লিওনেল মেসির ইন্টার মায়ামি যেন ধীরে ধীরে নিজেদের পথ হারাচ্ছে। গত মৌসুমে উড়তে থাকা দলটি মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) একের পর এক ম্যাচ হেরেই চলছে যার সর্বশেষটি এলো আবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অরল্যান্ডো সিটির কাছে ৩-০ গোলের হারে।
চেজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে ৩-০ গোলে হেরে যায় হ্যাভিয়ের মাশ্চেরানোর দল, যা তাদের ইস্টার্ন কনফারেন্সে ষষ্ঠ স্থানে নামিয়ে দিয়েছে। যদিও এখনো প্লে-অফের অঞ্চলে রয়েছে, তবে এরকম বাজে পরাজয়ে ঝুলে আছে টিকে থাকার হিসেব।
খেলার শুরুটা ছিল দুই দলের সমানে-সমানে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণ দিয়ে। তবে প্রথম গোলটা আসে সফরকারী অরল্যান্ডো সিটির দারুণ গোছানো এক আক্রমণ থেকে। গোলকিপার পেদ্রো গায়েসে থেকে শুরু করে একের পর এক পাসের সমন্বয়ে বল পৌঁছে যায় লুইস মুরিয়েলের কাছে, যিনি ঠান্ডা মাথায় বল জড়ান ইন্টার মায়ামির জালে।
হাফটাইমেই পিছিয়ে পড়ে ১-০ গোলে হেরনসরা। কিন্তু ম্যাচের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা আসে দ্বিতীয়ার্ধে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই একটি কর্নার থেকে বিপজ্জনক কাউন্টার অ্যাটাক করে অরল্যান্ডো। মার্টিন ওজেদা একদম একা গোলমুখে পৌঁছে গেলেও শটটি বাইরে মেরে গোল মিস করেন। তবে এরপর আর অপেক্ষা করতে হয়নি।
মার্কো পাসালিচ দ্বিতীয় গোলটি করেন—তাও গোলরক্ষক অস্কার উস্তারির এক বিরল ভুল থেকে। বল তার পায়ের ফাঁক গলে জালে জড়ালে স্টেডিয়ামে নেমে আসে নীরবতা।
মেসির দল তখন আর ফিরে আসার মতো মোমেন্টামই খুঁজে পাচ্ছিল না।
ম্যাচের অন্তিম লগ্নে একবার জ্বলে উঠেছিলেন লিওনেল মেসি। বামপাশ থেকে দুর্দান্ত এক বাঁ পায়ের শটে চেষ্টা করেছিলেন ব্যবধান কমাতে। কিন্তু ‘পুলপো’ গায়েসে নামে পরিচিত গোলরক্ষক পুরো শরীর দিয়ে সেই বল ঠেকিয়ে দেন।
তাতে হেরে যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা হয়ে দাঁড়ায়।
শেষদিকে রামিরো এনরিক একবার পোস্ট কাঁপিয়ে ফেরত আসা শটের পরও অরল্যান্ডো থেমে থাকেনি। শেষ মুহূর্তে ডাগুর ডান থোরহ্যালসনের ডান পায়ের জোরালো শটে ম্যাচের তৃতীয় ও শেষ গোল হয়। ইন্টার মায়ামির জন্য এ যেন সত্যিই এক দুঃস্বপ্নের রাত।
এই হারে ১৪ ম্যাচে মায়ামির ৬ জয়, ২ ড্র আর ৬ হার। কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো—শেষ ৭ ম্যাচে তারা হেরেছে ৫টিতে, আর এই সময়ে ২০টি গোল হজম করেছে। প্রতি ম্যাচে গড়ে প্রায় ৩টি গোল খাওয়ার এই পরিসংখ্যান বলছে, রক্ষণভাগে বড়সড় পরিবর্তন ছাড়া ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
দলীয় ছন্দহীনতা, পরিকল্পনায় ঘাটতি এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রক্ষণভাগের চূড়ান্ত দুর্বলতা—সবই হ্যাভিয়ের মাশ্চেরানোর কোচিং ক্যারিয়ারে বড় প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। তার অধীনে দলের শৃঙ্খলা ও কাঠামোর অভাব চোখে পড়ছে স্পষ্টভাবেই।
ইন্টার মায়ামির সামনে সময় খুব বেশি নেই। প্লে-অফ নিশ্চিত করতে হলে এখন থেকে প্রতিটি ম্যাচ ‘ফাইনাল’ মনে করে খেলতে হবে মেসিদের। না হলে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে শুরু করা এই মৌসুম শেষ হতে পারে আরও বড় হতাশায়।
মন্তব্য করুন