন চাওয়া নিয়োগ চাই না, চাই ফলাফল। এক যুগ পেরিয়ে গেলেও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল মেলেনি আজও।
নিয়োগ প্রার্থীদের দাবি, চাকরির নয়, মেধার কী মূল্যায়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটাই তাদের জানতে চাওয়া।
জানা যায়, ২০১৩ সালের ১০ জুলাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আইন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। পরে চাকরি প্রার্থীরা যথাযথ নিয়মে আবেদন করেন এবং কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র ইস্যু করেন। তাদের একজন মো. মনির হোসেন। আইন বিভাগের মেধা তালিকার প্রথম হওয়া এ শিক্ষার্থী ২০১৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর প্রভাষক নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডে একজন চাকরিপ্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। তখন বোর্ডের সুপারিশে ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২৯তম সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদনের জন্য এজেন্ডাভুক্ত হয়, কিন্তু অনিবার্য কারণবশত ওই তারিখে সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। পরে তৎকালীন সিন্ডিকেট সভায় নির্বাচিত প্রার্থীদেরকে চূড়ান্ত অনুমোদন করতে সক্ষম হননি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
তারপর এক যুগ পার হলেও আর আলোচিত পরীক্ষাটির ফলাফল আর আলোর মুখ দেখেনি। এখনো মনির হোসেনের মতো মেধাবীরা আশায় থাকেন ফলাফল প্রকাশ করবে বিশ্ববিদ্যালয় এবং মূল্যায়িত হবে মেধা।
এদিকে আইন বিভাগের প্রভাষক নিয়োগের ফলাফল নির্ধারিত সময়ে প্রকাশ না হওয়ায় বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়ায়। নিয়োগ প্রক্রিয়াকে বিলম্বতি করার জন্য আইন বিভাগের এক শিক্ষক একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন হাইকোর্ট বিভাগে। পরে তা হাইকোর্ট খারিজ করে দেন।
এ ছাড়া নির্বাচনী বোর্ড নিয়ে আরও একটি রিট করা হলে তাও খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
তবে আইনগত কোনো বাধা না থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ রেজাল্ট প্রকাশে বিলম্ব করায়, চাকরি প্রার্থী মো. মনির হোসেন হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দায়ের করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত রেজাল্ট প্রকাশের জন্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা ও আদেশ প্রদান করেন।
এ বিষয়ে সেই প্রভাষক নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডে একজন চাকরি প্রার্থী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শের-ই-আলম বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সে সময় দারুণ এক প্রস্তুতি ছিল প্রভাষক নিয়োগ নির্বাচনী পরীক্ষার জন্য। কিন্তু এরপর যা হলো তা যেন আর কারও ক্ষেত্রে না ঘটে। আজ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের সেই নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করতে পারল না।
বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরও কেন কর্তৃপক্ষ ফল প্রকাশ করছে না এটা আমার জানা নেই। আমার এখন একটাই দাবি, নিয়োগ দেওয়া দরকার নেই শুধু ফলাফল প্রকাশ করুক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
চাকরী প্রার্থী ও আদালত অবমাননা মামলার বাদী মো. মনির হোসেন বলেন, নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের ফলাফল সম্পর্কে জানা একজন প্রার্থীর আইনগত অধিকার। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্বাচনী বোর্ডের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করাও আইনত দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই এ ফলাফল প্রকাশে ১৫ বছর সময় পার হওয়া কর্তব্যের গুরুতর অবহেলার শামিল, বেআইনী ও প্রচলিত আইনের পরিপন্থি।
তিনি বলেন, আমার চাকরির দরকার নেই আমি শুধু জানতে চাই আইন বিভাগের প্রভাষক নির্বাচনী বোর্ডের ফলাফল। সরকারি নিবন্ধন ফি জমা দিয়েই পরীক্ষা দিয়েছিলাম। এই ফলাফল জানাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাধ্য। তাই বাধ্য হয়েই মামলা করেছি। মামলার আগে বর্তমান যিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর রয়েছেন, ওনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি কিন্তু তিনি গুরুত্ব দেননি। আদালতের নির্দেশনার কথার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সেলে ও রেজিস্ট্রারকে জানিয়েছি। কিন্তু কেউই আমাদের এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়নি। তাই বাধ্য হয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আদালত অবমননার মামলা করেছি।
বিষয়টি নিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নাকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত আছি। যে কোনো পরীক্ষার ফলাফল পরীক্ষার্থীদের জানার অধিকার রয়েছে। ২২৯তম সিন্ডিকেট সভায় নিয়োগের বিষয়টি অনুমোদনের জন্য এজেন্ডাভুক্ত হয়। কিন্তু আমার আগের যিনি ভিসি ছিলেন তার সিন্ডিকেট সভায় এ অনুমোদনের বিষয়টি বাতিল হয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পরে নানা রকম প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিগত সরকারের সময় যিনি ভিসি ছিলেন তার নানা রকম অনিয়ম দুর্নীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন বিভাগে রাজনৈতিক কারণে শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ায় শিক্ষক সংকটসহ নানা প্রতিকূলতা মুখোমুখি হচ্ছে।
এ সময় তিনি আরও বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার একজন প্রার্থী বিষয়টি নিয়ে আদালত অবমাননার মামলা করেছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য আমি তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। তবে যেহেতু মামলা হয়েছে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অবশ্যই এ মামলার জবাব দেব। তবে বিষয়টি সমাধান হওয়া উচিত বলে তিনি জানান।
মন্তব্য করুন